অস্ট্রেলিয়ার কয়েক অঞ্চলে ভয়াবহ খরা

খরা পরিস্থিতিতে গৃহপালিত পশুদের ঠিকভাবে খাওয়াতে পারছেন না কৃষকেরা। ছবি: রয়টার্স
খরা পরিস্থিতিতে গৃহপালিত পশুদের ঠিকভাবে খাওয়াতে পারছেন না কৃষকেরা। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে জনবহুল রাজ্য নিউ সাউথ ওয়েলসে স্মরণকালের ভয়াবহ খরা চলছে। সরকারিভাবে পুরো রাজ্যকে ‘১০০ ভাগ খরা’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে।

আজ বুধবার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা যায়, অস্ট্রেলিয়ার মোট কৃষির ২৫ শতাংশ নিউ সাউথ ওয়েলসে উৎপাদন হয়।
খরার কারণে কৃষিকাজ মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে। ভয়াবহ পানি-সংকটে কৃষকেরা জমি চাষ করতে পারছেন না। গৃহপালিত পশুদের খাওয়াতে পারছেন না। অনেকে তাঁদের পশু বিক্রি করে দিচ্ছেন।

খরা পরিস্থিতিতে রাজ্য ও ফেডারেল সরকার ৪৩০ মিলিয়ন ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৬৩১ কোটি ৬৯ লাখ টাকা) জরুরি তহবিল সৃষ্টি করেছে। রাজ্যের ডিপার্টমেন্ট অব প্রাইমারি ইন্ডাস্ট্রির মন্ত্রী নিয়াল ব্লেয়ার বলেছেন, ‘রাজ্যে এখন এমন একটি মানুষ নেই, যিনি কৃষক ও আঞ্চলিক সম্প্রদায়গুলোর জন্য বৃষ্টি আশা করছেন না।’ এই বিভাগটি নিউ সাউথ ওয়েলসের কৃষি, মৎস্য, জলজ পালন, বন ও জীবনিরাপত্তার বিষয়গুলো তদারক করে থাকে।

দেশটির আবহাওয়া ব্যুরোর তথ্য অনুসারে, দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া দ্বিতীয় রেকর্ড পরিমাণ শুষ্ক শরৎকালের অভিজ্ঞতা পাচ্ছে। গড়ে ৫৭ মিলিমিটারের নিচে বৃষ্টি হয়েছে সেখানে। জুলাই মাসে নিউ সাউথ ওয়েলসে ১০ মিলিমিটারেরও কম বৃষ্টি হয়েছে। বুধবার রাজ্যটির ২৩ শতাংশ অঞ্চলকে ‘চরম খরা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাকি স্থানগুলোর কিছু খরা অথবা খরায় আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

তবে অস্ট্রেলিয়ার এই খরা শুধু নিউ সাউথ ওয়েলসেই নয়, পাশের কুইন্সল্যান্ডের অর্ধেকের বেশি এলাকায় খরা চলছে। এ ছাড়া ভিক্টোরিয়ার কিছু অংশ এবং দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়াতেও খরা দেখা দিয়েছে।
গত রোববার অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল দেশটি ‘খরার ভূমি’তে পরিণত হয়েছে বলে সতর্ক করেছেন। তিনি বলেছেন, কোনো কোনো কৃষক তাঁদের পশুদের খাওয়ানোর জন্য প্রতি ট্রাক খর ১০ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬ লাখ ২৬ হাজার টাকা) দিয়ে কিনে নিচ্ছেন।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কুইন্সল্যান্ডের অ্যাশলে গ্যাম্বল নামে এক কৃষক হতাশা প্রকাশ করে স্থানীয় এক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রতিদিন মনে হয় যেন কারাগারে রয়েছি। এরপরও এখানেই থাকতে হবে বলে থাকছি। এটা খুব হতাশাজনক।’

দেশটিতে কৃষকেরা বছরে ১৬ হাজার অস্ট্রেলিয়ান ডলার সহায়তা পান সরকারের কাছ থেকে। এই সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী কৃষকদের জন্য অতিরিক্ত আরও ১২ হাজার ডলার সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খরা এখন ‘অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ুর অংশ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় কৃষকদের সাহায্য প্রয়োজন।

ইতিমধ্যে ২০ হাজার মানুষ এই সহায়তা পেতে আবেদন করেছেন।
তবে অনেকে এই অর্থ সহায়তাকে ‘অপ্রতুল’ ও ‘অনেক দেরি হয়ে গেছে’ বলে সমালোচনা করছেন।

তবে নিউ সাউথ ওয়েলসে এবার স্মরণকালের ভয়াবহ খরা দেখা দিলেও অস্ট্রেলিয়ায় এটা নতুন কিছু নয়। অস্ট্রেলিয়ায় ১৯৯৭ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত সময়কে সবচেয়ে খরা আক্রান্ত বলা হয়। ওই সময় অস্ট্রেলিয়ার প্রায় ৫০ শতাংশ কৃষি জমি খরায় নষ্ট হয়ে যায়।