বিশ্বের শহরগুলোর মধ্যে দ্রুত ডুবছে জাকার্তা

জাকার্তার মধ্যাঞ্চলের জালান থামরিন পরিদর্শনের পর দেখা গেছে, বেশির ভাগ ভবনে অনুমতি ছাড়া ভূগর্ভস্থ পানি পাম্প করে ব্যবহার করা হচ্ছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
জাকার্তার মধ্যাঞ্চলের জালান থামরিন পরিদর্শনের পর দেখা গেছে, বেশির ভাগ ভবনে অনুমতি ছাড়া ভূগর্ভস্থ পানি পাম্প করে ব্যবহার করা হচ্ছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় এক কোটি মানুষের বসবাস। তবে এটাও সত্যি, বিশ্বে যেসব শহর খুব দ্রুত ডুবে যাচ্ছে, জাকার্তা সেগুলোর মধ্যে একটি। বিবিসি অনলাইন বলছে, নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে এই মেগাসিটির অনেক অংশ ২০৫০ সালের মধ্যে পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। গবেষকেরা এমন ভয়ংকর তথ্য দিয়েছেন।

জাকার্তার অবস্থান জলাভূমিতে। জাভা সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ে এই ভূমিতে। চারপাশে রয়েছে ১৩টি নদী। বিশেষজ্ঞরা বলেন, এসব কারণেই জাকার্তায় প্রায়ই বন্যা হয়। পরিস্থিতি ধীরে ধীরে খারাপের দিকে যাচ্ছে। পরিণামে শুধু বন্যাই নয়, এই ভূমি হারিয়ে যেতেও পারে।

জাকার্তার বেশির ভাগ বাসিন্দা ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে। ছবি: এএফপি
জাকার্তার বেশির ভাগ বাসিন্দা ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করে। ছবি: এএফপি

ব্যানডাং ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গবেষক হ্যারি অ্যান্ড্রেস ২০ বছর ধরে জাকার্তার ভূমি নিয়ে কাজ করছেন। তাঁর মতে, এই অবস্থা চলতে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে উত্তর জাকার্তার ৯৫ শতাংশ পানিতে ডুবে যাবে। হ্যারির মতে, গত ১০ বছরে উত্তর জাকার্তা ২ দশমিক ৫ মিটার ডুবে গেছে। বছরে জাকার্তার ২৫ সেন্টিমিটার অংশ ডুবছে।

বছরে গড়ে ১ থেকে ১৫ সেন্টিমিটার ডুবছে জাকার্তার। শহরটির প্রায় অর্ধেক এখন সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে। উত্তর জাকার্তায় এর অবশ্যম্ভাবী প্রভাব পড়েছে।

মুয়ারা বারু এলাকায় মাছের প্রতিষ্ঠানের একটি ভবনের নিচতলা পানিতে তলিয়ে গেছে।

ফরচুনা বলেন, বৃষ্টির সময় বন্যার পানি তাঁর সুইমিং পুলে ঢুকে পড়ে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
ফরচুনা বলেন, বৃষ্টির সময় বন্যার পানি তাঁর সুইমিং পুলে ঢুকে পড়ে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

মুয়ারা বারু এলাকার বাসিন্দা রিদওয়ান প্রায়ই মাছের বাজারে যান। তিনি বলেন, পথঘাটে পানি এসে ঢেউয়ের মতো দোলা দেয়। লোকজন যেকোনো সময় পড়ে যেতে পারে। প্রতিবছর মাছের বাজারের বেশ কিছু অংশ পানিতে তলিয়ে যায় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ইন্দোনেশিয়ার ব্যস্ততম সমুদ্রবন্দর তানজাং প্রিয়ক। এখানে ১৮ লাখ মানুষের বাস। সেখানে থাকেন ফরচুনা সোফিয়া। তাঁর বাড়িটির দেয়াল ও পিলারে প্রতি ছয় মাসে ফাটল ধরে বলে জানান তিনি। এখনই দৃশ্যমান না হলেও বাড়িটি ধীরে ধীরে পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে বলে জানান।

চার বছর ধরে এখানে বসবাস করেন ফরচুনা। প্রায়ই সাগরের পানি তাঁর সুইমিং পুলে ঢুকে পড়ে। অবস্থা এমন হয় যে আসবাবপত্র সরিয়ে নিতে হয়।

মাহারদি নামের এক জেলে জানান, প্রতিবছর জোয়ার-ভাটা ৫ সেন্টিমিটার উঁচু হচ্ছে।

মাছের বাজারে ঢুকে পড়েছে পানি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
মাছের বাজারে ঢুকে পড়েছে পানি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

উত্তর জাকার্তার আকাশচুম্বী অট্টালিকাগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। ইন্দোনেশিয়া অ্যাসোসিয়েশন অব হাউজিং ডেভেলপমেন্টের অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের প্রধান এ ডি জানেফো আর উন্নয়ন না করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

জাকার্তার অন্য অংশগুলোও ডুবে যাচ্ছে। তবে কিছুটা ধীরগতিতে। পশ্চিম জাকার্তায় অনেক অংশ বছরে ১৫ সেন্টিমিটারের বেশি হারে ডুবে যাচ্ছে। পূর্বাঞ্চলে বছরে ১০ সেন্টিমিটার হারে ডুবছে। জাকার্তার মধ্যাঞ্চলে ২ সেন্টিমিটার ও দক্ষিণ জাকার্তায় ১ সেন্টিমিটার ডুবেছে।

বৃষ্টির সময় পানি থেকে বাঁচাতে এই দেয়াল বানানো হয়েছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
বৃষ্টির সময় পানি থেকে বাঁচাতে এই দেয়াল বানানো হয়েছে। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

হ্যারি অ্যান্ড্রেস বলেন, ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করার অধিকার সবার রয়েছে। তবে অনেকে যা অনুমতি আছে, তার চেয়ে বেশি পানি ব্যবহার করেন। পানি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জাকার্তার মাত্র ৪০ শতাংশ পানির চাহিদা মেটাতে পারে।

গত মে মাসে জাকার্তা শহরের কেন্দ্রের ৮০টি আকাশচুম্বী ভবন পরিদর্শন করা হয়। দেখা গেছে, ৫৬টি ভবনের নিজস্ব ভূগর্ভস্থ পাম্প রয়েছে। ৩৩টিই অবৈধভাবে পানি ব্যবহার করে।

জাকার্তার গভর্নর অ্যানিস বাসওয়াদান প্রত্যেকের লাইসেন্স থাকা জরুরি বলে মন্তব্য করেন।