আগের বিয়ের আপিল চলাকালে আবার বিয়ে বৈধ

ভারতে হিন্দু আইনে বিবাহবিচ্ছেদের বিরুদ্ধে আদালতে আপিল অপেক্ষমাণ থাকাকালে দ্বিতীয় বিয়ে জায়েজ বলে মনে করেছেন দেশটির সর্বোচ্চ আদালত।

হিন্দু আইন অনুযায়ী বিবাহিত কোনো দম্পতির একজন তাঁর সঙ্গীর কাছ থেকে বিচ্ছেদ চাইলে অন্যজন এর বিরুদ্ধে আপিল করতে পারেন। আপিল খারিজ হয়ে গেলে পুনরায় বিয়ে করতে পারবেন। এবং এটি বৈধ হবে। কিন্তু দেশটির সর্বোচ্চ আদালত বলেছেন আপিল চলাকালে দ্বিতীয় বিয়ে অবৈধ হবে না।

বিচারপতি এস এ ববদে ও বিচারপতি এল নগেশ্বরা রাও বলেন, বিবাহবিচ্ছেদের বিরুদ্ধে করা আপিলের রায় না হওয়া পর্যন্ত প্রথম বিয়ে বহাল রয়েছে, এমনটা নয়। তাই এই সময়ের মধ্যে আবার বিয়ে অবৈধ হবে না।

আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, বিবাহবিচ্ছেদের ডিক্রির দ্বারা সংসার ভেঙে যায় অথবা সেখানে যদি ডিক্রির বিরুদ্ধে আপিলের কোনো অধিকার না থাকে অথবা যদি আপিলের সুযোগ থেকেও থাকে, কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপিল না করে অথবা দায়ের করা আপিল খারিজ হয়ে যায়, তাহলে আবার বিয়ে করা আইনসম্মত। আর ৫(১) ধারা অনুযায়ী বিধবা ও বিপত্নীক দুজন হিন্দু নারী-পুরুষ বিয়ে করতে চান তাহলে তা করা যাবে।

দিল্লি হাইকোর্ট এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বলেছিলেন, বিবাহবিচ্ছেদের বিরুদ্ধে আপিল বহাল থাকা অবস্থায় বিয়ে করলে তা আইনের ৫(১) ধারার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হবে। এবং এ বিয়ে অকার্যকর হবে। ওই ব্যক্তির দ্বিতীয় স্ত্রীর করা এক আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট এ আদেশ দিয়েছিলেন। ওই ব্যক্তি হাইকোর্টের এ রায় চ্যালেঞ্জ করে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন। সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায়কে পাশ কাটিয়ে বলেন, এই দম্পতির বিয়ে বৈধ।

এই ব্যক্তির প্রথম স্ত্রী তাঁর সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক ছিন্ন করেন। কিন্তু তিনি এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। আপিল চলাকালে তিনি তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছান এবং বিবাহবিচ্ছেদ গ্রহণ করতে ও আপিল আবেদন তুলে নিতে আদালতে আবেদন করেন। এসব আবেদনের বিষয়ে হাইকোর্ট রায় দেওয়ার আগের দিন রাতেই এই ব্যক্তি দ্বিতীয় বিয়ে করে বসেন। কিন্তু তাঁর নতুন সংসার সুখের হয়নি। ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকত। এরপর তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী এই বিয়ের বৈধতা নিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন। তিনি আবেদনে বলেন, আগের বিবাহবিচ্ছেদের আপিল শুনানি চলাকালে এ বিয়ে হয়েছে, তাই এর বৈধতা নেই। পারিবারিক আদালত তাঁর এই আবেদন খারিজ করে দেন। কিন্তু হাইকোর্ট তাঁর পক্ষে রায় দেন, বলেন তাঁর এ বিয়ে অকার্যকর।

কিন্তু সর্বোচ্চ আদালত দুই পক্ষের শুনানি শেষে বলেন, আইনের ১৫ নম্বর ধারা লঙ্ঘন মানে এই না যে বিয়ে অকার্যকর।