ট্রাম্পের পক্ষে করা অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে ছবি এডিটের ঘটনা প্রকাশ

বাঁয়ের ছবিটি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাগত অনুষ্ঠানের। আর ডানের ছবিটি ২০০৯ সালে, বারাক ওবামার স্বাগত অনুষ্ঠানের। দুটো ছবিই রয়টার্সের তোলা। সরকারি ফাইলে ট্রাম্পের ছবি থেকে খালি জায়গাগুলো ক্রপ করে বাদ দিয়ে সম্পাদনা করা হয়।
বাঁয়ের ছবিটি প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাগত অনুষ্ঠানের। আর ডানের ছবিটি ২০০৯ সালে, বারাক ওবামার স্বাগত অনুষ্ঠানের। দুটো ছবিই রয়টার্সের তোলা। সরকারি ফাইলে ট্রাম্পের ছবি থেকে খালি জায়গাগুলো ক্রপ করে বাদ দিয়ে সম্পাদনা করা হয়।

নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বাগত অনুষ্ঠানে লোকসমাগম বেশি দেখানোর জন্য ছবি সম্পাদনা করা হয়েছিল। সরকারি সেসব ছবি সম্পাদনার কথা স্বীকার করেছেন সরকারি আলোকচিত্রী। ২০০৯ সালে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বারাক ওবামার অনুষ্ঠানের চেয়ে লোকসমাগম অনেক কম হওয়ার দৃশ্য ছবিতে ফুটে ওঠায় ক্ষুব্ধ হন ট্রাম্প। তাঁর হস্তক্ষেপে ছবিগুলো সম্পাদনা করতে হয়। ছবির যে অংশ জনশূন্য ছিল, তা ‘ক্রপ’ করে ছবি থেকে বাদ দেওয়া হয়।

ট্রাম্পের পক্ষে কোনো এক ব্যক্তির করা অভিযোগ তদন্ত করতে গিয়ে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে দেশটির মহাপরিদর্শকের কার্যালয়ের প্রতিবেদনে।

যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। তথ্য অধিকার আইনের আওতায় দেশটির স্বরাষ্ট্র বিভাগের মহাপরিদর্শকের কার্যালয় থেকে এ-সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনটি পায় দ্য গার্ডিয়ান। গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, নতুনভাবে প্রচারিত তথ্যে দেখা যায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অনুষ্ঠানে ফাঁকা জায়গাগুলো ক্রপ করে বাদ দেওয়া হয়েছে। ওপর থেকে একই রকমভাবে তোলা ছবিতে দেখা যায়, বারাক ওবামার অনুষ্ঠানে লোকসমাগমে শেষ জায়গাটুকু পর্যন্ত পূর্ণ হয়েছে। একই রকমভাবে তোলা ট্রাম্পের অনুষ্ঠানের ছবিতে দেখা যায়, শেষের বড় অংশজুড়ে লোকসমাগম নেই, ফাঁকা রয়েছে সেই স্থান। ছবিতে বারাক ওবামার চেয়ে তাঁর অনুষ্ঠানে লোকসমাগম কম দেখা যাওয়ার চিত্র ফুটে ওঠায় ক্ষুব্ধ হন ট্রাম্প। তাঁর অনুরোধে পরে সেই ফাঁকা স্থান সম্পাদনা করে ওই সময়ের ছবির নতুন সেট প্রকাশ করা হয়। সরকারি ফাইলে নতুন এই ছবিগুলো রাখা হয়েছে।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মাধ্যমে ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হওয়ার ওপর প্রথম স্ব-আরোপিত সংকট তৈরি করা হয়। অথচ ওই সময় হোয়াইট হাউস মিথ্যা দাবি করেছিল যে ট্রাম্পের অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশি লোক এসেছিল। রেকর্ড থেকে জানা যায়, গত বছরের ২১ জানুয়ারি সকালে ট্রাম্প ও ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিসের (এনপিএস) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মাইকেল রেনল্ডসের ফোনে কথা হয়। হোয়াইট হাউসের তথ্যসচিব সিন স্পাইসার এনপিএসের কর্মকর্তাদের ওই দিন বারবার ফোন করেন ছবি পরিবর্তন করে ‘তোষামোদ’ মার্কা ছবি বানানোর জন্য।

তবে রেকর্ড থেকে এটা স্পষ্ট হয়নি কোন ছবিগুলো সম্পাদনা করা হয়েছে এবং সেগুলো কোথায় প্রকাশ করা হয়েছে। দেশটির স্বরাষ্ট্র বিভাগের মহাপরিদর্শকের কার্যালয় থেকে প্রকাশিত চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এই বিষয়ে উল্লেখ নেই। গত বছর জুনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এতে এনপিএসের একজন নারী কর্মকর্তার নাম উল্লেখ না করে বলা হয়, তদন্ত কর্মকর্তাদের তিনি বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলার পর রেনল্ডস তাঁকে ডেকে নেন এবং বলেন, ট্রাম্প অনুষ্ঠানের ছবি দেখতে চেয়েছেন। ওই কর্মকর্তা জানান, তিনি ‘বুঝতে’ পারেন, ট্রাম্প অনুরোধ করেছেন, ছবিগুলো ক্রপ করে লোকসমাগম হয়নি—এমন ফাঁকা জায়গা বাদ দিতে হবে। কিন্তু ঠিক এ কাজই করতে হবে, সেটা রেনল্ডস সরাসরি বলেননি। এরপর তিনি এনপিএসের এক আলোকচিত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করে অনুষ্ঠানের আরও ছবি চান।

এনপিএসের ওই আলোকচিত্রী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে জানান, তাঁর সঙ্গে একজন কর্মকর্তা যোগাযোগ করেন। ওই কর্মকর্তা এমন কিছু ছবি চান, যেগুলোয় অনুষ্ঠানে লোকসমাগম দেখা যাচ্ছে। তিনি ২৫টি ছবির একটি ফাইল তৈরি করেন। তাঁকে অফিসে ফিরে যেতে বলা হয় এবং ছবিগুলো ‘কিছুটা সম্পাদনা’ করে আবার জমা দিতে বলা হয়। ওই আলোকচিত্রী বলেন, তিনি ছবিগুলো যে জায়গা পর্যন্ত জনসমাগম ছিল, সে পর্যন্ত রেখে ওপর-নিচে সামঞ্জস্য রেখে ক্রপ করেন। তিনি এমনভাবে ছবিটা ক্রপ করেন, যাতে মনে হয়, পেছনে আরও অনেক লোক রয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তারা জানান, ওই আলোকচিত্রী জানিয়েছেন, অফিস যেভাবে চেয়েছিল, সেভাবেই তিনি ক্রপ করেছেন। কিন্তু তাঁকে নির্দিষ্ট করে বলা হয়নি যে ছবিতে লোক বেশি দেখাতে হবে।

হোয়াইট হাউসের তথ্যসচিব সিন স্পাইসার গত বছরের ২১ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে টেলিভিশনের এই ছবি দেখিয়ে জানান, ট্রাম্পের স্বাগত অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক জনসমাগম হয়েছে। ছবি: রয়টার্স
হোয়াইট হাউসের তথ্যসচিব সিন স্পাইসার গত বছরের ২১ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলনে টেলিভিশনের এই ছবি দেখিয়ে জানান, ট্রাম্পের স্বাগত অনুষ্ঠানে সবচেয়ে বেশিসংখ্যক জনসমাগম হয়েছে। ছবি: রয়টার্স

মহাপরিদর্শকের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, আলোকচিত্রী তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে বলেছেন, তিনি তাঁর পেশাদারি বিবেচনা থেকে ছবিগুলো নির্বাচন করেন এবং তিনি ন্যাশনালে মলের যতটুকু জায়গা পর্যন্ত লোক ছিল, ততটুকু জায়গার দিকে মনোযোগ দেন।

এ ব্যাপারে মহাপরিদর্শকের মুখপাত্র ন্যান্সি ডিপাওলোর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ক্রপিংয়ের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। কারণ, আলোকচিত্রী তদন্ত কর্মকর্তাদের বলেছেন, এটা তাঁর ‘মানসম্মত শৈল্পিক চর্চা’।

নতুন প্রকাশিত তথ্য বলা হয়েছে, তথ্যসচিব স্পাইসার সুবিধাজনক এই ছবি পাওয়ার বিষয়টিতে জড়িত ছিলেন। ট্রাম্প ফোনে রেনল্ডসের সঙ্গে কথা বলার পরপরই তাঁকে স্পাইসার ফোন দেন। বেলা তিনটার দিকে সম্পাদিত নতুন ছবির সেট হোয়াইট হাউসে পাঠানো হয়।

এরপর বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে স্পাইসার হোয়াইট হাউসে ‘কুখ্যাত’ সংবাদ সম্মেলনে মিথ্যা দাবি করেন যে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের স্বাগত অনুষ্ঠানে এটাই সবচেয়ে বড় জনসমাগম। এর আগে এই অনুষ্ঠানে এতসংখ্যক লোক সমবেত হয়নি।

তবে তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়ে গার্ডিয়ান তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।

এনপিএসের কর্মকর্তারা ট্রাম্পকে খাটো করার চেষ্টা করেছেন এবং রেনল্ডসের সঙ্গে ট্রাম্পের কথোপকথন ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় ফাঁস করে দিয়েছেন—কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে এমন অভিযোগ পেয়ে গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ঘটনাটি তদন্তে নামে মহাপরিদর্শকের কার্যালয়। এ নিয়ে সংবাদও হয়েছে। কিন্তু এ অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি তদন্তে।

গত বছরের জুনে তথ্য অধিকার আইনে অভিযোগকারীর পরিচয় জানতে চায় দ্য গার্ডিয়ান। তবে তদন্ত প্রতিবেদনে সেই অভিযোগের বিষয়টির কোনো উল্লেখ নেই।