নতুন চার্লি চ্যাপলিন

কাবুলে অভিনয় দেখাচ্ছেন করিম আসির
কাবুলে অভিনয় দেখাচ্ছেন করিম আসির

যুদ্ধে বিভীষিকাময় জীবন। আত্মঘাতী হামলা, বোমা বিস্ফোরণ, অস্ত্রের ঝনঝনানি আর রক্তাক্ত মানুষের আর্তনাদ যেন নিত্যদিনের ঘটনা। আফগানিস্তানের পরিস্থিতি বর্তমানে এমনই। সেই অবস্থা থেকে মানুষকে একটু আনন্দ দিতে, হাসি-খুশির মধ্যে রাখতে হাজির হয়েছেন নতুন চার্লি চ্যাপলিন। ১৯৭৭ সালে মারা যাওয়া প্রখ্যাত ব্রিটিশ কৌতুক অভিনেতা স্যার চার্লি স্পেনসার চ্যাপলিনের মতোই জরাগ্রস্ত মানুষকে অনাবিল আনন্দ দিয়ে যাচ্ছেন করিম আসির নামের এক যুবক। এ জন্য তিনি পরিচিতিও পেয়েছেন আফগান চার্লি চ্যাপলিন হিসেবে।

চার্লি চ্যাপলিনের মতো পোশাক পরেন আসির। তিনি মূকাভিনয় ও অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে আফগানিস্তানের হাজারো জনগণকে আনন্দ দিয়ে যাচ্ছেন। রাজধানী কাবুল জুড়েই এসব অনুষ্ঠান করে থাকেন তিনি।

অন্য অনেক পেশার পরিবর্তে কেন এই পেশায় আসা—এমন প্রশ্নে আসির বলেন, তিনি আত্মঘাতী হামলা ও বিস্ফোরণ ঘটতে দেখেছেন; ইসলামপন্থী জঙ্গিগোষ্ঠী থেকে পেয়েছেন হুমকি। এরপরও মানুষকে আনন্দ-বিনোদন দেওয়ার মতো জীবনের প্রাথমিক লক্ষ্য থেকে কখনো পিছপা হটেননি। এর কারণও খুবই সাধারণ। আফগানদের হাসির খোরাক জোগাতে চান আসির।

২৫ বছর বয়সী আসির বলেন, ‘মানুষকে হাসাতে চ্যাপলিনের মতো সাজসজ্জার অনেক লোককেই সারা বিশ্বে দেখা যায়। আমিও সেটাই করেছি। তবে এখানে কাজ করার একটি বিশেষত্ব আছে। দীর্ঘদিন যুদ্ধে বিপর্যস্ত আফগানদের মুখে হাসি ফোটানো অন্যদের যেকোনো ঘটনার চেয়ে আসলেই বিশেষ কিছু।’

আসিরের শৈশবের বেশ কিছু বছর কেটেছে ইরানে। ১৯৯৬ সালে আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ কট্টরপন্থী তালেবানদের দখলে চলে যায়। এরপর তিনি পরিবারের সঙ্গে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইরানে চলে যান। ইরানের টিভি চ্যানেলে তিনি চ্যাপলিনের অভিনয় দেখেছেন। সেখান থেকেই মনে স্বপ্ন আঁকেন চ্যাপলিনের মতো হওয়ার।

নিজ দেশে ফিরে আসার পর আসির চ্যাপলিনের রূপ ধারণ করেন। মা-বাবার অমত থাকা সত্ত্বেও শুরু করেন মানুষ হাসানোর মঞ্চাভিনয়। একের পর এক প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলায় দুমড়ে-মুষড়ে পড়া মানুষকে কিছুটা হলেও আনন্দ জোগাচ্ছে তাঁর এই অভিনয়।

আসির বলেন, ‘আমার এই কাজকে অনৈসলামিক দাবি করে জঙ্গিরা হত্যার হুমকি দিয়েছে। হুমকি সত্ত্বেও আমি পার্ক, এতিমখানা, ব্যক্তিগত অনুষ্ঠান ও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা আয়োজিত দাতব্য অনুষ্ঠানগুলোতে অভিনয় করি। আফগানিস্তানে যুদ্ধ, সংঘাত ও নিরাপত্তাহীনতার মতো সমস্যাগুলোকে আফগানদের মন থেকে ভুলিয়ে দিতে চাই আমি।’