আসাম মানবতার বধ্যভূমির রূপ নিয়েছে

কলকাতায় ‘মানব সুরক্ষা ও জাগরণ সংগঠন’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন বিশিষ্টজনেরা। ভারত, ১৫ সেপ্টেম্বর। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
কলকাতায় ‘মানব সুরক্ষা ও জাগরণ সংগঠন’ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হাজির হয়েছিলেন বিশিষ্টজনেরা। ভারত, ১৫ সেপ্টেম্বর। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি বা এনআরসি সম্পর্কে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, আসাম এখন মানবতার বধ্যভূমির রূপ নিয়েছে। সেখানকার ডিটেনশন ক্যাম্প ব্রিটিশ আমলের সেলুলার জেলের রূপ নিয়েছে। আসামে মানবাধিকার লুণ্ঠিত। গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকার অপহৃত। আসামের ডিটেনশন ক্যাম্পের বন্দীরা আত্মহত্যা করছেন। কেউ কেউ পাগল হয়ে গেছেন। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সময় হয়ে গেছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই এনআরসির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে তা প্রতিহত করতে হবে।

গতকাল শনিবার কলকাতা প্রেসক্লাবে ‘মানব সুরক্ষা ও জাগরণ সংগঠন’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এ কথা বলেন। বক্তাদের মধ্যে ছিলেন মানবাধিকার নেত্রী তিস্তা শীতলবাদ, সাবেক বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, শিলং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রসেনজিৎ বিশ্বাসসহ আরও অনেকে।

সংবাদ সম্মেলনে মুম্বাইয়ের সিটিজেন ফর জাস্টিস অ্যান্ড পিস-এর সম্পাদক তিস্তা শীতলবাদ বলেন, আজ রাজনৈতিক স্বার্থে ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র তৈরির জন্য সুকৌশলে আসামবাসীর মধ্যে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। এনআরসি সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে হয়নি। এই এনআরসিতে রয়েছে প্রচুর গলদ। তিনি বলেন, ‘আসামের ডিটেনশন ক্যাম্প আজ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। আমি ছয়টি ক্যাম্প ঘুরে দেখেছি। অবর্ণনীয় দুর্দশার মাঝে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ক্যাম্পের বন্দীরা। সেখানে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। ক্যাম্পের বন্দীদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। এই এনআরসি নিয়ে আজ দেশজুড়ে জাতিদাঙ্গা আর প্রাদেশিকতার ভয়ংকর রাজনীতি চলছে।’
সাবেক বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের দেশের সংবিধানে অনাগরিক ও বিদেশিদের সুরক্ষা দেওয়ার বিধান রয়েছে। তাহলে কী করে এনআরসিতে নাম না থাকা মানুষদের ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হচ্ছে? এটা সম্পূর্ণ অসাংবিধানিক। মণিপুরে তো আইন করে দিয়েছে, মণিপুরের বাসিন্দা না হলে কেউ বসবাস করার সুযোগ পাবে না।’

বাংলা পক্ষ-এর গর্গ চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, এনআরসি আসাম সরকারের জাতীয়তাবাদ আর কেন্দ্রীয় সরকারের ষড়যন্ত্রের ফসল। মিথ্যাচার করে আজ আসামে বাংলাভাষীদের ‘বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে তাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাই আসামের বাঙালিরা আজ এক সন্ধিক্ষণে এসে দাঁড়িয়েছে। তাদের রক্ষার জন্য আমাদের সোচ্চার হতে হবে।

বাংলা সাংস্কৃতিক মঞ্চের তন্ময় ঘোষ প্রশ্ন তোলেন, ভারতে কত দিন বসবাস করলে একজন মানুষ নাগরিক হওয়ার যোগ্য?
শিলং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রসেনজিৎ বিশ্বাস বলেছেন, আসামের বিপন্ন বাঙালিদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য কলকাতার মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে। তাদের আইনি সহায়তা দিতে হবে। এই লক্ষ্যে তিনি সাবেক বিচারপতি, আইনজীবী এবং সমাজকর্মীদের নিয়ে একটি আইনি সুরক্ষা কমিটি গড়ার প্রস্তাব দেন।