শতবর্ষী ৩৫৬ গাছ না কেটে যশোর রোড সম্প্রসারণের নির্দেশ

পেট্রাপোল থেকে বারাসাত পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার সড়কের ৩৫৬টি শতবর্ষী গাছ কাটার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ছবি: অমর সাহা
পেট্রাপোল থেকে বারাসাত পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার সড়কের ৩৫৬টি শতবর্ষী গাছ কাটার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ছবি: অমর সাহা

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত যশোর রোডের শতবর্ষী ৩৫৬টি গাছ কাটা যাবে না বলে নির্দেশ দিয়েছেন ভারতের সুপ্রিম কোর্ট। গাছগুলো না কেটে যশোর রোড সম্প্রসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এম বি লকুড় ও বিচারপতি দীপক গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি শেষে এই নির্দেশ দেওয়া হয়। গাছ কাটা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে আদালত দুই সপ্তাহের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারকে সুপ্রিম কোর্টে এ–সংক্রান্ত প্রতিবেদন পেশ করতে বলেছেন।

৩১ আগস্ট কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি জ্যোতির্ময় ভট্টাচার্য ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ যশোর রোডের গাছ কাটার ওপর স্থগিতাদেশ তিন সপ্তাহ বাড়ান।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত যশোর রোডের গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশের পরিবেশবাদীরা আন্দোলন শুরু করেন। প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ে চলে যাবে এই সড়ক ধরে। এশিয়ান হাইওয়ের দৈর্ঘ্য হবে ২০ হাজার ৫৫৭ কিলোমিটার। এ লক্ষ্যে সড়ক প্রশস্ত করার জন্য গাছ কাটার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ও ভারত সরকার।

গাছ কাটার বিরুদ্ধে আবেদনকারীদের আইনজীবী রঘুনাথ চক্রবর্তী জানান, সাবেক ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি নিশীথা মাত্রের ডিভিশন বেঞ্চ এই গাছ কাটার ওপর স্থগিতাদেশ জারি করে একটি কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছিলেন। ওই নির্দেশে বলা হয়, যেসব গাছ কাটার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেগুলো প্রাচীন কি না এবং সেসব গাছ কোন এলাকায় অবস্থিত, তা বিস্তারিত জানাতে হবে ওই কমিশনকে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবেদনে কমিশন জানায়, সব গাছই প্রাচীন। যদিও এদিন ডিভিশন বেঞ্চ প্রথমে জানিয়েছিলেন, যেসব গাছ কাটা হবে, সেখানে প্রতিটি গাছের জন্য পাঁচটি করে গাছ লাগাতে হবে। এরপর মামলার আবেদনকারীরা ফের এক আবেদনে জানান, ওই ৩৫৬টি গাছ কাটার ওপর দেওয়া হোক স্থগিতাদেশ। কারণ, ওই সব গাছও প্রাচীন। আইনজীবী এ কথাও জানান, এ নিয়ে তাঁরা সুপ্রিম কোর্টে যেতে চান। এরপরই ডিভিশন বেঞ্চ আরও তিন সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ দেন।

বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বুক চিরে চলে গেছে ঐতিহাসিক এই যশোর রোড। শুরু বাংলাদেশের যশোর জেলা থেকে। চলে এসেছে বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত বেনাপোল-পেট্রাপোল পেরিয়ে সোজা কলকাতায়। সেই যশোর রোড নিয়ে কত কথা, কত কাহিনি, কত ইতিহাস এখনো ঘুরে বেড়ায় এই উপমহাদেশে। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই যশোর রোড হয়ে উঠেছিল এক জীবন্ত ইতিহাস। এই রোড দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা পাড়ি দিয়েছেন শত্রুর মোকাবিলায়। এই রোডের পাশে কত মুক্তিযোদ্ধা আর শরণার্থীর ক্যাম্প গড়ে উঠেছিল। এই রোড ঘুরেছেন সেদিন বিশ্বের তাবড় নেতা, কবি, সাহিত্যিকেরা। সেটার বিরাট ইতিহাস আজও জেগে রয়েছে।