ভারত-পাকিস্তান বৈঠক হচ্ছে না

পাকিস্তানের সঙ্গে বৈঠক হবে—এমন ঘোষণা দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত বদল করল ভারত। শুক্রবার কাশ্মীরে তিন ভারতীয় পুলিশের লাশ পাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ওই সিদ্ধান্ত বদলের ঘোষণা আসে। আর এই তিনজনের নিহত হওয়ার ঘটনাকে ভারত দেখছে প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ও পাকিস্তানের ‘অসৎ উদ্দেশ্যের’ অংশ হিসেবে।

এর আগে বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রবীশ কুমার পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্ভাব্য বৈঠকের কথা জানিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের আসন্ন বার্ষিক সভার ফাঁকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কুরেশির মধ্যে বৈঠক হবে।

এনডিটিভির খবরে বলা হয়, শুক্রবার সকালে যে তিন পুলিশ কর্মকর্তার লাশ উদ্ধার হয়, তাঁদের শরীরে বুলেট ছিল। ভারত বিষয়টিকে দেখছে, কট্টরপন্থী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদীনের আক্রমণ হিসেবে। কারণ মাত্র দুই দিন আগে এই সংগঠনটি কাশ্মীরে থাকা ভারতীয় পুলিশ সদস্যদের হত্যার হুমকি দিয়ে একটি ভিডিও বার্তা ইন্টারনেটে প্রকাশ করে। মূলত ২০১৬ সালে এই সংগঠনটির শীর্ষ নেতা বুরহান ওয়ানির মৃত্যু হলে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর অঞ্চলের অবস্থা উত্তপ্ত হয়ে উঠে । ভারত বরাবরই হিজবুল মুজাহিদীনের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে আসছে। ২০১৫ সালে কাশ্মীরের উড়িতে অবস্থিত ভারতীয় সেনা চৌকিতে এক সন্ত্রাসী হামলা হয়। ওই হামলায় ১৯ ভারতীয় সেনার প্রাণহানি ঘটেছিল। এর পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় আলোচনা বন্ধ রয়েছে। ভারত ওই হামলার পেছনেও পাকিস্তানের মদদ আছে বলে অভিযোগ করছে।

এর আগে গত মঙ্গলবার ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর ও পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের আন্তর্জাতিক সীমান্ত বরাবর এক বিএসএফ সদস্যের মরদেহ পাওয়া গিয়েছিল। লাশ উদ্ধারের সময় তাঁর গলায় ক্ষতচিহ্ন পাওয়া যায়। তবে ঠিক কি কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে তা বলা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়েছিল, পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর হাতে ওই বিএসএফ সদস্য মারা যান। কারণ, ওই রাতে পাকিস্তানি সেনারা সংশ্লিষ্ট সীমান্তে বন্য হাতি তাড়াতে আগুন জ্বালিয়েছিল। সব মিলিয়ে পরপর ঘটে যাওয়া শুক্রবার ও মঙ্গলবারের এই দুটি ঘটনায় পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যকার পরিস্থিতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

শুক্রবার বৈঠকের সিদ্ধান্ত বদলের ঘোষণা দিয়ে রবীশ কুমার বলেন, ‘ইমরানের চিঠি পেয়ে আমরা মনে করেছিলাম পাকিস্তান ইতিবাচক পথে হাঁটতে যাচ্ছে, নতুন কিছু শুরু হবে। কিন্তু না, এখন দেখছি ওই প্রস্তাবের পেছনে পাকিস্তানের অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে।’

প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর ইমরান খানকে চিঠি লিখে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ওই চিঠিতে মোদি বলেছেন, সুসম্পর্ক রক্ষার একমাত্র উপায় গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে শান্তি স্থাপন। সেই চিঠির উত্তরে ইমরান যে চিঠি লিখেন, তাতে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে বৈঠকের এই প্রস্তাব দেওয়া হয়। পাশাপাশি ইমরান ওই চিঠিতে পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদ নিয়ে আলোচনায় প্রস্তুত তা জানানো হয়। এ ছাড়া বন্ধ থাকা সার্ক শীর্ষ সম্মেলন শুরু করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।