পরপর তিন সেতু বিপর্যয়ে উদ্বিগ্ন মমতা

ভারতের দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে সোমবার সকালে ভেঙে পড়ে নবনির্মিত একটি সেতু। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
ভারতের দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে সোমবার সকালে ভেঙে পড়ে নবনির্মিত একটি সেতু। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চলতি মাসে তিনটি সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনায় উদ্বিগ্ন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের মানুষও এ নিয়ে উদ্বেগে রয়েছে। ৪ সেপ্টেম্বর ভেঙে পড়ে দক্ষিণ কলকাতার মাঝেরহাট সেতু। এর চার দিন পর ভেঙে পড়ে পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলায় একটি সেতু। আর সর্বশেষ ঘটনাটি ঘটে গত সোমবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে। কালনাগিনী নদীর ওপর নবনির্মিত একটি সেতু ভেঙে পড়ে।

মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পর রাজ্য সরকার দোষ চাপায় সাবেক বাম সরকারের ওপর। রাজ্য সরকার প্রচারণা চালায়, বাম আমলে তৈরি হয়েছিল ওই সেতু। যদিও ৪০ বছরের পুরোনো ওই সেতু তৈরি হয় কংগ্রেস জমানায়। ওই দুর্ঘটনায় তিনজন নিহত হন। আহত ২৪ জন।

মাঝেরহাট সেতু দুর্ঘটনার চার দিন পর পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিংয়ে দ্বিতীয় সেতু ভেঙে পড়ে। ঘটনার দিন ওই সেতুর ওপর একটি ট্রাক উঠলে সেটি ভেঙে পড়ে। ঝুলে পড়ে ওই ট্রাক। এ ঘটনায় আহত হন তিনজন।

সর্বশেষ তৃতীয় সেতু ভাঙার ঘটনা ঘটেছে সোমবার সকালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপে। সেখানকার কালনাগিনী নদীর ওপর নবনির্মিত সেতুটি ভেঙে পড়ে। কেউ হতাহত হয়নি। অভিযোগ উঠেছে, ঠিকাদার নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করায় ভেঙে পড়েছে এই সেতু। সেতুটি নির্মাণ করছিল কলকাতা এসএস সিভিল কনস্ট্রাকশন প্রাইভেট লিমিটেড। গতকাল মঙ্গলবার এই সংস্থাকে এ ঘটনার জন্য নোটিশ দিয়েছেন আদালত।

সোমবার এই সেতু ভেঙে পড়ার ঘটনার সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিদেশ সফরে ছিলেন। ইতালির মিলান শহরে। কাকদ্বীপের এই সেতু বিপর্যয়ের ঘটনা শোনার পর মুখ্যমন্ত্রী একটি সেতু কমিশন গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন। এই সেতু কমিশন গঠনের পর রাজ্যের সেতু নির্মাণের দায়িত্বে আর পঞ্চায়েত, নগর উন্নয়ন, পূর্ত দপ্তর, কেএমডিএ এবং সেচ দপ্তরকে রাখা হবে না । সেতু কমিশনই নির্মাণ করবে রাজ্যের সব সেতু। রক্ষণাবেক্ষণও করবে তারা।

মাঝেরহাট সেতু বিপর্যয়ের পর শাসক দল অভিযোগ তোলে, এই সেতু সিপিএমের আমলে তৈরি। কিন্তু এই সেতু নির্মিত হয়েছিল ১৯৬৪ সালে কংগ্রেসের আমলে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই জরাজীর্ণ মাঝেরহাট সেতুর কেন সংস্কার করা হয়নি? গত দেড় বছরে ছয়বার এই সেতু সংস্কারে দরপত্র আহ্বান করা হয়। অথচ কোনো সংস্কার হয়নি? এ জন্য বিরোধী দলকে দায়ী করা যায় না, বলছেন তাঁরা।

বিতর্কের মাঝে গত ৭ সেপ্টেম্বর সকালে ভেঙে পড়ে শিলিগুড়ির একটি সেতু। তৃণমূল এখানেও দাবি তোলে, এই সেতু ভেঙে পড়ার দায় বিরোধী দল সিপিএমের। কারণ, তাদের আমলেই তৈরি হয় সেতুটি। পরে মাঝেরহাটের সেতু ভেঙে পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কোন কোন সেতু দুর্বল, তার তালিকা তৈরির নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। তিনি নিজেই বলছেন, কলকাতা এবং আশপাশের এলাকার ২০টি সেতুর আয়ু শেষ। ওই সব সেতুর মেরামত করার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। এসব সেতুর নিচে যাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করছেন, তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত আগস্টে শিলিগুড়িতে একটি নির্মাণাধীন উড়ালসেতু ভেঙে পড়ে, তবে ওই ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি। ২০১৬ সালে কলকাতার বড়বাজার এলাকায় নির্মাণাধীন একটি উড়ালসেতু ভেঙে পড়লে ২৪ জন নিহত হয়। ওই ঘটনায় আহত হয় শতাধিক।