অযোধ্যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়

নামাজের জন্য মসজিদ অপরিহার্য নয়। ১৯৯৪ সালে ভারতের সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া এই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য বৃহত্তর সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানোর আরজি সুপ্রিম কোর্ট নাকচ করে দিলেন। আজ বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্রর নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ে ওই আবেদন খারিজ করেন।

প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র ও বিচারপতি অশোক ভূষণের রায়ের সঙ্গে একমত হননি তৃতীয় বিচারপতি আবদুল নাজির। তাঁর অভিমত, বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য সাত বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চে পাঠানো উচিত।
এই সংখ্যাগরিষ্ঠ রায়ের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেন, এই রায়ের প্রভাব বাবরি মসজিদ–রাম জন্মভূমি মূল মামলায় পড়বে না। মূল মামলার শুনানি ২৯ অক্টোবর থেকে সুপ্রিম কোর্টে শুরু হবে। এই রায়ের ফলে আগামী বছর লোকসভা ভোটের আগে অযোধ্যার মন্দির–মসজিদ বিতর্কের চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়ে যাবে বলেও মনে করা হচ্ছে।

স্বাভাবিক কারণেই এই রায় ভারতের শাসক দল বিজেপিকে উজ্জীবিত করে তুলেছে। দলের কট্টর হিন্দুত্ববাদীদের কেউ কেউ এই রায়ের পর নতুন করে অযোধ্যা অভিযান কর্মসূচি গ্রহণ করার কথা ভাবতে শুরু করেছেন।
নামাজ পড়ার জন্য মসজিদ অপরিহার্য নয়, এটাই ছিল ১৯৯৪ সালের রায়। ইসমাইল ফারুকি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতি সর্বসম্মতভাবে জানিয়ে ছিলেন, নামাজ যেকোনো স্থানেই পড়া যেতে পারে, মসজিদ অপরিহার্য নয়। সে কারণে সরকার প্রয়োজনে মসজিদের জমি অধিগ্রহণও করতে পারে। ২৪ বছর আগের এই রায়কেই চ্যালেঞ্জ জানায় সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডসহ অন্যরা। তাঁদের আরজি ছিল, বিষয়টা সুপ্রিম কোর্টের সাত বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের কাছে পাঠানো হোক, যেহেতু অযোধ্যার মূল মামলার নিষ্পত্তির আগে এই বিষয়টির মীমাংসা হওয়া জরুরি। কারণ, সুপ্রিম কোর্টের এই রায় ২০১০ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টকে প্রভাবিত করেছিল। সেই রায়ে এলাহাবাদ হাইকোর্ট অযোধ্যার বিতর্কিত ২ দশমিক ৭৭ একর জমি তিনটি সমান ভাগে ভাগ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বিতর্কিত স্থানের গর্ভগৃহ, যেখানে রামের মূর্তি স্থাপিত হয়েছিল, তা দেওয়া হয় ‘রামলালা’কে, দ্বিতীয় ভাগ দেওয়া হয় সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে, তৃতীয় ভাগটি পায় নির্মোহী আখড়া।

প্রধান বিচারপতি অবসর নিচ্ছেন ২ অক্টোবর থেকে। অর্থাৎ আগামী সোমবার তাঁর শেষ কাজের দিন। অবসর গ্রহণের আগে অযোধ্যাসংক্রান্ত এই মামলা নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ তাই ছিল গুরুত্বপূর্ণ। আরও গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে, ১৯৯২ সালের ২ ডিসেম্বর অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধুলিসাৎ হওয়ার আগে থেকেই রাম মন্দির–বাবরি মসজিদ মামলা ছিল দেশের প্রতিটি নির্বাচনের অন্যতম প্রধান ইস্যু। বিজেপির প্রতিটি নির্বাচনী ইশতেহারে অযোধ্যায় রাম মন্দির স্থাপনের বিষয়টি যেমন প্রতিশ্রুতি হিসেবে উল্লিখিত, তেমনই বিজেপিবিরোধী দলগুলো দেশের ‘ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র রক্ষার স্বার্থে’ বিষয়টির বিরোধিতা করে এসেছে। আগামী বছর ২০১৯ সালে দেশের লোকসভা নির্বাচন। সেই কারণেই এই মামলার গুরুত্ব বেড়ে গেছে।

এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায়কে হিন্দু ও মুসলমান দুই পক্ষই সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে। জমির অধিকারের সেই মামলার সঙ্গে বৃহস্পতিবারের রায়ের সরাসরি কোনো যোগসাজশ নেই। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই রায় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বিজেপি মনে করে, জমি মামলার নিষ্পত্তি ঘটিয়ে অযোধ্যায় রাম মন্দির স্থাপনের কাজ শুরু করা গেলে তা ধর্মীয় মেরুকরণ ঘটাবে। তাতে শাসক দলের রাজনৈতিক লাভ হবে।