সুপ্রিম কোর্টে কাভানার নিয়োগ অনিশ্চিত হয়ে পড়ল

বিচারপতি ব্রেট কাভানা। ছবি: রয়টার্স
বিচারপতি ব্রেট কাভানা। ছবি: রয়টার্স

রিপাবলিকান নেতৃত্ব নিশ্চিত ছিল শুক্রবারের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের পরবর্তী বিচারপতি হিসেবে ব্রেট কাভানার নিয়োগ প্রশ্নে সিনেটের বিচার বিভাগীয় কমিটিতে ভোট গৃহীত হবে। এর আগের দিন কাভানার বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ নিয়ে শুনানিতে তাঁরা মনোযোগ দিয়ে অভিযোগকারী অধ্যাপক ক্রিস্টিন ব্লাসি ফোর্ড ও কাভানার বক্তব্য শুনেছেন। বিরোধী ডেমোক্র্যাটরা বারবার দাবি তুলেছিল, বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য এফবিআই দ্বারা একটি নিরপেক্ষ তদন্ত হোক। সে দাবি অগ্রাহ্য করে কমিটির প্রধান সিনেটর চাক গ্রাসলি শুক্রবার ভোট গ্রহণের ঘোষণা দিয়েছিলেন।

সব হিসাব বদলে দিলেন অ্যারিজোনার রিপাবলিকান সিনেটর জেফ ফ্লেক। দুপুরে, কমিটি যখন নিয়োগ প্রশ্নে ভোট গ্রহণে প্রস্তুত, বিস্মিত সহকর্মীদের ফ্লেক জানালেন, তিনি চান এই প্রশ্নে একটি এফবিআই তদন্ত হোক। এক সপ্তাহের মধ্যে এই তদন্তের কাজ শেষ হবে, এই শর্তে তিনি আপাতত কাভানার পক্ষে ভোট দিচ্ছেন, কিন্তু পূর্ণ সিনেটের সামনে যখন চূড়ান্ত ভোট গৃহীত হবে, তিনি কাভানার পক্ষে ভোট দিতে প্রস্তুত নন। সে জন্য তিনি তদন্তের প্রতিবেদন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।

এর আগে প্রতিটি রিপাবলিকান সরোষে এফবিআই তদন্তের সব দাবি প্রত্যাখ্যান করে আসছিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প টুইট করে জানিয়েছিলেন, অনেক হয়েছে, এবার ভোট হোক। কাভানা নিজেও এমন কোনো তদন্তের বিপক্ষে ছিলেন। এর আগে ফ্লেক নিজেও এমন কোনো দাবি তোলেননি। হঠাৎ এমন কী ঘটল যে ফ্লেক তাঁর মত বদলে ফেললেন?

সকালে কমিটি কক্ষে প্রবেশের জন্য লিফটে প্রবেশ করছিলেন সিনেটর ফ্লেক। তাঁর পথ আটকে দাঁড়ান দুই নারী—যাঁরা উভয়েই যৌন নির্যাতনের শিকার। তাঁরা ফ্লেকের কাছে জানতে চান, যৌন নির্যাতনের স্পষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পরেও কাভানার মতো একজন মানুষকে সুপ্রিম কোর্টে নিয়োগ দেওয়া হবে কেন? ক্ষমতাবান মানুষেরা কি কেউই যৌন নির্যাতনের শিকার এমন নারীদের কথা কানে তুলবেন না? একজন অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে জানালেন, ‘আমি নিজে যৌন নির্যাতনের শিকার। এ কথা আজ পর্যন্ত আমি কাউকে বলিনি। আপনারা এখন বলছেন যে এমন ঘটনার কোনো গুরুত্ব নেই, আমাদের মুখ বন্ধ করে থাকা উচিত। কী ঘটেছিল, তা শোনার পরও আপনারা আমাদের কথা উপেক্ষা করবেন? আমরা ক্ষমতাহীন, কিন্তু আপনার তো ক্ষমতা আছে একটা কিছু করার।’

ফ্লেকের সঙ্গে এই দুই নারীর কথোপকথন সিএনএনের ক্যামেরায় তাৎক্ষণিকভাবে ধরা পড়ে, সারা পৃথিবীর মানুষও সে কথা শুনতে পান। ভোট গ্রহণের আগে ফ্লেক তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডেমোক্রেটিক সিনেটর ক্রিস কুনকে সঙ্গে নিয়ে কয়েক মিনিটের জন্য বেরিয়ে যান। সলাপরামর্শ শেষে ফিরে এসে ফ্লেক নিজের অবস্থান পরিবর্তনের ঘোষণা দেন। ফ্লেক জানান, তিনি একা নন, আরও একাধিক সিনেটর রয়েছেন যাঁরা এই প্রশ্নে এখনো দ্বিধায় রয়েছেন, তাঁরাও চান তদন্ত হোক।

৫১-৪৯ ভোটে বিভক্ত সিনেটে রিপাবলিকান দল বড় জোর একজন সিনেটরের ভোট হারাতে পারে। তার বেশি ‘না’ ভোট পেলে কাভানার নিয়োগ ফেঁসে যেতে পারে। বাধ্য হয়েই এই দাবি মেনে নিলেন চাক গ্রাসলি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও জানালেন, সিনেট যে সিদ্ধান্ত নেবে, তিনি তাঁর প্রতি সমর্থন দেবেন। কাভানা নিজেও এই তদন্তে সহযোগিতার আশ্বাস দিলেন।

শুক্রবার বিকেলের মধ্যেই প্রেসিডেন্টের নির্দেশ মোতাবেক এফবিআইয়ের তদন্ত শুরু হয়েছে। এটি একটি সীমিত পরিসরের তদন্ত, যেসব বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ উঠেছে, এফবিআই কেবল সেসব অভিযোগ তদন্ত করে সাত দিনের মধ্যে একটি প্রতিবেদন কমিটির হাতে তুলে দেবে।

৩৬ বছর আগে কী ঘটেছিল, এই তথ্য উদঘাটন খুব সহজ নয়, এমনকি এফবিআইয়ের পক্ষেও। অধ্যাপক ফোর্ড জানিয়েছেন, মার্ক রিচ নামে আরেক ছেলে কাভানার সঙ্গে যৌন নির্যাতনে অংশ নেয়। মদ্যপ হিসেবে পরিচিত মার্ক ইতিমধ্যে জানিয়েছেন, এমন কোনো ঘটনার কথা তিনি জানেন না। এফবিআই তাঁকে নতুন করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাঁর স্মৃতি ফের চাঙা হতে পারে, এমন আশা কেউ কেউ করছেন। স্কুলে ও কলেজে কাভানা নিজেও অতিরিক্ত মদ্যপান করতেন, এ কথা তাঁর একাধিক সহপাঠী জানিয়েছেন। ভাবা হচ্ছে, এখন এফবিআইয়ের তদন্তে সেসব তথ্যের পাশাপাশি কাভানার জন্য অস্বস্তিকর আরও অনেক তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে।

এফবিআইয়ের একজন সাবেক উপপ্রধান ‘পলিটিকো’-কে জানিয়েছেন, কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে পড়লে বিপদে পড়ে যাবেন কাভানা।