ক্যানসার চিকিৎসায় নতুন থেরাপি আবিষ্কার করে নোবেল জয় তাঁদের

চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জেমস পি. অ্যালিসন ও তাসুকু হোনজো। ছবি: দ্য নোবেল প্রাইজের টুইটার থেকে নেওয়া
চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন জেমস পি. অ্যালিসন ও তাসুকু হোনজো। ছবি: দ্য নোবেল প্রাইজের টুইটার থেকে নেওয়া

প্রতিবছর সারা বিশ্বে লাখো মানুষ মারা যায় ক্যানসারে। এখন পর্যন্ত প্রাণঘাতী এ রোগের সুনির্দিষ্ট ও পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসাপদ্ধতি আবিষ্কার সম্ভব হয়নি। বিশ্বের স্বাস্থ্যসেবা খাতের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত এ রোগে চিকিৎসায় নানা ধরনের থেরাপি প্রচলিত। এ ধারাতেই নতুন সংযোজন হিসেবে হাজির হয়েছে শরীরের নিজস্ব প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে জোরদার করে নতুন এক থেরাপি-পদ্ধতি, যা মূলত বিদ্যমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে কাজ করে। আর এ পদ্ধতি আবিষ্কার করেই মার্কিন বিজ্ঞানী জেমস পি অ্যালিসন ও জাপানি বিজ্ঞানী তাসুকু হোনজো যৌথভাবে এ বছর চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার জিতে নিয়েছেন।

যেকোনো ধরনের ক্যানসারেরই বিস্তার শুরু হয় অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন থেকে। অস্বাভাবিক কোষ বিভাজনের মাধ্যমে শরীরে টিউমার কোষের সৃষ্টি হয়, যা পরে ক্যানসারে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা থাকে। শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ কার্যকর হলে এই টিউমার কোষ বিনাশ করা সম্ভব। এ বিষয়টির দিকেই মনোযোগ সবচেয়ে বেশি নিবদ্ধ করেন জেমস পি অ্যালিসন ও তাসুকু হোনজো। তাঁরা এ ক্ষেত্রে যুগান্তকারী এক তত্ত্ব হাজির করেছেন, যা ক্যানসার চিকিৎসায় বড় ধরনের অগ্রগতির দ্বার উন্মোচন করেছে। এ জন্য চলতি বছর চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে এই দুই গবেষককে। ১ অক্টোবর সোমবার সুইডেনের কারোলিনস্কা ইনস্টিটিউট চলতি বছরের চিকিৎসায় নোবেল ঘোষণা করে।

ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দুই বিজ্ঞানীই দেখতে পান, শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে (ইমিউন সিস্টেম) বাধাগ্রস্ত করে কিছু প্রোটিন। এর ফলে টিউমার কোষের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে না শরীরের নিজস্ব রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা। এটা অনেকটা ঘরের পাহারাদারকে বেঁধে রেখে ডাকাতি করার মতো বিষয়। জেমস পি অ্যালিসনের গবেষণায় দেখা যায়, শরীরের একটি পরিচিত প্রোটিন প্রতিরক্ষাব্যবস্থার জন্য বাধা হিসেবে কাজ করে। তিনি এই বিশেষ প্রোটিন থেকে প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে মুক্ত করার গুরুত্ব অনুভব করেন, যাতে স্বাধীন ওই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা টিউমারের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়াই করতে পারে। অ্যালিসন যখন এই গবেষণা করছিলেন, ঠিক সেই সময় আরেক গবেষক তাসুকু হোনজো একই রকম একটি প্রোটিনের সন্ধান পান, যার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে তিনি দেখেন, ওই প্রোটিনটিও ঠিক একই কাজ করছে। তবে অ্যালিসনের আবিষ্কৃত প্রোটিন থেকে এই প্রোটিন একটু ভিন্ন পন্থায় প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

ক্যানসারের কারণে শরীরে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়, যার গোড়ায় রয়েছে অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন। ক্যানসারের সৃষ্টি কোনো একটি বিশেষ অংশে হলেও তা ক্রমান্বয়ে শরীরের সুস্থ অঙ্গ ও টিস্যুগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে শুরু করে। ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে তাই শুরুতেই এই বিস্তার রোধকেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার, রেডিয়েশন (তেজস্ক্রিয় রশ্মির সাহায্যে চিকিৎসা, টার্গেট থেরাপি নামেও পরিচিত), কেমোথেরাপিসহ নানা ধরনের চিকিৎসাপদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। এর মধ্যে কয়েকটি পদ্ধতি আবিষ্কারের কারণে সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞানীদের নোবেল দেওয়া হয়েছিল অতীতে। এর মধ্যে রয়েছে প্রোস্টেট ক্যানসারের চিকিৎসায় হরমোন ট্রিটমেন্ট (১৯৬৬), কেমোথেরাপি (১৯৮৮) ও লিউকোমিয়া চিকিৎসায় বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্টেশন (১৯৯০)। কিন্তু এত সব অগ্রগতির পরও জটিল ও শরীরে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া ক্যানসারের চিকিৎসা এখনো অনেক কঠিন। এ জন্য এ ধরনের ক্যানসারের চিকিৎসায় ভিন্ন ও আরও উন্নত থেরাপি কৌশল অনেক প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এই প্রয়োজন থেকেই শুরু হয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মধ্যে লুকিয়ে থাকা সম্ভাবনার খোঁজ। শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে সচল করতে এমনকি রোগীর শরীরে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করানোর মতো পরীক্ষাও চালানো হয়েছিল। এটা অবশ্য বিশ শতকের শুরুর ধাপের কথা, যখন এ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কার্যকর করার গুরুত্ব অনুধাবন করতে শুরু করেন গবেষকেরা। কিন্তু সে সময় এই পদ্ধতিতে খুব একটা সুফল আসেনি। এই পর্যায়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার ওপর সর্বাত্মক গবেষণা শুরু হয়, যেখানে বহু বিজ্ঞানী নিজেদের নিয়োজিত করেন। এ সময়ই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কী করে ক্যানসার কোষ শনাক্ত করে, তা আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু এত কিছুর পরও এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে সক্রিয় করে এর মাধ্যমেই ক্যানসার চিকিৎসার জন্য সাধারণীকৃত একটি নতুন থেরাপির দেখা মিলছিল না।

এই থেরাপি আবিষ্কারের জন্যই প্রয়োজন পড়ে প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সক্রিয় ও অক্রিয় হওয়ার কার্যকারণ অনুসন্ধান। বিজ্ঞানীরা প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সাধারণ তত্ত্বটির ওপর মনোনিবেশ করেন। আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মূলত ‘নিজ’ ও ‘অপর’ চিহ্নিতকরণের মাধ্যমেই রোগ প্রতিরোধে ক্রিয়াশীল হয়। শরীরে প্রবেশ করা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া প্রভৃতি শনাক্তের ক্ষেত্রে এ বিষয়টিকেই কাজে লাগায়। এই পুরো প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সেনাপতি হিসেবে কাজ করে শ্বেত রক্তকণিকার টি-সেল। এই টি-সেলের রয়েছে কিছু গ্রাহক অংশ, যা শরীরে প্রবেশ করা ‘অপর’ সত্তাটির সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাকে শরীর থেকে আলাদা করে। এই সংযুক্তিই শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থার সক্রিয়তার প্রমাণ। এর সঙ্গে কিছু বাড়তি প্রোটিন যুক্ত হলে তা টি-সেলের কার্যকারিতাকে বাড়িয়ে দেয়। ঠিক একইভাবে শরীরে রয়েছে এমন কিছু প্রোটিন, যা টি-সেলের কার্যকারিতাকে বাধাগ্রস্ত করে। অর্থাৎ টি-সেলকে যদি একটি গাড়ির সঙ্গে তুলনা করা হয়, তবে এতে রয়েছে দুই ধরনের প্রোটিন, যার একটি ত্বরক ও অন্যটি ব্রেক হিসেবে কাজ করে। এই বিপরীতের ঐক্যের মধ্য দিয়েই শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থাটি কাজ করে, যাতে অচেনা জীবাণুর আক্রমণ প্রতিরোধ কাজ করা যায়; অতি সক্রিয়তার কারণে শরীরের সুস্থ-স্বাভাবিক কোষ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।

১৯৯০ সালে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে নিজের গবেষণাগারে জেমস পি অ্যালিসন টি-সেলের প্রোটিন সিটিএলএ-৪ পর্যবেক্ষণ করেন, যা টি-সেলের কার্যকারিতায় মন্দকের (ব্রেক) ভূমিকা পালন করে। তিনি ছাড়াও আরও কয়েকজন গবেষক সিটিএলএ-৪-এর এই ভূমিকার বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। কিন্তু অন্য গবেষকেরা সিটিএলএ-৪-কেই নষ্ট করে স্বয়ংক্রিয় প্রতিরক্ষাব্যবস্থার (অটোইমিউন সিস্টেম) তত্ত্ব দেন, যা সুস্থ কোষগুলোর জন্যও হুমকি হয়ে ওঠে। কিন্তু অ্যালিসন হাঁটেন সম্পূর্ণ ভিন্ন রাস্তায়। তিনি একটি অ্যান্টিবডি আবিষ্কার করেন, যা সিটিএলএ-৪-এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাকে অকার্যকর করে রাখতে সক্ষম। এই পদ্ধতির কার্যকারিতা পরীক্ষার জন্য ১৯৯৪ সালে তিনি ক্যানসার আক্রান্ত কয়েকটি ইঁদুরের ওপর এই পদ্ধতির প্রয়োগ করেন এবং বিস্ময়কর ফল পান। তাঁর এই গবেষণার কাজে ওষুধশিল্প থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। কিন্তু তিনি মানুষের জন্য প্রয়োগযোগ্য একটি পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য গবেষণা চালিয়ে যান। ২০১০ সালে পূর্ণাঙ্গ সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছান অ্যালিসন। ত্বকের ক্যানসার ম্যালানোমায় আক্রান্ত এক রোগীর চিকিৎসায় পদ্ধতিটির প্রয়োগ করে ব্যাপক সুফল মেলে।

প্রায় একই সময়ে কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ে তাসুকু হোনজো আবিষ্কার করেন পিডি-১ নামের এক প্রোটিন। ১৯৯২ সালে আবিষ্কৃত এই প্রোটিন অ্যালিসনের আবিষ্কৃত সিটিএলএ-৪-এর মতোই কাজ করে। হোনজো এবার এই পিডি-১ প্রোটিনকে বন্দী করে টি-সেলকে স্বাধীন করার পন্থা নেন। পিডি-১ প্রোটিনকে লক্ষ্য করে এক নতুন থেরাপির তত্ত্ব হাজির করলেন হোনজো, যার সফল প্রয়োগ হয় ২০১২ সালে। পিডি-১ প্রোটিনকে বন্দী করার লক্ষ্য নিয়ে করা থেরাপিতে দারুণ সাফল্য আসে। এই পদ্ধতির মাধ্যমে এমনকি মেটাস্ট্যাটিক (ব্যাপক বিস্তৃত) পর্যায়ের ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীরও ব্যাপক উন্নতি হয়।
সিটিএলএ-৪ ও পিডি-১ প্রোটিনকে চিহ্নিত ও একে বন্দী করে টি-সেলকে কার্যকর করার মধ্য দিয়ে পৃথকভাবে সূচনা হয় ‘ইমিউন চেকপয়েন্ট থেরাপি’র। এই পদ্ধতির মাধ্যমে বিশেষত গুরুতর ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ব্যাপক অগ্রগতি হয়। কিন্তু এখনো অনেক দূর যাওয়া বাকি। কারণ অন্য পুরোনো পদ্ধতিগুলোর মতোই এই পদ্ধতিরও রয়েছে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, যা এমনকি প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু এই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এ নিয়ে এখনো বিস্তৃত পরিসরে গবেষণা চলছে। তবে এখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত এই দুই পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে পিডি-১ চেকপয়েন্ট থেরাপিকে। বর্তমানে এই দুই থেরাপিকে সমন্বয় করে নতুন থেরাপি আবিষ্কারের চেষ্টা করা হচ্ছে। শতভাগ সফল ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন হওয়ার দাবি করতে না পারলেও জেমস পি অ্যালিসন ও তাসুকু হোনজো যে নতুন থেরাপির দিশা দিয়েছেন, তা ক্যানসার চিকিৎসাকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গেছে, যা নিঃসন্দেহে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচাতে কাজে লাগবে। আর এই আবিষ্কারের প্রতি সম্মান জানাতেই এই দুই গবেষককে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়েছে এবার।

চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তাসুকু হোনজো ও জেমস পি. অ্যালিসন।
চিকিৎসাশাস্ত্রে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তাসুকু হোনজো ও জেমস পি. অ্যালিসন।

জেমস পি অ্যালিসন যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস ইউনিভার্সিটির এমডি অ্যান্ডারসন ক্যানসার সেন্টারের অধ্যাপক। অ্যালিসন ১৯৪৮ সালে টেক্সাস অঙ্গরাজ্যের অ্যালিসে জন্মগ্রহণ করেন। অন্যদিকে তাসুকু জাপানের কিয়োটো ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক। তিনি ১৯৪২ সালে জাপানের কিয়োটোতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮৪ সাল থেকে কিয়োটো ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছেন।

১৯০১ সাল থেকে শুরু হয়ে চলতি বছর পর্যন্ত চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেলেন ১১০ জন বিজ্ঞানী। এ পর্যন্ত ১২ জন নারী চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন। বিজ্ঞানের এই শাখায় সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে নোবেল পুরস্কার জেতেন ফ্রেডারিক জি ব্যানটিং। ইনসুলিন আবিষ্কার করার স্বীকৃতি হিসেবে মাত্র ৩২ বছর বয়সে ১৯২৩ সালে তিনি এই গৌরব অর্জন করেন। আর সবেচেয়ে বেশি বয়সে ১৯৬৬ সালে এই পুরস্কার জেতেন পিটন রোয়ুস। টিউমার সৃষ্টির জন্য দায়ী ভাইরাস শনাক্ত করে তিনি ৮৭ বছর বয়সে চিকিৎসায় নোবেল পান।

চিকিৎসায় নোবেল দেওয়ার মাধ্যমে এ বছরের নোবেল ঘোষণা শুরু হলো। এরপর পর্যায়ক্রমে পদার্থ, রসায়ন, শান্তি ও অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে। এ বছর রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি সাহিত্যের নোবেল পুরস্কার স্থগিত করেছে।