পুরো গ্রামই যখন হোটেল

পাহাড়ের ওপর অবস্থিত দেড়–দুই শ বছরের পুরোনো গ্রামটিকে হোটেল বানানো হচ্ছে।
পাহাড়ের ওপর অবস্থিত দেড়–দুই শ বছরের পুরোনো গ্রামটিকে হোটেল বানানো হচ্ছে।

সুইজারল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলের ভেরজাসকা উপত্যকার একটি ছোট্ট গ্রাম কোরিপ্পো। ঠিক যেন রূপকথার বই থেকে তুলে নিয়ে পাহাড়ের সানুতলে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে গ্রামটিকে। কিন্তু এর বাসিন্দাদের জীবনের বাস্তবতা আর ‘রূপকথার গল্পের’ বাস্তবতা এখন এক নয়। গ্রামময় খেলে বেড়াবে উচ্ছল একদল শিশু, আর বয়স্করা বইয়ে দেবেন খেতে শস্যের বন্যা—গ্রামটির বাসিন্দাদের চোখে এই ছবি এখন যেন সুদূর কল্পনাতেও আর আসে না। জনসংখ্যা কমতে কমতে গ্রামটি ধীরে ধীরে ‘ভূতের গ্রামে’ পরিণত হতে যাচ্ছে। সুইজারল্যান্ডের ক্ষুদ্রতম এই পৌনসভাটিতে এখনো ৭০টি বাড়ি রয়েছে। কিন্তু ৭০ ঘর মিলে লোকসংখ্যা মাত্র ১২! এই ১২ জনের ১১ জনেরই বয়স ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে। সাধে কি আর ‘ভূতের গ্রাম’ বলা!

একসময় এই গ্রামের বাসিন্দা ছিল ৩০০-এর বেশি। সে দেড়-দুই শ বছর আগের কথা। তাদের জীবিকাও ছিল কৃষিনির্ভর। জনশূন্য হওয়ার জোয়ার গ্রামটিতে বাসিন্দাদের উপার্জনের একমাত্র পথ এখন ‘ওস্টেরিয়া’(গ্রাম্য রেস্তোরাঁ) চালানো। সুইজারল্যান্ডের এই অঞ্চল মূলত ইতালীয় ভাষাভাষী–অধ্যুষিত। লোকার্নো শহর এখান থেকে বেশি দূরে নয়। কোরিপ্পোর বাড়িগুলোর বিশেষত্ব হলো, দুই শ বছরে এগুলোয় কেউ হাত দেয়নি। একেবারে দুই শ বছর আগের গ্রামীণ আবহ এখনো অবিকৃত গ্রামটিতে। বাড়িগুলোর ছাদ স্লেটের টাইলসে গড়া। স্থানীয় টিচিনো গ্রানাইটে সেসব স্লেট তৈরি। আর দেয়াল থেকে বাকি সবকিছু পাথরের। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গ্রামটি এখন বিলুপ্তির পথে।

এ থেকে বাঁচাতে এবার এগিয়ে এসেছে একটি স্থানীয় সংগঠন। ফোন্দাৎসিওনে কোরিপ্পো ১৯৭৫ নামের এই সংগঠনটি এক অভিনব প্রকল্প নিয়ে এসেছে গ্রামটির শত বছরের ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করতে। পুরো গ্রামটি একটি হোটেলে পরিণত করবে তারা। পর্যটকদের আনাগোনায় একই সঙ্গে জনারণ্য আর অর্থনীতি চাঙা—দুটোই হলো।

এই হোটেল গড়ে তোলার ভাবনা ধার করা হয়েছে ইতালির ‘আলব্যার্গো ডিফুজো’ নামক পর্যটন ধারণা থেকে। ইতালির শত বছরের ঐতিহ্যে জড়ানো গ্রামগুলোতে গত শতকের ৮০-র দশকে গড়ে তোলা হয় আলব্যার্গো ডিফুজো হোটেল ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থায় পর্যটকেরা গ্রামের সত্যিকারের বাসিন্দাদের আতিথেয়তা লাভ করে, তাঁদেরই বাড়িঘরে হোটেলের সুযোগ-সুবিধায় থাকে। আধুনিক পর্যটন হোটেলের সঙ্গে এর বড় দুটি পার্থক্য হলো, সুউচ্চ ভবনে হোটেলের কক্ষগুলো এখানে পুরো গ্রামে ছড়ানো থাকে। আর নাগরিক জীবন থেকে অনেক দূরে সত্যিকারের গ্রামীণ লোকজনের সঙ্গে কাটানোর সুযোগ ঘটে এতে। কোরিপ্পোতে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সুইজারল্যান্ডের প্রথম আলব্যার্গো হোটেল হবে।

কোরিপ্পোর ৭০টি বাড়ির মধ্যে ৩০টিতে এই মডেলের হোটেল গড়ে তোলা হবে। ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ও স্থপতি ফাবিও জাকোমাজ্জি বলেন, ‘একটি সত্যিকারের গ্রামে যেটি ১৮০০ সাল থেকে দেখতে একই রকম রয়েছে, সেখানে আমরা পর্যটকদের অবকাশ যাপনে অন্য রকম একটি অভিজ্ঞতা দিতে যাচ্ছি।’

পাহাড়ি এলাকা টিচিনোর মূল পরিবেশে পর্যটকেরা থাকার অভিজ্ঞতার পাশাপাশি পর্বতারোহণ, ঐতিহ্যবাহী স্থানগুলো দেখার সুযোগসহ স্থানীয় খাবারদাবার খেতে পারবেন এই হোটেলে। গত জুলাইয়ে পরীক্ষামূলকভাবে প্রথম কটেজ কাজা আরকদি অতিথিদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। পুরো হোটেলটি চালু হবে ২০২০ সালে।