ছত্তিশগড়-মধ্যপ্রদেশ-রাজস্থান-তেলেঙ্গানা-মিজোরাম ভোটের তফসিল ঘোষণা, ফল ১১ ডিসেম্বর

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন ভারতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ওমপ্রকাশ রাওয়াত। ছবি: সংগৃহীত
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন ভারতে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ওমপ্রকাশ রাওয়াত। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের পাঁচ রাজ্য বিধানসভার ভোটের মধ্য দিয়ে শেষ হতে চলেছে চলতি বছর। বছর শেষের এই টানটান রাজনৈতিক উত্তেজনায় মাখামাখি হয়ে শুরু হবে ২০১৯, যে বছরের এপ্রিল-মে মাসে অনুষ্ঠিত হবে লোকসভার ভোট। ভারতের নির্বাচন কমিশন শনিবার পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে।

এই পাঁচ রাজ্য হলো ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা ও মিজোরাম। এগুলোর মধ্যে ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ ১৫ বছর ধরে বিজেপির দখলে আর রাজস্থান বিজেপির দখলে গত পাঁচ বছর। তেলেঙ্গানায় ক্ষমতায় রয়েছে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্র পার্টি বা ‘টিআরএস’। পাঁচ রাজ্যের মধ্যে একমাত্র মিজোরামই রয়েছে কংগ্রেসের দখলে। এই ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই পাঁচ রাজ্য চলে গেল নির্বাচন আচরণবিধির আওতায়। কোনো রাজ্য সরকার বা রাজনৈতিক দল এই রাজ্যগুলোর জন্য কোনো নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবে না।

মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ওমপ্রকাশ রাওয়াত সংবাদ সম্মেলন ডেকে শনিবার ভোটের যে দিনক্ষণ ঘোষণা করেন, সেই অনুযায়ী প্রথম ভোট হবে ছত্তিশগড়ে। ৯০ আসন বিশিষ্ট এ রাজ্যের ভোট হবে দুই দফায়। ১২ নভেম্বর প্রথম দফায় ভোট হবে ১৮টি আসনে, দ্বিতীয় দফায় ২০ নভেম্বর ভোট হবে ৭২ আসনে । এই রাজ্যের দক্ষিণের বিস্তীর্ণ এলাকায় মাওবাদীদের উপস্থিতির কারণেই এই ব্যবস্থা। পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল ঘোষিত হবে ১১ ডিসেম্বর।

ছত্তিশগড় ছাড়া বাকি চার রাজ্যে ভোট হচ্ছে এক দফায়। ২৩০ আসনবিশিষ্ট মধ্যপ্রদেশ ও ৪০ আসনের মিজোরামে ভোট হবে ২৮ নভেম্বর। রাজস্থান ও তেলেঙ্গানায় ৭ ডিসেম্বর। এই দুই রাজ্যের বিধানসভার আসনসংখ্যা যথাক্রমে ২০০ ও ১১৯।

নির্বাচনী নির্ঘণ্ট ঘোষণাও রাজনৈতিক বিতর্কের ঊর্ধ্বে উঠতে পারল না। নির্বাচন কমিশন আগে জানিয়েছিল, শনিবার দুপুর ১২টায় দিনক্ষণ ঘোষণা করা হবে। কিন্তু সময় বদলে তা করা হয় বেলা ৩ টায়। কংগ্রেসের ইঙ্গিত, সময়ের এই পরিবর্তনের কারণ রাজস্থানের আজমির শরিফে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির জনসভা। দুপুর ১২টায় নির্বাচনী তফসিল ঘোষিত হয়ে গেলে বেলা একটায় মোদি জনসভায় কিছু ঘোষণা করতে পারতেন না।

ভারতের নির্বাচন কমিশন শনিবার পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের নির্বাচন কমিশন শনিবার পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করেছে। ছবি: সংগৃহীত

পাঁচ রাজ্যের এই ভোটের ফলাফল লোকসভা ভোটের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যস্ত কংগ্রেস যেমন এই বিধানসভা ভোটে ভর দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে চাইছে, তেমনই শাসক বিজেপি চাইছে দ্বিতীয়বারের জন্য কেন্দ্রে একার শক্তিতে ক্ষমতা দখল করতে। এই দুই প্রধান দলের কাছেই তাই এই পাঁচ রাজ্য বিধানসভার ভোট তাৎপর্যপূর্ণ। বিশেষ করে রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়। এই তিন রাজ্যেই বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেস।

রাজস্থানে পাঁচ বছর অন্তর শাসক দলের বদল ঘটে। গত ভোটে এই রাজ্যের মোট ২০০ আসনের মধ্যে বিজেপি দখল করেছিল ১৬৩ আর কংগ্রেস মাত্র ২১। মধ্যপ্রদেশের মোট ২৩০ আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ১৬৫, কংগ্রেস ৫৮। ছত্তিশগড়ে ৯০ আসনের মধ্যে বিজেপির দখলে ছিল ৪৯, কংগ্রেসের ৩৯। মিজোরামের মোট আসন ৪০। কংগ্রেস পেয়েছিল ৩৪টি। দেশের উত্তর-পূর্বে একমাত্র এই রাজ্যটিই রয়েছে কংগ্রেসের দখলে।

দাক্ষিণাত্যের তেলেঙ্গানা রাজ্য গঠিত হয় অবিভক্ত অন্ধ্র প্রদেশ বিধানসভার ২০১৪ সালের ভোটের পর। সেই ভোটে তেলেঙ্গানা অঞ্চলের মোট ১১৯টি আসনের মধ্যে টিআরএস জিতেছিল ৬৩টিতে। কংগ্রেস পেয়েছিল ২১ ও তেলেগু দেশম পার্টি ১৫ আসন। নবগঠিত রাজ্যে সরকার গড়ে টিআরএস। ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের সঙ্গেই হওয়ার কথা ছিল এই রাজ্যের বিধানসভার ভোট। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রশেখর রাও আগেই বিধানসভা ভেঙে বছর শেষে ভোট গ্রহণের সুপারিশ করেন।