সিডনিতে মন্দিরে ভাঙচুর

সিডনির রিজেন্টস পার্কে হামলার পর একটি মন্দির। ছবি: সংগৃহীত
সিডনির রিজেন্টস পার্কে হামলার পর একটি মন্দির। ছবি: সংগৃহীত

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির রিজেন্টস পার্কে দুর্বৃত্তরা হিন্দু সম্প্রদায়ের ভারতীয় মন্দিরে হামলা চালিয়েছে। মন্দিরের প্রায় ৩০টি প্রতিমা ধ্বংস করার পর তাতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। কে বা কারা কেন এই হামলা চালিয়েছে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গতকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করতে পুলিশ জোর তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ার বিভিন্ন মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতারা বিবৃতিতে বলছেন, এ ধরনের ধর্মীয় উৎপীড়ন অস্ট্রেলিয়া কখনোই মেনে নেবে না। অস্ট্রেলিয়ার মতো বহুজাতিক দেশে এ ধরনের ঘটনায় শঙ্কিত ধর্মীয় বিভিন্ন কমিউনিটি।

গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে পূজা করতে মন্দিরে পৌঁছান ভারতীয় মন্দিরের প্রধান পূজারি পণ্ডিত পরাশ রাম মহারাজ। মন্দির থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে তিনি প্রথমে ভাবেন, তাঁকে ছাড়াই কেউ পূজা শুরু করে দিয়েছে কি না। চটজলদিই তিনি দেখতে পান মন্দিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন নারী ভেতর থেকে ছুটে আসছেন। তিনি জানান, তাঁকে দেখে ভেতরে অবস্থানরত তিন–চারজন যুবক পেছনের জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়।

মন্দিরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওই নারী বলেন, ‘আমি দেখলাম বেশ অনেক জায়গায় আগুন জ্বলছে। মন্দিরের ভেতরটা তছনছ হয়ে আছে। কেউ প্রথম দেখায় বলতেই পারবে না—এটা একটা মন্দির ছিল।’

জরুরি সেবার জন্য কল করা হলে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পুলিশ মন্দিরটি জনসাধারণের জন্য নিষিদ্ধ করে দেয় এবং রাত দুইটা পর্যন্ত ফরেনসিক পরীক্ষা চালায়। তদন্তের কোনো প্রতিবেদনই এখনো জনসমক্ষে প্রকাশ করা হয়নি। তদন্তের কাজ এখনো চলছে বলে জানিয়েছে রাজ্য পুলিশ।

সকাল থেকে অস্ট্রেলিয়াজুড়ে এ দুর্ঘটনার খবর ফলাও করে প্রকাশিত হয়। হিন্দুদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান নবরাত্রির সময়ই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটে। এই উৎসবের পূজার কাজ চালিয়ে যেতে জনসাধারণের অনুদানে ভারতীয় মন্দিরের পেছনেই অস্থায়ী মন্দির স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিদিন মন্দিরটিতে প্রায় ২৫০ জন সদস্য পূজা করতে আসেন। রিজেন্ট পার্কের ভারতীয় মন্দিরটি প্রায় ২০ বছর ধরে পরিচালিত হচ্ছে।

অস্ট্রেলিয়ায় এই হামলার ঘটনায় দেশটির বিভিন্ন মন্ত্রী ও রাজনৈতিক নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অস্ট্রেলিয়ার অভিবাসন, নাগরিকত্ব এবং বহুসংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী ডেভিড কোলম্যান এ ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘একটি সম্প্রদায়ের ধর্মীয় সমাবেশের কেন্দ্রস্থলে ধ্বংসাত্মক হামলা হওয়াটা দুঃখজনক। এ ধরনের কার্যকলাপ অস্ট্রেলিয়ার সমাজব্যবস্থার বিরুদ্ধে।’ তিনি আরও বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার বহু সংস্কৃতি ও অভিবাসন ইতিহাসের জন্য সমৃদ্ধ। অভিবাসন থেকে গড়ে ওঠা একটি দেশ হিসেবে, অস্ট্রেলিয়ার সরকার সব সময়ই সহনশীল, শ্রদ্ধাশীল এবং সমন্বিত দেশের মৌলিক নীতিতে সমর্থন করে।’

দেশটির নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের বহুজাতিক সংস্কৃতিমন্ত্রী রে উইলিয়ামস তাঁর দেওয়া বিবৃতিতে বলেন, ‘নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্য সরকার কখনোই সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় তাত্পর্যবিষয়ক অপবিত্রতা সহ্য করবে না, যা আমাদের বহু সংস্কৃতির সম্প্রদায়গুলোর সমন্বয়ের জন্য হুমকিস্বরূপ।’

নিউ সাউথ ওয়েলসের বিরোধীদলীয় নেতা লুক ফোলি বলেন, ‘আমি রিজেন্টস পার্কের ভারতীয় হিন্দু মন্দিরের ওপর ভয়ানক ও ঘৃণ্য হামলার তীব্র নিন্দা করছি। এটি শান্তিপূর্ণ অস্ট্রেলীয়দের বিরুদ্ধে একটি অপরাধ। যারা এ ধরনের অপরাধ করেছে, তাদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা হোক।’

ক্যাম্বারল্যান্ড কাউন্সিলের বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কাউন্সিলর সুমন সাহা জানান, এ ঘটনায় অস্ট্রেলিয়ার সব হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশ্বাসে আঘাত লেগেছে। প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘এই মন্দিরটি আমার ক্যাম্বারল্যান্ড কাউন্সিলের মধ্যে অবস্থিত। খবর পেয়ে আমাদের কাউন্সিলের মেয়রকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে যাই। যা হয়ে গেছে, তা খুবই দুঃখজনক। আমাদের মন ভেঙে দেওয়ার মতো। দেখে আমার চোখের জল লুকাতে পারিনি। পুলিশ এখনো তদন্ত করছে। তবে এখন আমরা মন্দিরটি দ্রুত কীভাবে আবার পুনর্গঠন করতে পারি, সেটা করছি। এর মধ্যে আশপাশে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে।’