সম্পর্কের নতুন দিগন্ত

পতাকা উড়িয়ে বাসের যাত্রীদের বিদায় জানাচ্ছেন তিন নেতা নরেন্দ্র মোদি, শেখ হাসিনা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গতকাল উদ্বোধন করা হয় ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি এবং কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস চলাচল l ছবি: বাসস
পতাকা উড়িয়ে বাসের যাত্রীদের বিদায় জানাচ্ছেন তিন নেতা নরেন্দ্র মোদি, শেখ হাসিনা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গতকাল উদ্বোধন করা হয় ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি এবং কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস চলাচল l ছবি: বাসস

চুয়াত্তরের সীমান্ত চুক্তির সুরাহার পর বাংলাদেশ সফরকে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত মনে করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর মতে, ভারতের সংসদে সর্বসম্মতভাবে সীমান্ত চুক্তির অনুমোদন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে তাঁর দেশের ঐকমত্যের প্রতিফলন। সীমান্ত সমস্যার সমাধানের ফলে দুই দেশের সীমান্ত আরও নিরাপদ হবে। সেখানকার জনগণের জীবনকে অনেক স্থিতিশীল করে তুলবে।
সীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের দলিল হস্তান্তর এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের পর গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় দেওয়া বক্তব্যে নরেন্দ্র মোদি এ মন্তব্য করেন।
তাঁর আগে দেওয়া বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। আমরা যৌথভাবে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে নতুন সম্ভাবনার যুগে ও অধিকতর উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছি। কিছুক্ষণ আগে আমরা স্থলসীমান্ত চুক্তি ১৯৭৪-এর অনুসমর্থনের পত্র বিনিময় করেছি। এর মাধ্যমে ৬৮ বছরের মানবিক সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান হওয়ায় আমরা আনন্দিত।’
শেখ হাসিনা বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি এবং আমি একমত যে কানেকটিভিটি (যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা) শুধু দুই দেশের জন্য নয়, এই অঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। দুই পক্ষই পরস্পরের উদ্বেগ ও অগ্রাধিকার বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সবগুলো বিষয় নিয়ে আমাদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।’
গতকাল দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দুই প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীদের শীর্ষ বৈঠকের আগে কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা ও ঢাকা-শিলং-গুয়াহাটি বাস সার্ভিস চালু হয়। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রী একান্তে বৈঠক করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হক ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব এস জয়শঙ্কর সীমান্ত চুক্তির অনুসমর্থনের দলিল ও সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের কর্মপ্রক্রিয়ার সম্মতপত্র বিনিময় করেন। এরপর দুই প্রধানমন্ত্রী উপহারসামগ্রী ও ঐতিহাসিক স্মারক বিনিময় করেন। আর শীর্ষ বৈঠকের পর দুই প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সীমান্ত চুক্তির দুই দলিলসহ ২২টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও সম্মতপত্র সই হয়। দুই প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার মধ্য দিয়ে সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিক বৈঠক শেষ হয়।

গতকাল সকালে দুই দিনের সফরে ঢাকায় আসেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সকাল ১০টার পর শাহজালাল বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিমানবন্দরে লালগালিচা সংবর্ধনার পর নরেন্দ্র মোদি সরাসরি সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। সেখান থেকে যান ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। দুপুরে তিনি সোনারগাঁও হোটেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যান।
স্থলসীমান্ত চুক্তির সমাধান যে দুই নিকট প্রতিবেশীর সহযোগিতার জন্য এক সন্ধিক্ষণ, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। দীর্ঘ চার দশকেরও বেশি সময় ধরে অমীমাংসিত চুক্তিটির বাস্তবায়ন নিয়ে শেষ মুহূর্তে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। ফলে নরেন্দ্র মোদির এ সফরটি প্রত্যাশিত ছিল।
২০১১ সালে মনমোহন সিংয়ের কংগ্রেস সরকার চুক্তিটি বাস্তবায়নের জন্য আন্তরিক থাকলেও অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটের কারণে শেষ পর্যন্ত সফল হতে পারেনি। যেই বিজেপি আজ সর্বসম্মতভাবে চুক্তিটি বাস্তবায়নের কৃতিত্ব নিচ্ছে, ওই সময় দলটিই হয়ে দাঁড়িয়েছিল চুক্তিটির পথের সবচেয়ে বড় বাধা। এমনকি বিজেপি নিজে ও অন্য বিরোধী দলকে নিয়ে লোকসভায় কংগ্রেসকে বিলটি ওঠাতেই দেয়নি। বলে রাখা ভালো, বাংলাদেশ চুয়াত্তরে চুক্তিটি সই করে অনুসমর্থন করলেও গত চার দশকে ভারত সরকারের কারণে সীমান্ত চুক্তি ঝুলে ছিল।
গত বছর নির্বাচনের পর ভারতে ক্ষমতার পালাবদল ঘটলে সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন নিয়ে নতুন করে শঙ্কা দেখা দেয়। কারণ, কংগ্রেসের বিদায়ে বিজেপির ক্ষমতায় আসাটা দুই দেশের সাম্প্রতিক উষ্ণতায় ভাটা পড়বে কি না, তা নিয়ে প্রাথমিকভাবে কিছুটা সংশয়ে পড়েছিল আওয়ামী লীগ। তা ছাড়া বিজেপির ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির উচ্ছ্বাসও আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তি তৈরি করেছিল। এ ছাড়া বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, বিশেষ করে ৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনে সমর্থন ছিল কংগ্রেসের। সেখানে ভারতের নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের রসায়ন আওয়ামী লীগকে কিছুটা হলেও চিন্তায় ফেলেছিল। গত বছরের জুনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ঢাকায় এসে আওয়ামী লীগের সব সংশয় আর অস্বস্তি দূর করে দেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ও নভেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দুই দফা বৈঠকের পর সীমান্ত চুক্তি সুরাহার ব্যাপারে নরেন্দ্র মোদি বেশ জোরালো আশ্বাস দিয়েছিলেন। যদিও শেষ মুহূর্তে আসামকে বাদ দিয়ে সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য বিজেপির ভারতের সংবিধান সংশোধনের চেষ্টার ফলে নতুন করে এ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এ সময় বলা হয়, আসামকে বাদ দিলে সীমান্ত চুক্তির বিলে বিরোধিতা করা হবে। শেষ পর্যন্ত বিজেপি পিছু হটে। গত মে মাসে সর্বসম্মতভাবেই ভারতের রাজ্যসভা ও লোকসভায় বিলটি পাস হয়। দুই দেশের সহযোগিতার ক্ষেত্রে নতুন দুয়ার উন্মোচিত হয়।
এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে, ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর দুই দেশের নিরাপত্তা সহযোগিতা বিশেষ একটি পর্যায়ে পৌঁছেছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় না দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের জোরালো অবস্থান এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। ভারতও এ নিয়ে সব সময় বাংলাদেশের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করে আসছে। সীমান্ত চুক্তির মতো দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত সমস্যার সমাধানে এটি একটি বড় ভূমিকা রেখেছে বলে কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।
দুই প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা: নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আজ আমরা দুটি বাস সার্ভিসের উদ্বোধন করেছি, যা সহজে দুই দেশের মানুষের মাঝে সংযোগ প্রতিষ্ঠা করবে, দুই দেশকে আরও ঘনিষ্ঠ করবে। আমাদের মাঝে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে পেয়ে ধন্য মনে করছি। এ দুটি ঘটনা আমাদের অভিন্ন মূল্যবোধ ও অবিচ্ছেদ্য গন্তব্যের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশে প্রথম সফরটি আমার জন্য বিশেষ এক মুহূর্ত। এখানে অসংখ্য মানুষের শুভকামনায় আমার ব্যক্তিগত অভিযাত্রা ঋদ্ধ হয়েছে। আমরা শুধু প্রতিবেশীই নই, আমরা দুটি জাতি, যাদের সম্পর্ক ইতিহাস, ধর্ম, সংস্কৃতি, ভাষা, আত্মীয়তা এবং অবশ্যই ক্রিকেটের প্রতি ভালোবাসার সুতোয় গাঁথা।’
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমাদের অভিন্ন সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের আবেগের বন্ধন রয়েছে, যা আমাদের দুই দেশকে সার্বভৌম ও সমান জাতি হিসেবে এক জায়গায় এনেছে। এখন আমরা সফলভাবে সড়কের সঙ্গী থেকে উন্নয়নের পথে চলেছি। তাই ভবিষ্যৎ ভারত নিয়ে আমি যে স্বপ্ন দেখি, বাংলাদেশ নিয়ে আমার একই ধরনের শুভকামনা রয়েছে।’
তাঁর মতে, দুই দেশ রাজনৈতিকভাবে যত বেশি যুক্ত হবে, নিজেদের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য বিনিময় করবে, অর্থনীতি আরও সম্পৃক্ত হবে, লোকজন ভালোভাবে যুক্ত হবে, দুই দেশ আরও সমৃদ্ধ হবে। নরেন্দ্র মোদি বলেন, এটি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য নতুন অর্থনৈতিক দুয়ার খুলে দেবে। এটি দুই দেশকে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে সমন্বিত হতে সহযোগিতা করবে, বৈচিত্র্যময় পুবের সঙ্গে যুক্ত করবে।
মোদি বলেন, ‘সার্কের স্বপ্ন বাংলাদেশের একটি উপহার। আমরা জাতিসংঘের সবচেয়ে বেশি সেনা মোতায়েনকারীদের মধ্যে রয়েছি। আমরা আমাদের অঞ্চল ও সমুদ্রকে আরও নিরাপদ ও সমৃদ্ধ করে তুলতে পারি। তাই এ সম্পর্ক আমাদের কাছে এবং আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে এ সফরটি হচ্ছে। স্বাধীনতার সময় থেকে একটি অমীমাংসিত সমস্যার আমরা সমাধান করেছি। দুই দেশ সীমানার বিষয়টি সুরাহা করেছে। এটি আমাদের সীমান্তকে আরও নিরাপদ এবং আমাদের জনগণের জীবনকে অনেক স্থিতিশীল করে তুলবে। আমাদের সংসদে সীমান্ত চুক্তির অনুমোদন বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে ঐকমত্যের প্রতিফলন।’
মোদি বলেন, ‘গত বছর সমুদ্রসীমার বিরোধ নিষ্পত্তি আমরা মেনে নিয়েছি। এটি সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের পরিপক্বতা ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারের বহিঃপ্রকাশ। কাজেই আমাদের সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিপুল এক সম্ভাবনার সামনে এসে দাঁড়িয়েছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আমি এটি স্বীকার করি। আমরা আমাদের বিপুল সম্ভাবনার সুফল কাজে লাগাতে একসঙ্গে কাজ করব। আর দুই দেশ বন্ধুত্বের আদর্শ ও পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করব। আমাদের চুক্তিগুলো এই স্বপ্ন ও অঙ্গীকার তুলে ধরছে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল চুক্তি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াবে। আর ভারতের জন্য বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ বাড়াবে। সামুদ্রিক অর্থনীতি ও সামুদ্রিক সহযোগিতার চুক্তি অর্থনৈতিক সম্ভাবনার নতুন ক্ষেত্র উন্মোচন করেছে। সহযোগিতার ক্ষেত্র মহাকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি।

হাসিনা–মোদি শীর্ষ বৈঠকে ২২টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই

মোদি বলেন, ‘ভারতের রপ্তানির জন্য ২৫টি ছাড়া সব পণ্যে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দেওয়ার পর দুই দেশের বাণিজ্যে বিপুল বৈষম্যের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত রয়েছি। তারপরও বৈষম্য কমাতে আমি সম্ভাব্য সবকিছু করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বস্ত করেছি। বাংলাদেশে ভারতীয় বিনিয়োগ সহায়ক ভূমিকা রাখবে। সীমান্তসহ বাণিজ্য আরও অবাধ ও সহজ করতে আমি চেষ্টা চালাব। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণের চুক্তি এ লক্ষ্যেই হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেন, আগামী দুই বছরের মধ্যে ভারত থেকে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ৫০০ মেগাওয়াট থেকে বেড়ে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট হবে। বিদ্যুৎ খাতে দুই দেশের আরও কিছু করার আছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাপকভাবে যুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে যোগাযোগ হচ্ছে অনুঘটক। ভারতের পূর্বাঞ্চলে বিদ্যুৎ উৎপাদনের যন্ত্রপাতি ও খাদ্যশস্যের ট্রানজিট দিতে বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত মানবিক মূল্যবোধ ও অভিন্ন অর্থনৈতিক সুযোগের প্রতিবিম্ব। সড়ক, রেল, নৌপথ, সমুদ্র, সঞ্চালন লাইন, পেট্রোলিয়ামের পাইপলাইনে যোগাযোগ ও ডিজিটাল সংযোগ বাড়বে। ভবিষ্যতের পথে আমরা আজ কিছু পথ তৈরি করেছি। আগে যেটি বলেছি, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত ও নেপালের মধ্যে আমরা আঞ্চলিক যোগাযোগ ও সহযোগিতা আরও নিবিড় করব।’
দুই দেশের উন্নয়ন সহযোগিতা নতুন পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। ঋণচুক্তির ৮০ কোটি ডলারের দ্রুত বাস্তবায়ন এবং ২০ কোটি ডলার মঞ্জুরি দ্রুত ছাড় দুই দেশের সহযোগিতার নিদর্শন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অবকাঠামোগত এবং অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে আরও ২০০ কোটি ডলারের নতুন ঋণসহায়তা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘আমি নিশ্চিত, অবৈধ কর্মকাণ্ড, চোরাচালান এবং এর তৎপরতা রোধে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও সমন্বয় আরও বাড়াতে দুই দেশের রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও পারস্পরিক আস্থা রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের নদীগুলোর আমাদের সম্পর্কের প্রতিপালক হওয়া উচিত, বিরোধের উৎস নয়। সবকিছুর ওপরে পানি বণ্টন একটি মানবিক ইস্যু। এটি সীমান্তের দুই পাড়ের জীবন ও জীবিকার ওপর প্রভাব ফেলে।’
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সীমান্ত চুক্তির মাধ্যমে আমরা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধা দেখিয়েছি। আমি নিশ্চিত, ভারতের রাজ্য সরকারগুলোর সহযোগিতা নিয়ে আমরা তিস্তা ও ফেনীর নদীর ন্যায্য সমাধানে পৌঁছাতে পারব। নদী পুনঃখনন ও নদীর পানিকে দূষণমুক্ত রাখতে আমাদের একসঙ্গে কাজ করা উচিত।’
বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি তাঁর দেশের শুভকামনা জানিয়ে নরেন্দ্র মোদি বলেন, ‘অনেক চ্যালেঞ্জের পর বাংলাদেশের অগ্রগতি ভারতের জনগণকে মুগ্ধ করে। আমরা আপনার ২০২১ ও ২০৪১ সালের লক্ষ্য অর্জনের সাফল্য কামনা করি। বাংলাদেশের সাফল্য এই অঞ্চল এবং পৃথিবীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। আর এতেই আমাদের অংশীদারত্বের সাফল্য। তরুণেরাই আমাদের দুই দেশের লক্ষ্য নির্ধারক। তাদের কাছে সম্পর্ককে নতুন পর্যায়ে উন্নীত করা এবং নতুন নির্দেশনা তুলে ধরা আমাদের কর্তব্য। আমি বিশ্বাস করি, আজ আমরা সেটা করতে পেরেছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, উপকূলীয় নৌ-চলাচল চুক্তি, বাণিজ্য চুক্তির নবায়ন, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন প্রটোকলের স্বাক্ষর এবং এর সঙ্গে সঙ্গে নতুন বাস সেবার উদ্বোধন এই অঞ্চলে নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ প্রতিষ্ঠার প্রতি অঙ্গীকারের দৃষ্টান্ত। এর মধ্য দিয়েই এই অঞ্চলের জনগণের জন্য একটি বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থা নিয়ে আসা সম্ভব। চুক্তিগুলোতে যেসব নতুন বিষয় সন্নিবেশিত হয়েছে, এর মাধ্যমে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও ব্যবসার প্রসারে নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারত আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশ এবং একই সঙ্গে আমরা পরস্পরের উন্নয়ন সহযোগী। আজকের এই অপরাহ্ণে আমাদের মধ্যে খুবই ফলপ্রসূ দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হয়েছে। আমাদের আলোচনা ছিল গঠনমূলক। আমরা পরস্পরের উদ্বেগ এবং অগ্রাধিকার বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয় নিয়েই আমাদের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সীমান্ত শান্তিপূর্ণ রাখা এবং এ বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আমরা আমাদের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছি। সন্ত্রাসবাদ ও চরমপন্থার বিরুদ্ধে “জিরো টলারেন্স” নীতির বিষয়ে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমরা উভয় দেশের ৫৪টি অভিন্ন নদীর ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে একসঙ্গে কাজ করার বিষয়ে আলোচনা করেছি।’