গণহত্যায় দোষী দুই খেমাররুজ নেতা

খেমাররুজের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান খিউ সামফান (৮৭) ও ‘ব্রাদার নাম্বার টু’ নামে পরিচিত নুয়ান চিয়া (৯২)। ছবি: এএফপি।
খেমাররুজের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান খিউ সামফান (৮৭) ও ‘ব্রাদার নাম্বার টু’ নামে পরিচিত নুয়ান চিয়া (৯২)। ছবি: এএফপি।

কম্বোডিয়ার খেমাররুজ শাসনামলের শীর্ষ দুই নেতাকে গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছে। দেশের রোমহর্ষক 'কিলিং ফিল্ডস' যুগের চার দশক পরও দুই শীর্ষ খেমাররুজ নেতাকে অভিযুক্ত করা হলো। প্রায় ৪০ বছর আগে বর্বর গণহত্যার দায়ে আজ শুক্রবার তাঁদের আদালতে দোষী সাব্যস্ত করার হয়েছে বলে এএফপির এক খবরে বলা হয়েছে।

অভিযুক্ত ওই দুজন হলেন খেমাররুজের সাবেক রাষ্ট্রপ্রধান খিউ সামফান (৮৭) ও ‘ব্রাদার নাম্বার টু’ নামে পরিচিত নুয়ান চিয়া (৯২)। কম্বোডিয়ার নিন্দিত খেমাররুজ শাসনামলের জীবিত নেতাদের মধ্যে নিওন চিয়াই সবচেয়ে বয়স্ক। এ ছাড়া ওই আমলের আরেক শীর্ষ নেতা খিউ সামফানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।

কম্বোডিয়ায় সত্তরের দশকের খেমাররুজ সরকারের ওই শাসন আমলকে বর্বর শাসনামল বলা হয়। এর নেতৃত্বে ছিলেন ব্রাদার নাম্বার ওয়ান বলে পরিচিত পল পট। লাখ লাখ কম্বোডীয়কে হত্যা বা ক্রীতদাসে পরিণত করার কর্মকাণ্ডের হোতা ছিলেন তিনি।

আজ শুক্রবার আদালতের দেওয়া রুলে ওই গণহত্যার বিষয়টি প্রথম স্বীকার করে নেওয়া হলো।

মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত কম্বোডিয়ার সাবেক নেতা খিউ সামফান ও নুয়ান চিয়ার বিরুদ্ধে ২০১১ সালে গণহত্যার মামলার বিচার শুরু করেন জাতিসংঘ-সমর্থিত কম্বোডিয়ান ট্রাইব্যুনাল। ১৯৭৫ সালের এপ্রিল মাসে নমপেনে বর্বরতা চালানোর অভিযোগে ওই দুজনকে ২০১৪ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

মার্ক্সবাদী নেতা পল পটের নেতৃত্বে ১৯৭৫ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত কম্বোডিয়াকে শাসন করেছিল খেমাররুজ। এই সময় শহরের লাখ লাখ মানুষকে গ্রামাঞ্চলে পাঠিয়ে কৃষিকাজ করতে বাধ্য করে শাসকগোষ্ঠী। গণহত্যা, নির্যাতন, অনাহার, রোগ-জরা ও অতি শ্রমের কারণে প্রায় ২০ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। ষাটের দশকে কম্বোডিয়ায় খেমাররুজের উত্থান। শুরুতে এটা ছিল কমিউনিস্ট পার্টি অব কম্পুচিয়ার (কম্বোডিয়ার কমিউনিস্টদের ব্যবহার করা নাম) সশস্ত্র শাখা।

১৯৭০ সালে ডানপন্থীদের সামরিক অভ্যুত্থানে রাষ্ট্রপ্রধান প্রিন্স নরোদম সিহানুক উৎখাত হওয়ার পর পরিস্থিতির মোড় ঘুরে যায়। খেমাররুজ তখন সিহানুকের সঙ্গে রাজনৈতিক জোট করে। পাঁচ বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলাকালে খেমাররুজ প্রথমে ধীরে ধীরে দেশের গ্রামাঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ পোক্ত করে। চূড়ান্তভাবে ১৯৭৫ সালে রাজধানী নমপেন তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

খেমাররুজ নেতা পল পট ক্ষমতায় আসার পর কম্বোডিয়াকে কৃষিনির্ভর ‘ইউটোপিয়া’ রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার মিশন শুরু করেন। তিনি ঘোষণা দেন, দেশ ‘শূন্য বছর’ থেকে ফের যাত্রা শুরু করবে। তিনি দেশের জনগণকে বাকি বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে শহরগুলো খালি করার উদ্যোগ নেন। তিনি মুদ্রার ব্যবহার, ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং ধর্মপালন নিষিদ্ধ করেন। প্রতিষ্ঠা করেন গ্রামীণ যৌথ খামার।

শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির লাখ লাখ মানুষকে বিশেষ কেন্দ্রে নিয়ে নির্যাতন ও হত্যা করা হতো। এর মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত কেন্দ্রটির নাম ছিল এস-২১ কারাগার, যার অবস্থান ছিল নমপেনে।

খেমাররুজের চূড়ান্তভাবে পতন হয় ১৯৭৯ সালে। ভিয়েতনামের সঙ্গে সীমান্তে একের পর এক সংঘাতের পর ওই বছর ভিয়েতনামের সেনারা কম্বোডিয়া আক্রমণ করলে খেমাররুজের শীর্ষস্থানীয় নেতারা গা ঢাকা দেন। ধীরে ধীরে সংগঠনটি দুর্বল হয়ে পড়ে।