ব্রেক্সিট চুক্তি বাঁচাতে মরিয়া থেরেসা মে

মন্ত্রিসভার ভাঙন এবং সংসদে এমপিদের তুমুল বিরোধিতা সত্ত্বেও সম্পাদিত খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তির পক্ষে অবিচল যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ছবি: এএফপি
মন্ত্রিসভার ভাঙন এবং সংসদে এমপিদের তুমুল বিরোধিতা সত্ত্বেও সম্পাদিত খসড়া ব্রেক্সিট চুক্তির পক্ষে অবিচল যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ছবি: এএফপি

মন্ত্রিসভার ভাঙন এবং সংসদে এমপিদের তুমুল বিরোধিতা সত্ত্বেও সম্পাদিত খসড়া ব্রেক্সিট (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদ) চুক্তির পক্ষে অবিচল যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। চুক্তির পক্ষে সমর্থন আদায়ে তিনি মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন।

নেতৃত্ব নিয়ে চরম অনিশ্চয়তার মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে হাজির হন থেরেসা মে। খসড়া চুক্তির পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেন, নিজের শরীরের সমস্ত অস্থিমজ্জা দিয়ে তিনি বিশ্বাস করেন যে, এটি সর্বোচ্চ কল্যাণকর চুক্তি। এর শেষ না দেখে হাল ছাড়বেন না বলে জানিয়ে দেন মে। আজ শুক্রবার ভোরবেলা রাজনৈতিক আলোচনার জন্য তিনি হাজির হন জনপ্রিয় রেডিও স্টেশন এলবিসিতে। সেখানে শ্রোতাদের সরাসরি প্রশ্নের জবাব দেন মে।

দীর্ঘ প্রায় দুই বছর সমঝোতার পর ইইউ থেকে বিচ্ছেদ প্রশ্নে একটি খসড়া চুক্তিতে সম্মত হয় উভয় পক্ষ। কিন্তু এই চুক্তি যুক্তরাজের স্বার্থবিরোধী বলে আপত্তি উঠেছে। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দল থেকেই বিরোধিতা হচ্ছে বেশি।

এদিকে খসড়া চুক্তির বিরোধিতা করে বৃহস্পতিবার ব্রেক্সিট-বিষয়ক মন্ত্রী ডোমিনিক রাবসহ মন্ত্রিসভা থেকে পাঁচজনের পদত্যাগের পর আরও দুজন পদত্যাগ করেছেন। তাঁরা হলেন ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দলের ভাইস চেয়ারম্যান রেহমান চিশতি ও পার্লামেন্টারি প্রাইভেট সেক্রেটারি রনিল জয়াবর্ধনা।

২৫ নভেম্বর ইইউর বিশেষ সম্মেলনে পাস হওয়ার পর খসড়া চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার কথা। তারপর ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ইইউর সদস্য বাকি ২৭ দেশের পার্লামেন্টের অনুমোদন সাপেক্ষে চুক্তিটি কার্যকর হবে।

প্রধানমন্ত্রী মে ডিসেম্বরের শুরুতে চুক্তিটি অনুমোদনের জন্য পার্লামেন্টে তুলতে চান। তবে বিরোধী দল লেবার পার্টি, স্কটিশ ন্যাশনালিস্ট পার্টি এবং সরকারের অংশীদার ডিইউপি এ চুক্তিতে সমর্থন দেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া ক্ষমতাসীন দলের ব্রেক্সিটপন্থী অন্তত ৫১ জন এমপি এই চুক্তির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এর ফলে এই চুক্তি পাস হবে না বলেই ধারণা। সে ক্ষেত্রে বিচ্ছেদ কার্যকরের সময়সীমা পিছিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আবার সমঝোতার প্রয়োজন হতে পারে। এর বিপরীত কিছু ঘটলে আবার সাধারণ নির্বাচন এবং ব্রেক্সিট প্রশ্নে আবারও গণভোট আয়োজনের সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেউ।

জোর আলোচনা ছিল, ব্রেক্সিটপন্থী হেভিওয়েট আরও দুই এমপি—পরিবেশবিষয়ক মন্ত্রী মাইকেল গোভ এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক মন্ত্রী পেনি মরডন্ট পদত্যাগ করবেন। আজ শুক্রবার পর্যন্ত তেমন কিছু ঘটেনি। মাইকেল গোভের এক ঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, সরকার টিকিয়ে রাখার স্বার্থে তিনি মন্ত্রিসভায় থেকে চুক্তি পরিবর্তনের চেষ্টা চালাবেন।

স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর খবরে বলা হয়, মাইকেল গোভকে ব্রেক্সিট–বিষয়ক মন্ত্রী করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন মে। কিন্তু ব্রেক্সিট–মন্ত্রী হলেও তিনি ইইউর সঙ্গে পুনরায় সমঝোতা করতে পারবেন না, এমনটি জানার পর ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেন গোভ। তাই নতুন ব্রেক্সিট–বিষয়ক মন্ত্রী কে হচ্ছেন, সে দিকেই সবার কৌতূহল।

রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা বলছেন, চুক্তি সম্পাদনে ব্রেক্সিট–বিষয়ক মন্ত্রীর গুরুত্ব খুব একটা নেই। থাকলে ব্রেক্সিট–বিষয়ক সাবেক মন্ত্রী ডেভিড ডেভিস এবং ডোমিনিক রাব চুক্তির বিরোধিতা করে পদত্যাগ করতেন না।

এদিকে কনজারভেটিভ দলের ব্রেক্সিটপন্থী এমপিদের সংগঠন ‘ইউরোপিয়ান রিসার্চ গ্রুপ’—এর চেয়ারম্যান জেকব রিচ মগ গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী মের প্রতি অনাস্থা ভোট চেয়ে সংশ্লিষ্ট কমিটির (১৯২২ কমিটি) কাছে চিঠি দিয়েছেন। দলের ৪৮ এমপি এমন চিঠি দিলে অনাস্থা ভোটের মুখে পড়বেন প্রধানমন্ত্রী। তবে অনাস্থা ভোট উতরে যাওয়ার মতো যথেষ্ট সমর্থন থেরেসা মের রয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত গণভোটে যুক্তরাজ্যের ৫১ দশমিক ৯ শতাংশ ভোটার ইইউ থেকে বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দিয়েছিলেন। বিপক্ষে ছিলেন ৪৮ দশমিক ১ শতাংশ। এখন ব্রেক্সিটপন্থী ও ব্রেক্সিটবিরোধী উভয় পক্ষ থেকেই থেরেসা মের করা খসড়া চুক্তির সমালোচনা উঠেছে।