মংপুতে রবীন্দ্র জাদুঘর থেকে দুষ্প্রাপ্য স্মারক উধাও

রবীন্দ্রভবনে থাকতে বেশ কয়েকবার এসেছেন কবিগুরু। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
রবীন্দ্রভবনে থাকতে বেশ কয়েকবার এসেছেন কবিগুরু। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং জেলার মংপুতে রবীন্দ্রভবন থেকে খোয়া গেছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবাহী বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য স্মারক। এর মধ্যে কবিগুরুর লেখা চিঠি, কবিতার পাণ্ডুলিপি এবং কবির ব্যবহৃত শখের হোমিওপ্যাথি ওষুধ ও ওষুধের বোতল রয়েছে।

আজ শুক্রবার সকালে দার্জিলিং জেলার তথ্য ও সংস্কৃতি কর্মকর্তা জগদীশ রায় প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কারের অভাব আর দার্জিলিংয়ে পৃথক গোর্খাল্যান্ডের আন্দোলনের জেরে রবীন্দ্রভবন দুবছর বন্ধ ছিল। গত বছর থেকে শুরু হয় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের মাধ্যমে এর সংস্কারকাজ। ওই কাজ চলার সময় সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা কবিগুরুর স্মারকগুলো তালিকাভুক্ত করে সরিয়ে নিয়ে কাজ শুরু করেন। সম্প্রতি সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। রবীন্দ্রভবন আবার দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে দর্শনার্থীরা কবিগুরুর উল্লিখিত স্মারক না দেখে হতবাক হয়ে যান। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের কানে যায়। জগদীশ রায় বলেন, এই জাদুঘরের সংস্কারকাজে যাঁরা যুক্ত ছিলেন, তাঁরাই বলতে পারবেন, কোথায় রেখেছেন ওই সব দুষ্প্রাপ্য স্মারক।

মংপুর রবীন্দ্র ভবন থেকে খোয়া গেছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবাহী বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য স্মারক। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
মংপুর রবীন্দ্র ভবন থেকে খোয়া গেছে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবাহী বেশ কিছু দুষ্প্রাপ্য স্মারক। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

রবীন্দ্র ভবন বা জাদুঘরের কেয়ারটেকার শিশির রাহুত সাংবাদিকদের বলেছেন, গত বছর থেকে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তর এই ভবনের সংস্কার ও উন্নয়নকাজ শুরু করে। সেই সময় যাঁরা কাজ করেছেন, তাঁরাই মূলত এই সব স্মারক সরিয়ে কাজ করেন। কিন্তু কাজ সম্পন্ন হলেও সেই সব স্মারক আর যথাস্থানে রাখা হয়নি। এ ব্যাপারে তিনি আর কিছু বলতে পারছেন না। এখন এই ভবনের সংস্কারকাজ শেষ হয়েছে। জাদুঘর বা রবীন্দ্র ভবন খুলে দেওয়া হয়েছে পর্যটক ও দর্শনার্থীদের জন্য। কিন্তু উধাও হয়ে গেছে কবিগুরুর স্মৃতিবাহী নানা ঐতিহাসিক এবং দুষ্প্রাপ্য স্মারক।

দার্জিলিংয়ের ছোট্ট একটি শহর মংপু। বর্তমানে মংপু শহর কার্শিয়াং জেলার অন্তর্ভুক্ত। হিমালয়ের পাদদেশের পাহাড়ের শিখরে এই মংপুর অবস্থান। অপূর্ব নৈসর্গিক শোভা। চোখ জুড়িয়ে যায়। অদূরে সিকিম-চীন সীমান্ত নাথুলা পাস। এই শহরের শোভা দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাইতো তিনি বারবার ছুটে আসতেন এখানে। কবিগুরু প্রথম মংপুতে আসেন ১৯৩৮ সালের ২১ মে। তারপর ১৯৩৯ সালে আসেন দুবার। আর শেষ আসেন ১৯৪০ সালে। প্রতিবারই তিনি এখানে এক মাস, দুই মাস করে থেকেছেন। প্রতিবারই এই বাড়িতেই থেকেছেন তিনি। ১৯৪০ সালের জন্মদিনও পালন করেছেন তিনি এখানে। লিখেছিলেন মালতীলতা দোলে, ছেলেবেলা, নবজাতক জন্মদিনসহ নানা অসাধারণ লেখা। পরবর্তী সময় ১৯৪৪ সালের ২৮ মে এই ভবনটিকে রবীন্দ্র স্মৃতিভবন হিসাবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে এটি রবীন্দ্রভবন। বর্তমানে রবীন্দ্র জাদুঘর।

বাগানে কবিগুরুর আবক্ষ মূর্তি। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
বাগানে কবিগুরুর আবক্ষ মূর্তি। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

এই ভবনটি একতলা। ঘরের মেঝে কাঠের পাটাতন দিয়ে তৈরি। দেয়াল পাকা হলেও বাড়ির টিনের ছাউনির নিচে কাঠ দিয়ে সিলিং তৈরি করা। ঠান্ডা থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য বাড়িটি এভাবে গড়া হয়েছিল। কুইনাইন কোম্পানি গড়েছিল এই বাড়িটি। এখন এখানে কুইনাইন তৈরি হয় না। কারখানাও বন্ধ। রবীন্দ্র ভবনের সামনে সুন্দর একটি বাগান রয়েছে। রয়েছে বাগানে কবিগুরুর একটি আবক্ষ মূর্তি, ফাইবার গ্লাস দিয়ে তৈরি মূর্তিটি। রয়েছে এই ভবনে কবিগুরুর ব্যবহৃত চেয়ার, খাট, বিছানাপত্র, রিডিং রুম, শয়নঘর ইত্যাদি। তিনি ছবি আঁকতে যেসব রং ব্যবহার করতেন, সেসব রঙের বাক্সও সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। একটি দেয়াল আলমারি রয়েছে, সেখানে কবিগুরু ওষুধ রাখতেন। পড়ার ঘরের পাশেই ছিল শয়নঘর। শয়নঘরে রয়েছে খাট। পাশেই শৌচাগার। সে যুগেও এখানে বানানো হয়েছিল ইট-বালি দিয়ে বাথটাব।

এর আগে ২০০৪ সালের ২৫ মার্চ রাতে কবিগুরুর স্মৃতিবিজড়িত শান্তিনিকেতনের উদয়ন ভবন থেকে চুরি হয় কবিগুরুর নোবেল পদকসহ আরও বেশ কিছু স্মৃতিবাহী সামগ্রী। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। ভারতের বিভিন্ন সংস্থা চেষ্টা করেও নোবেল চুরির কিনারা করতে পারেনি।