ওয়ানঝুকে ছাড়ো, নইলে ভয়ানক পরিণতি ভোগ করো

হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝু
হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝু

চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝুকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় চরমভাবে ক্ষুব্ধ হয়েছে চীন। হুয়াওয়ের ওই নির্বাহীকে দ্রুত ছেড়ে দিতে কানাডার প্রতি চীন আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে বেইজিং হুঁশিয়ারি করে বলেছে, মেং ওয়ানঝুকে না ছাড়লে তার ভয়ানক পরিণতির সব দায় কানাডাকে ভোগ করতে হবে।

মেংকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, গত শনিবার ভাঙ্কুভারে বিমান পরিবর্তনের সময় মেংকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি তাঁর অধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন। এটা অযৌক্তিকভাবে আইন লঙ্ঘন করে করা হয়েছে।

কানাডার কর্তৃপক্ষের কাছে মেংকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার জোরালো দাবি করছে চীন। তা না হলে এর ভয়ানক পরিণতির পুরো দায় কানাডাকে ভোগ করতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে বেইজিং।

এ ঘটনায় কানাডার রাষ্ট্রদূতকে ডেকে চীনের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী লি উচেং তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ কথা জানানো হয়। বিবিসি অনলাইন এই তথ্য জানায়।

মেংকে গ্রেপ্তারের ঘটনাটিকে ‘অত্যন্ত ঘৃণ্য’ বলে মন্তব্য করা হয়েছে।

মেং ওয়ানঝু হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেইয়ের মেয়ে এবং প্রতিষ্ঠানটির সিএফও।

যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে যখন একটি টানাপোড়েনের সম্পর্ক চলছে, ঠিক তখনই গ্রেপ্তার হন মেং ওয়ানঝু। যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যর্পণ অনুরোধে ১ ডিসেম্বর কানাডার ভাঙ্কুভার বিমানবন্দরে হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতার মেয়ে মেং ওয়ানঝুকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ইরানে প্রযুক্তি বিক্রি করার অভিযোগ করা হচ্ছে। তিনি হংকং থেকে মেক্সিকো যাচ্ছিলেন। ভাঙ্কুভার বিমানবন্দরে তাঁর যাত্রাবিরতি ছিল।

এই গ্রেপ্তারকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে আখ্যায়িত করে মেং ওয়ানঝুর মুক্তি চেয়েছে বেইজিং। দোষী সাব্যস্ত হলে যুক্তরাষ্ট্রে ৩০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে তাঁর।

হুয়াওয়ে বলেছে, মেং ওয়ানঝু অন্যায় কিছু করেছেন বলে তাদের জানা নেই।

চীন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মেং কোনো আইন লঙ্ঘন করেননি।

চীনা টেলিকম জায়ান্ট হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝুর গ্রেপ্তারে কানাডা সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো।

চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মেং ওয়ানঝুর বিরুদ্ধে ব্যাংকের সঙ্গে প্রতারণার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ আনা হয়েছে। গত শুক্রবার কানাডার একটি আদালতে তাঁর জামিন শুনানির সময় এক আইনজীবী তাঁর জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, জামিন দিলে মেং ওয়ানঝু পালিয়ে যেতে পারেন।

ক্রাউন অ্যাটর্নি জন গিব-কার্সলের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ করেছে, স্কাইকম নামের এক অনানুষ্ঠানিক সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ইরানের টেলিকম কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করছে হুয়াওয়ে। এতে ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) দেওয়া নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করা হয়েছে।

ওই আইনজীবী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংকগুলো থেকে হুয়াওয়ের জন্য অর্থ ছাড় করা হলেও তাদের অজ্ঞাতে আইন লঙ্ঘন করে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে স্কাইকম। তাদের সঙ্গে যুক্ত আছে হুয়াওয়ে। ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেনের ক্ষেত্রে স্কাইকমের সঙ্গে সম্পর্কের কথা লুকিয়েছেন হুয়াওয়ের ওই অর্থ কর্মকর্তা। স্কাইকমের কিছু কর্মকর্তা হুয়াওয়ের ই-মেইল ব্যবহার করেন এবং ইরানের কর্মকর্তারা অন্য ঠিকানা ব্যবহার করেন।

মেং ওয়ানঝুর বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ হয়ে এ মামলা পরিচালনা করছে কানাডা। তিনি জামিন পাবেন কি না, তা আগামী সোমবার জানানো হতে পারে।

মেং ওয়ানঝুকে গ্রেপ্তারের ঘটনাটি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্য সম্পর্কে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।