টোকিও অলিম্পিকে জাপানের দুর্গত দুটি অঞ্চল

বেইজিং অলিম্পিকের স্বর্ণপদক হাতে মাবুচান। ছবি: সংগৃহীত
বেইজিং অলিম্পিকের স্বর্ণপদক হাতে মাবুচান। ছবি: সংগৃহীত

২০২০ টোকিও অলিম্পিক ও প্রতিবন্ধীদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা প্যারালিম্পিক শুরু হতে এখনো বাকি আছে প্রায় ১ বছর ৭ মাস। অলিম্পিক শুরু হবে ২০২০ সালের জুলাই মাসের ২৪ তারিখ এবং চলবে ৯ আগস্ট পর্যন্ত। এরপর বসবে প্যারালিম্পিক গেমসের আয়োজন। হাতে দীর্ঘ সময় থেকে গেলেও আয়োজনে যেন কোনো রকম ফাঁকফোকর না থাকে, সে জন্য অনেক আগে থেকেই সব রকম আয়োজনের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে টোকিও অলিম্পিক কমিটি।

মূল অলিম্পিকের ৩৩টি ভিন্ন ক্রীড়া প্রতিযোগিতার জন্য ৪৩টি ভেন্যু বাছাই করে নেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে বেশ আগেই। প্রতিযোগিতার স্থানগুলোর মধ্যে অধিকাংশ বিদ্যমান ভেন্যু হওয়ার পেছনে আছে নির্মাণ ব্যয় সাশ্রয়ের পাশাপাশি সময় বাঁচানোর দিকটি নিয়ে আয়োজকদের চিন্তাভাবনা। অলিম্পিক ভিলেজ এবং ক্রীড়া প্রতিযোগিতার মূল প্রেস সেন্টার ছাড়া খেলাধুলার যে ৪৩টি ভেন্যু আয়োজকেরা বেছে নিয়েছেন, সেগুলোর মধ্যে টোকিওর আশপাশের চারটি জেলা ছাড়াও ২০১১ সালের ভূমিকম্প ও সুনামিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জাপানের দুটি জেলা—মিয়াগি এবং ফুকুশিমার দুটি ভেন্যুও অন্তর্ভুক্ত রাখা হয়েছে। জাপানের সেই দুই জেলার জনগণের মধ্যে যেন পুনরুদ্ধারের আশার বাণী ছড়িয়ে দেওয়া যায়, এই সিদ্ধান্তের পেছনে আছে আয়োজকদের পাশাপাশি টোকিও মেট্রোপলিটন সরকারের সে রকম ভাবনা। এ ছাড়া ২০২০ সালের টোকিও অলিম্পিক আয়োজনের প্রচার অভিযান ২০১১ সালের দুর্যোগের অল্প আগে থেকে শুরু হওয়ায় দুর্গত এলাকার প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশও আয়োজকেরা এর মধ্য দিয়ে প্রকাশ করতে চাইছেন। কেননা দুর্যোগ আঘাত হানার পর অলিম্পিক আয়োজনের প্রতিযোগিতা থেকে টোকিও সরে যাবে কি না, প্রশ্নটি সেই সময় দেখা দিলেও শেষ পর্যন্ত অবশ্য প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও জাপানের রাজধানী নাম প্রত্যাহার করে নেয়নি।

তখন থেকেই বলা হচ্ছিল, অলিম্পিক যেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতেও নতুন প্রাণসঞ্চারে ভূমিকা রাখতে পারে, আয়োজকেরা তা ভেবে দেখবেন। সে রকম হিসাব–নিকাশ থেকেই অলিম্পিকের বাস্কেটবল/সফটবল এবং ফুটবলের কয়েকটি খেলার ভেন্যু নির্ধারণ করা হয়েছে ফুকুশিমার আজুমা বেসবল স্টেডিয়াম এবং সেন্দাই শহরের মিয়াগি স্টেডিয়াম। এ ছাড়া অলিম্পিক মশাল র‍্যালিও দুর্গত এলাকা দিয়ে যাবে এবং অলিম্পিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজনও বসবে টোকিও ও আশপাশের এলাকার পাশাপাশি সেই দুই জেলায়।

স্বপ্নের অলিম্পিক স্বর্ণপদক হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখছে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। ছবি: সংগৃহীত
স্বপ্নের অলিম্পিক স্বর্ণপদক হাত দিয়ে ছুঁয়ে দেখছে স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। ছবি: সংগৃহীত

জাপান অলিম্পিক কমিটি এবং টোকিও অলিম্পিকের আয়োজক কমিটি ফুকুশিমা ও মিয়াগি জেলার জনগণকে, বিশেষ করে জেলার শিশু-কিশোর ও তরুণদের অলিম্পিকের সঙ্গে যুক্ত করার উদ্দেশ্যে নানা আয়োজন ইতিমধ্যে হাতে নিয়েছে। সে রকম ব্যতিক্রমী একটি আয়োজন হচ্ছে মিয়াগি ও ফুকুশিমা জেলার দূরবর্তী কিছু এলাকায় পূর্ববর্তী অলিম্পিকের বিজয়ীদের নিয়ে গিয়ে সেখানে শিশু–কিশোরদের সঙ্গে এঁদের মেলামেশার সুযোগ করে দেওয়া। কিছুদিন আগে এ রকম একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় মিয়াগি জেলার হিগাশি মাৎসুশিমা শহরের মিয়ানোমোরি প্রাইমারি স্কুলে। স্কুল ভবনটিকে সুনামি–পরবর্তী পুনরুদ্ধারের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়।

২০১১ সালের সুনামিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহরের একটি ছিল হিগাশি মাৎসুশিমা শহর। পুরোনো স্কুল ভবনটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ায় গাছপালা ঘেরা পাহাড়ি এলাকায় প্রকৃতির মাঝে গড়ে ওঠা নতুন স্কুল ভবন একই সঙ্গে পরিবেশের সঙ্গের মানবজীবনের সম্পৃক্ততার শিক্ষাও ছাত্রদের দিয়ে থাকে। অলিম্পিকের প্রস্তুতি এবং অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার গল্প শোনাতে ছাত্রদের সামনে সেদিন উপস্থিত হয়েছিলেন বেইজিং অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয়ী জাপানের সফটবল দলের খেলোয়াড় সাতোকো মাবুচি। জাপানের তরুণদের মধ্যে মাবুচান নামে পরিচিত এই অলিম্পিক স্বর্ণপদক জয়ী খেলোয়াড় মিয়ানোমোরি প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রদের সেদিন শুনিয়েছেন অলিম্পিক দলে সুযোগ পাওয়ার পেছনে থেকে যাওয়া কঠোর সাধনা আর প্রত্যয়ের কথা। নিজে তিনি কয়েকবারের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত দলে জায়গা করে নিতে পেরেছিলেন বলে প্রাথমিক পর্যায়ের ব্যর্থতায় হাল ছেড়ে না দেওয়ার মনোবৃত্তি মনে ধারণ করে রাখার প্রয়োজনীয়তার উল্লেখও সেদিন তিনি করেন। ছাত্রদের সামনে বক্তব্য শেষ করে এরপর এক এক করে সবাইকে তিনি ডেকেছিলেন সঙ্গে নিয়ে আসা অলিম্পিক স্বর্ণপদক হাত দিয়ে স্পর্শ করে দেখতে। জাপানের দূরবর্তী এক মফস্বল শহরের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সেটা ছিল উত্তেজনাপূর্ণ বিরল এক অভিজ্ঞতা, একই সঙ্গে যেটা অলিম্পিক ক্রীড়াবিদ হতে পারার বাসনা ওদের মনে জাগিয়ে দেয়।

টোকিও অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিক গেমসের লোগো। ছবি: সংগৃহীত
টোকিও অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিক গেমসের লোগো। ছবি: সংগৃহীত

অলিম্পিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সময় এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ ধরনের আরও কিছু উদ্যোগ হাতে নেওয়ার কথা জানালেন টোকিও অলিম্পিক আয়োজক কমিটির মুখপাত্র মাসা তাকাইয়া। অলিম্পিকের সঙ্গে যেন দেশের সাধারণ জনগণকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করে নেওয়া যায়, সেই চিন্তা শুরু থেকেই আয়োজকেরা করে আসছেন।