ক্ষুধায় ধুঁকছে ২ কোটি ইয়েমেনি

ইয়েমেনের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সাদার একটি হাসপাতালে অপুষ্টিতে ভোগা এক শিশুর ওজন মাপা হচ্ছে। ২১ নভেম্বর, ২০১৮। ছবি: রয়টার্স
ইয়েমেনের উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সাদার একটি হাসপাতালে অপুষ্টিতে ভোগা এক শিশুর ওজন মাপা হচ্ছে। ২১ নভেম্বর, ২০১৮। ছবি: রয়টার্স

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে খাদ্যসংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সম্প্রতি জাতিসংঘ জানায় দেশটিতে প্রায় ২ কোটি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), জরুরি শিশু তহবিল ইউনিসেফ এবং বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) এক যৌথ বিবৃতিতে জানায়, বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে প্রায় ২ কোটি ইয়েমেনি।

ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেস ক্ল্যাসিফিকেশন (আইপিসি) নামে খাদ্য নিরাপত্তাবিষয়ক এক জরিপের বিশ্লেষণের বরাত দিয়ে বলা হয়, প্রায় ১ কোটি ৫৯ লাখ মানুষ ক্ষুধা পেটে জেগে ওঠে।
আইপিসির তথ্য অনুযায়ী, ইয়েমেনের মোট জনসংখ্যার ৬৭ শতাংশ ‘তীব্র খাদ্যসংকটে’ ভুগছে।

ইয়েমেনবিষয়ক জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী লিসে গ্রেনডে বলেন, ‘আইপিসি যে তথ্য দিয়েছে তা খুবই আশঙ্কাজনক’। আর ডব্লিউএফপির প্রধান ডেভিড বেসলে বলেন, ‘এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ইয়েমেনে আমাদের প্রচুর সহায়তা বাড়াতে হবে এবং প্রতিটি এলাকায় প্রবেশ নিশ্চিত করতে হবে। আর এটা যদি না পারি, তাহলে আমরা ক্ষুধার কারণে একটি শিশু প্রজন্মকে হারিয়ে ফেলব।’

দুই মাসের এই শিশুটি প্রচন্ড অপুষ্টিতে ভুগছিল। ছবিটি তোলা হয় ২২ নভেম্বর। এর দুদিন পরই সে মারা যায়। সানা, ইয়েমেন,২০১৮। ছবি: রয়টার্স
দুই মাসের এই শিশুটি প্রচন্ড অপুষ্টিতে ভুগছিল। ছবিটি তোলা হয় ২২ নভেম্বর। এর দুদিন পরই সে মারা যায়। সানা, ইয়েমেন,২০১৮। ছবি: রয়টার্স

ইয়েমেনের সংকটের শুরু ২০১১ সালে আরব বসন্ত থেকে। এর ধাক্কায় সৌদিপন্থী শাসক আলী আবদুল্লাহ সালেহর পলায়ন এবং ইরানপন্থী শিয়া হুতিদের রাজধানী সানা দখল ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধের সূচনা করে। আবদুল্লাহ সালেহর পতনের পর তাঁর ডেপুটি মনসুর হাদির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু মনসুর হাদির বিরুদ্ধে হুতিদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ করা হয়। অন্যদিকে, দক্ষিণের বিদ্রোহীরা স্বাধীনতার জন্য নড়াচড়া শুরু করে। ২০১৪ সালে হাদিকে বের করে দিয়ে সানার দখল নেয় হুতিরা। আল-কায়েদাসহ বিভিন্ন জঙ্গিগোষ্ঠীও ইয়েমেনে তৎপরতা বাড়িয়ে দেয়। এভাবেই ইয়েমেনের সংকট জটিল থেকে জটিলতর হতে থাকে।
এরপর ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ আর অভ্যন্তরীণ লড়াইয়ে সীমাবদ্ধ থাকেনি। ক্রমেই আঞ্চলিক লড়াই থেকে আন্তর্জাতিক আবহ লাভ করে। ২০১৫ সালের মার্চে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের হস্তক্ষেপে ইয়েমেনে সংঘাত বাড়তে থাকে। সে বছর সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে। ইয়েমেনে মূলত মার্কিন ও ইরানিদের যুদ্ধ চলছে। মার্কিনের পক্ষে প্রক্সি দিচ্ছে সৌদি আর হুতিদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে ইরান। মাঝ থেকে দুর্দশায় পড়েছে ইয়েমেনের সাধারণ মানুষ।

বিবৃতিতে বলা হয়, জনসংখ্যার বেশির ভাগ সুরক্ষিত জায়গায় থাকলেও সেখানে খাদ্যপণ্য যাওয়ার সুযোগ নেই। কারণ খাবারের দাম যুদ্ধ-পূর্ববর্তী অবস্থার তুলনায় ১৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইয়েমেনে অন্তত ১০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন জানায়, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে চলমান যুদ্ধে চরম পুষ্টিহীনতায় ভুগে পাঁচ বছরের কম বয়সী প্রায় ৮৫ হাজার শিশুর মৃত্যু হয়েছে।