বিচারের আগেই 'বিচার'

ব্রিটিশ নাগরিক পিটার হাম্পফ্রের কথিত স্বীকারোক্তির ভিডিও চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে। ছবি: সংগৃহীত
ব্রিটিশ নাগরিক পিটার হাম্পফ্রের কথিত স্বীকারোক্তির ভিডিও চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে। ছবি: সংগৃহীত

চীনে মানবাধিকার লঙ্ঘনে সহযোগীর ভূমিকা পালন করছে দেশটির রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম। আদালতে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার আগেই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে হাজির করে অপরাধ স্বীকারে বাধ্য করা হচ্ছে। বিচারের আগেই হয়ে যাচ্ছে ‘বিচার’।

সম্প্রতি দ্য ইকোনমিস্ট এক প্রতিবেদনে জানায়, চীনা ফৌজদারি বিচারব্যবস্থায় বিচারের আগেই সন্দেহভাজন ব্যক্তির স্বীকারোক্তি আদায় নতুন কিছু নয়। অপরাধ স্বীকারের ভিডিও ধারণ করে তা রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যমে প্রচার দেশটিতে অনেকটা নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০১৩ সাল থেকে দেশটির আদালতে বিচারের আগে সন্দেহভাজন ব্যক্তির এমন ‘বিচারের’ অন্তত ৫০টি ঘটনার তথ্য মানবাধিকারকর্মী ও সংগঠনের কাছে রয়েছে। এসব ঘটনার শিকার হন প্রায় ১০০ আটক ব্যক্তি।

এমনই একজন ভুক্তভোগী পিটার হাম্পফ্রে। এই ব্রিটিশ নাগরিক করপোরেট ইনভেস্টিগেটর ছিলেন। সাংহাইয়ে থাকাকালে ২০১৪ সালে দণ্ডিত হন তিনি। চীনা ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তাঁকে আড়াই বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

চীনে পিটারের এই সাজা দুঃখজনক হলেও তা মোটেই বিস্ময়কর নয়। সাজা দেওয়ার আগের বছর চীনের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে পিটারের স্বীকারোক্তির ভিডিও সম্প্রচার করা হয়। স্বীকারোক্তি আদায়ের সময় তিনি কারাগারে বন্দী ছিলেন।

কারামুক্ত পিটার এখন যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। সম্প্রতি তিনি লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন করেন। তাঁর ভাষ্য, চীনা কারাগারে তাঁর হাতে ক্রিপ্ট ধরিয়ে দেওয়া হয়। জোরজবরদস্তির মাধ্যমে তাঁর স্বীকারোক্তি নেওয়া হয়। স্বীকারোক্তির ভিডিও ধারণ করা হয়।

পিটার জানান, তাঁর স্বীকারোক্তির ভিডিও শুধু চীনেই সম্প্রচার করা হয়নি; চীনা আন্তর্জাতিক নিউজ চ্যানেলেও তা সম্প্রচার করা হয়।

পিটার হাম্পফ্রের বিবরণে চীনে তাঁকে দিয়ে এভাবেই স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
পিটার হাম্পফ্রের বিবরণে চীনে তাঁকে দিয়ে এভাবেই স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

জোর করে স্বীকারোক্তি আদায়ের ভিডিও টেলিভিশনে সম্প্রচার যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ। অন্যদিকে, যুক্তরাজ্যে চীনা গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্কের (সিজিটিএন) কার্যক্রম রয়েছে। এ কারণে পিটার যুক্তরাজ্যের অফিস অব কমিউনিকেশনসে (অবকম) সিজিটিএনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। যুক্তরাজ্যে সিজিটিএনের সম্প্রচার বন্ধের আরজি জানিয়েছেন তিনি।

চীনা কর্তৃপক্ষ কীভাবে স্বীকারোক্তি আদায় করেছে, কীভাবে ভিডিও করেছে, তার বিবরণ অবকমের কাছে দেওয়া অভিযোগনামায় উল্লেখ করেছেন পিটার।

অভিযোগ পেয়ে অবকম বলেছে, তারা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।

প্রায় একই ধরনের অভিযোগে অতীতে অবকম একাধিক টিভি স্টেশনের বিরুদ্ধে রুল দিয়েছে। গত জানুয়ারিতে আল অ্যারাবিয়াকে ১ লাখ ২০ হাজার পাউন্ড জরিমানা করে অবকম। টিভি স্টেশনটি বাহরাইনের বিরোধীদলীয় এক রাজনীতিবিদের অপরাধ স্বীকারের ভিডিও সম্প্রচার করেছিল। পুনর্বিচারের অপেক্ষা চলাকালে ভিডিওটি সম্প্রচার করা হয়।

২০১১ সালে ইরানের একটি টিভি চ্যানেলকে এক লাখ পাউন্ড জরিমানা করা হয়। চ্যানেলটি কারাবন্দী এক সাংবাদিকের সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করেছিল। সাক্ষাৎকারটি জবরদস্তির মাধ্যমে নেওয়া হয়েছিল।

পিটার এমন এক সময় বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছেন, যখন চীনা কর্তৃপক্ষ তাদের আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের প্রচার-প্রসার বাড়াতে বেশ তৎপর। চীনের এই তৎপরতা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মাঝে এর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, দেশটি তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অপকর্মে গণমাধ্যমকেও যুক্ত করছে।