বিজেপির হারে মমতার উচ্ছ্বাস

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়টার্স ফাইল ছবি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়টার্স ফাইল ছবি

পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে এমন পরাজয় হবে—এটা স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি বিজেপি এবং তাদের নেতা-কর্মীরা। বিজেপি মনে করেছে, যে যা–ই বলুক না কেন, আখেরে পাল্লা ভারী থাকবে বিজেপিরই। কিন্তু বিজেপির সব আশা ভঙ্গ করে দিল গতকাল মঙ্গলবারের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভার নির্বাচনের ফলাফল। একটি রাজ্যেও জিততে পারেনি বিজেপি। শুধু কি তাই, এই পাঁচ রাজ্যের মধ্যে বড় দুটি রাজ্য হলো মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান এবং চতুর্থ রাজ্য ছত্তিশগড়। এই তিনটি রাজ্যের ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি।

মধ্য ভারতে হিন্দি বলয় হিসেবে পরিচিত এই তিনটি রাজ্য। একসময় মধ্যপ্রদেশেই ছিল ছত্তিশগড়। ২০০০ সালের ১ নভেম্বর মধ্যপ্রদেশ ভেঙে গড়া হয় ছত্তিশগড় রাজ্য। বিজেপির বরাবরই আশা ছিল, তারা যেভাবে হিন্দুত্বকে নিয়ে রাজনীতি করছে, তাতে তাদের ফিরিয়ে দেবে না এই রাজ্যের মানুষ। কিন্তু উল্টে গেল ফলাফল। আর তৃতীয় রাজ্য তেলেঙ্গানাতেও জয় পায়নি বিজেপি। অন্ধ্র প্রদেশ ভেঙে ২০১৪ সালের ২ জুন গড়া হয় পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্য। একই চিত্র ফুটে উঠেছে উত্তর–পূর্ব ভারতের মিজোরাম রাজ্যে। সেখানে দীর্ঘ ১০ বছর ধরে ক্ষমতায় কংগ্রেস। সেখানেও আঞ্চলিক দলের কাছে হার মেনেছে কংগ্রেস ও বিজেপি। শুধু তা–ই নয়, এই রাজ্যের বর্তমান কংগ্রেসদলীয় মুখ্যমন্ত্রী দুটি আসনেই হেরে গেছেন। ফলে, কার্যত পাঁচটি রাজ্যেই বিজেপির চরম পরাজয় হয়েছে।

আর এই পরাজয়ের খবরের পর উল্লসিত তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, সেমিফাইনালে বিজেপি হেরে গেছে, এবার হারবে এপ্রিল-মের লোকসভা নির্বাচনের ফাইনালে। বলেছেন, বিজেপির পতন শুরু হয়েছে। পাঁচ রাজ্যে যেভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে মানুষ রায় দিয়েছে, তাতে আর বিজেপি ঘুরে দাঁড়ানোর পথ পাবে না। গতকাল দিল্লিতে এক সংবাদ সম্মেলনে মমতা এ কথা বলেন।

মমতা বলেন, ‘ফাইনালেও আমরা জিতব।’

পরে এক টুইট বার্তায় মমতা বলেন, ‘মানুষ বিজেপির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে। রায় দিয়েছে মানুষ বিজেপির অন্যায়–অত্যাচারের বিরুদ্ধে। এবারের এই নির্বাচনের সেমিফাইনালে প্রমাণিত হয়েছে, কোথায়ও বিজেপি নেই। এটা দেশবাসীর জয়।’ প্রসঙ্গত, মমতা দীর্ঘদিন ধরে মোদির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যাচ্ছেন। তাঁর লক্ষ্য দিল্লির গদি থেকে মোদিকে সরানো। সেখানে মোদিবিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ জোট সরকার গঠন করার।

একইভাবে বিজেপির নেতৃত্বে গড়া এনডিএর জোটসঙ্গী শিবসেনাও গতকাল তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেছে, ‘বিজেপিকে উচিত শিক্ষা দিয়েছে দেশের মানুষ। শরিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারের ফল এবার হাতেনাতে পেয়েছে বিজেপি।’

শিবসেনার মুখপাত্র সাংসদ সঞ্জয় রাউত বলেছেন, ‘এখন আর ২০১৪ সালের রাহুল গান্ধী নয়, ২০১৮ সালের রাহুল গান্ধী। এবার সরাসরি লড়াই হবে মোদির সঙ্গে রাহুল গান্ধীর।’

অন্যদিকে, মহারাষ্ট্রের নবনির্মাণ সেনার প্রধান রাজ ঠাকরে বলেছেন, ‘রাহুল গান্ধী আর পাপ্পু নন, তিনি পরম পূজনীয়।’ বিজেপি এই রাহুল গান্ধীকে ‘পাপ্পু’ বলে কটাক্ষ করত।

এদিকে কংগ্রেসের এই সাফল্যে পশ্চিমবঙ্গ কংগ্রেস শিবিরে শুরু হয়েছে আনন্দ উৎসব। কংগ্রেসের কর্মী–সমর্থকেরা দলে দলে রাজ্য কংগ্রেস অফিসে জড় হয়ে গতকাল উড়িয়েছে দলীয় পতাকা আর ফাটিয়েছে বাজি। স্লোগান দিয়েছে রাহুল-সোনিয়া জিন্দাবাদ।

অন্যদিকে, বিজেপির এই ধাক্কার রেশ পড়েছে কলকাতায় রাজ্য বিজেপি অফিসেও। সেখানে গতকাল বিকেলে আর দলীয় সমর্থকদের ভিড় ছিল না। সুনসান ছিল অফিস। সবার চোখেমুখে ছিল হতাশার ছাপ।

গতকাল ভারতের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার দিন ছিল। এই পাঁচ রাজ্যের মধ্যে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড় রাজ্যে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি। আর তেলেঙ্গানায় রয়েছে টিআরএস বা তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি। আর সবচেয়ে ছোট রাজ্য মিজোরামে রয়েছে কংগ্রেস। সর্বশেষ নির্বাচনী ফলাফলে বলা হয়েছে, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে জিতেছে কংগ্রেস। তেলেঙ্গানায় আঞ্চলিক দল টিআরএস এবং মিজোরামে আঞ্চলিক দলের জোট এমএনএফ জয়ী হয়েছে।

বহুজন সমাজপার্টির নেত্রী মায়াবতী গতকালই তিন রাজ্যে সরকার গড়তে কংগ্রেসকে সমর্থন করার কথা ঘোষণা করেছেন।

কংগ্রেসের এই জয়ের পর গতকাল রাতে দিল্লিতে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলটির সভাপতি রাহুল গান্ধী বলেছেন, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে এটা গণভোট। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি মানুষের আস্থাহীনতার প্রকাশ। মোদি সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে পারেনি। মানুষ তাই প্রত্যাখ্যান করেছে বিজেপিকে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেছেন, ‘জনতার রায় মাথা পেতে নিচ্ছি।’