মোদির পরাজয়ের পাঁচ মাত্রা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: রয়টার্স
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ছবি: রয়টার্স

ভারতের পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে ভোটগণনা শেষ। এর মধ্যে মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিশ্চিত করেছে কংগ্রেস। এই তিন রাজ্যই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বেহাত হয়েছে। তেলেঙ্গানায় এবারই প্রথম ভোট হলো। এতে এগিয়ে রয়েছে তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি। আর মিজোরামে এগিয়ে মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট। এই দুই রাজ্যেও বিজেপির বেহাল অবস্থা। সব মিলিয়ে ক্ষমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এটাই প্রথম বড় পরাজয়। ভোটের এই ফলাফল পাঁচটি বিষয় সামনে নিয়ে এসেছে। 

চ্যালেঞ্জের মুখে বিজেপির ঘাঁটি

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নিজের রাজ্য গুজরাটের পাশের তিন রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান ও ছত্তিশগড় হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বড় ঘাঁটি। মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে ২০০৩ সাল থেকে ক্ষমতায় বিজেপি। হিন্দুত্ববাদ দিয়েই এই রাজ্য দুটিতে বিজেপি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর ঘোষণা দিয়েছিল। হিন্দুত্ববাদের ওপর ভর দিয়েই উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। তবে এই কৌশল মাত্র কিছু ক্ষেত্রে কাজে এসেছে, একই সঙ্গে দলটির ভেঙে পড়াও রোধ করেছে। তবে তা সহজে জয় পাওয়ার জন্য যথেষ্ট নয়। 

মোদির ব্যক্তিগত অবস্থান দুর্বল

রাজ্যগুলোর নির্বাচনের ফলাফলের প্রভাব প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ব্যক্তিগত কারিশমার ওপর পড়বে। এমনও বলা হতে পারে, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে মোদি নিজের মতো করে যে কৌশল নির্ধারণ করেছিলেন, তা পরিপূর্ণভাবে কাজে আসেনি। মোদিকে সামনে রেখেই হয়তো ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনে যাবে বিজেপি। আর তখন হয়তো আর তার ব্যক্তিগত ইমেজ সেভাবে কাজে আসবে না, যেমনটা হয়েছিল ২০১৪ সালে। এ ক্ষেত্রে পার্থক্য হলো, এবার আর তিনি সরকারি দলকে চ্যালেঞ্জকারীর ভূমিকায় থাকবেন না। তিনি নিজেই সরকারপ্রধান। সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে, আসছে দিনগুলোয় মোদি ও যোগী আদিত্যনাথের হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির কৌশল খুব একটা কাজে আসবে না। 

চাতুরতার সীমা আছে

পাঁচ রাজ্য নির্বাচনের এই ফলাফল প্রমাণ করেছে, চাতুরতার সীমা রয়েছে। ছত্তিশগড়ে তৃতীয় শক্তি হিসেবে অজিত যোগী–মায়াবতী জোটের সঙ্গে বিজেপি আলোচনায় বসেছে, পরোক্ষভাবে এই জোটকে সমর্থন করেছে। দিনের শেষে দেখা গেল, এই খেলা বুমেরাং হয়েছে। কংগ্রেসকে ধরাশায়ী করা তো দূরের কথা, নির্বাচনে বিজেপিরই দফারফা অবস্থা। 

কেন্দ্রবিন্দুতে রাহুল গান্ধী

এবারের নির্বাচন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীকে জাতীয় পর্যায়ে বিরোধী রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে এল। এবার দেখার বিষয়, এই জয়কে কংগ্রেস কীভাবে কাজে লাগায়। সবচেয়ে বড় কথা, আগামী জাতীয় নির্বাচনে কংগ্রেস কীভাবে এই জয়কে কাজে লাগায়, তার দিকে তাকিয়ে থাকবে সবাই। 

আঞ্চলিক দলগুলোর অবস্থান

কংগ্রেসের নতুন করে এই ফিরে আসাকে আঞ্চলিক দলগুলো কীভাবে নেয়, তা–ও দেখার বিষয়। বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী দলগুলোর শত্রু হিসেবে বিজেপিকে যতটা না প্রয়োজন, মিত্র হিসেবে কংগ্রেসকে তার চেয়েও বেশি প্রয়োজন। ২০০৪ সালে এমনই এক পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে সমর্থ্য হয়েছিলেন সিপিআইয়ের (এম) তৎকালীন মহাসচিব হরকৃষাণ সিং সুরজীত। তাঁর মতো ব্যক্তিত্বের অনুপস্থিতিতে কংগ্রেসের বলয়ের বাইরে থাকা দলগুলো কী জাতীয় পর্যায়ে বিজেপিবিরোধী জোট গড়ে তুলতে পারবে? এ প্রশ্নের জবাব সময়ই দিতে পারবে।