আস্থা ভোটে উতরে গেলেন থেরেসা মে

যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ছবি: রয়টার্স
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। ছবি: রয়টার্স

আস্থা ভোটে টিকে গেছেন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে। এতে তিনি ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী পদে বহাল থাকছেন।

কনজারভেটিভ পার্টির মোট ৩১৭ জন আইনপ্রণেতার (এমপি) মধ্যে ২০০ জন থেরেসা মের নেতৃত্বের পক্ষে ভোট দেন। বাকি ১১৭ জন ভোট দেন বিপক্ষে।

রাজনৈতিক ভাষ্যকারেরা বলছেন, আস্থা ভোটে উতরে গেলেও মের নেতৃত্বের বিরুদ্ধে যে তাঁর নিজ দলের এমপিদের একটি বড় অংশের সমর্থন নেই, তা স্পষ্ট। এতে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মের অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়ল।

ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে বিরোধের জেরে ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির আইনপ্রণেতাদের একটি অংশ মের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে আস্থা ভোটের দাবি জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দলটির এমপিরা মের নেতৃত্বের পক্ষে-বিপক্ষে ভোট দেন। ঘণ্টাখানেক পর ঘোষিত হয় ফলাফল।

ভোটাভুটি ছিল গোপন ব্যালটে। তাই ফল কী হয়, তা নিয়ে ছিল উত্তেজনা।

সংসদের একটি কমিটির কক্ষে ভোটাভুটি শুরু হওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রী মে এমপিদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। তিনি ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করার স্বার্থে তাঁর নেতৃত্বের ওপর আস্থা রাখার জন্য এমপিদের প্রতি শেষবারের মতো অনুরোধ জানান। মে এমন প্রতিশ্রুতিও দেন যে তিনি মধ্যবর্তী নির্বাচনের ডাক দেবেন না। একই সঙ্গে আগামী নির্বাচনে তিনি প্রার্থী হবেন না।

আস্থা ভোটে উতরে যাওয়ার ফলে আগামী এক বছর এমন ভোটের দাবি জানাতে পারবেন না দলটির এমপিরা।

এক সপ্তাহ ধরে থেরেসা মের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাবের গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। গতকালের এই ভোটের মধ্য দিয়ে সেই গুঞ্জনের অবসান ঘটল।

তবে রাজনৈতিক ভাষ্যকারেরা বলছেন, ক্ষমতাসীনদের গৃহবিবাদ জানান দেওয়ার এই ভোট মূলত অর্থহীন। মের জন্য আসল বিপদ সামনে। সম্পাদিত ব্রেক্সিট চুক্তি সংসদে পাস করানোটাই তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

আস্থা ভোটের ফলাফল–পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় প্রধানমন্ত্রী মে বলেন, এখন তিনি ফের ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার কাজে মনোযোগী হতে চান।

থেরেসা মে সম্পাদিত ব্রেক্সিট চুক্তির বিরোধিতা করছেন তাঁর নিজ দলের অনেক এমপি। এই চুক্তি নিয়ে বিরোধী দলগুলোও সন্তুষ্ট নয়।

নর্দান আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টির (ডিইউপি) ওপর ভর করে সরকারে আছেন মে। সেই ডিইউপিও এই চুক্তির ঘোর বিরোধী। যে কারণে গত সোমবার চুক্তি অনুমোদন প্রশ্নে পার্লামেন্টে নির্ধারিত ভোট পিছিয়ে দিতে বাধ্য হন মে। চুক্তিটি এমপিদের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলতে মে গত মঙ্গলবার পুনরায় ছুটে যান ইইউয়ের দরবারে। তবে ইইউয়ের নেতারা জানিয়ে দিয়েছেন, যা সমঝোতা হয়েছে, তার বাইরে নতুন কিছু মিলবে না।

এমন পরিস্থিতে সরকারের প্রতি অনাস্থা আনা বিরোধী দলগুলোর জন্য অনেকটাই সহজ ছিল। বিভিন্ন তরফে এমন প্রস্তাবও ছিল বেশ জোরালো। তবে প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের চেষ্টার শেষ দেখে অনাস্থা ভোটের সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছেন। কিন্তু তাঁর নিজ দলের এমপিরাই প্রধানমন্ত্রী মের নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জ করে বসেন।

কনজারভেটিভ পার্টির নিয়ম অনুযায়ী, দলের ১৫ শতাংশ এমপি আবেদন জানালেই অনাস্থা ভোটের মুখে পড়ে নেতৃত্ব। সে অনুযায়ী দলটির ৪৮ জন এমপির আবেদনের প্রয়োজন ছিল। প্রধানমন্ত্রীর নমনীয় ব্রেক্সিট প্রস্তাবের বিরোধিতা করে কোনো কোনো এমপি বেশ আগে থেকেই অনাস্থা জানিয়ে ‘১৯২২ কমিটি’তে (পেছন সারির এমপিদের কমিটি, যা নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের বিষয়টি দেখভাল করে) চিঠি দিতে শুরু করেন। ধারণা করা হচ্ছিল, বিদ্যমান বাস্তবতায় এই সংখ্যা হয়তো ৪৮-এ পৌঁছাবে না।

কিন্তু মঙ্গলবার রাতে কমিটির চেয়ারম্যান গ্রাহাম ব্রাডি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে জানান, ৪৮ জন এমপির আবেদন তিনি পেয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী তিনি অনাস্থা ভোটের আয়োজন করছেন। তখন প্রধানমন্ত্রী দ্রুত এ বিষয়ে সুরাহা দেখতে চান বলে জানান।

গতকাল সকালে জাতির উদ্দেশে ভাষণ নিয়ে হাজির হন থেরেসা মে। তিনি দৃঢ়কণ্ঠে নিজের চেষ্টা ও নেতৃত্বের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। মে বলেন, ‘আমার সবটুকু দিয়ে এই ভোট মোকাবিলা করব।’

২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত এক গণভোটে যুক্তরাজের মানুষ ব্রেক্সিটের পক্ষে রায় দেন। পরাজয় মেনে নিয়ে পদত্যাগ করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। নতুন প্রধানমন্ত্রী হন মে।