মোদি ফিরবেন কি না, নিশ্চিত নন রামদেবও

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যোগগুরু রামদেব (রয়টার্সের ফাইল ছবি)
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে যোগগুরু রামদেব (রয়টার্সের ফাইল ছবি)

নরেন্দ্র মোদি আরও একবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী হবেন কিনা, যোগগুরু রামদেব সে বিষয়ে নিশ্চিত নন। দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রাজধানী চেন্নাইয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি খুবই জটিল। আগামী বছর ভোটের পর প্রধানমন্ত্রী কে হবেন এখনই তা জোর দিয়ে বলা যাবে না।

যোগগুরু রামদেব এখন ভারতের অত্যন্ত সফল ব্যবসায়ী। তাঁর ব্রান্ড ‘পতঞ্জলি’তে প্রস্তুত পণ্যতালিকা অগুনতি। ব্যবসার বার্ষিক টার্ন ওভার ১০ হাজার কোটি রুপির কাছাকাছি। নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর এই ব্যবসা আরও ফুলে ফেঁপে উঠেছে।

গত নির্বাচনের আগে থেকেই রামদেব ঘোরতর সমর্থক মোদির। মোদির সমর্থনে ভোটারদের প্রভাবিতও করেছিলেন। হরিয়ানার বিজেপি সরকার রামদেবকে ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডরও করেছে। পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়েছে। সেই রামদেব রাজনীতিতে অনাগ্রহের কথা জানিয়ে মোদির ক্ষমতায় ফেরার সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করায় দ্বিতীয়বার বিজেপির ক্ষমতাসীন হওয়ার বিষয়টি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ল।

সম্প্রতি বিজেপি শাসিত তিন রাজ্য কংগ্রেস দখল করেছে। সেই রেশ কাটতে না কাটতেই রামদেব জানালেন, রাজনীতিতে তাঁর কোনো উৎসাহ নেই। কোনো রাজনৈতিক বা ধর্মীয় এজেন্ডাও তাঁর নেই। আগামী বছর লোকসভা ভোটে কোনো দলকেই তিনি সমর্থন করবেন না, কোনো দলের বিরোধিতাও করবেন না।

রামদেবের এই ঘোষণা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রশ্ন উঠছে ঘোর মোদি সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও রামদেবের মনে সংশয়ের জন্ম হওয়ার কারণ নিয়ে। তা হলে কী ‘মোদি ম্যাজিক’ সাড়ে চার বছরে ফিকে হয়ে গেল? তবে কী পরের বার সরকার গড়তে হলে বিজেপিকে পুরোপুরি শরিক নির্ভর হতে হবে? নাকি বিরোধীদের পালের হাওয়া দেশে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ সৃষ্টি করবে?
বিজেপি যে দুর্বল হয়ে পড়েছে এর প্রমাণ মিলছে শরিকদের আচরণে। মহারাষ্ট্রের শরিক শিবসেনা অনেক দিন ধরেই মোদি-সরকারের ঘোর সমালোচক। দিন দিন সেই সমালোচনার তীব্রতা তারা বাড়িয়ে তুলছে। বিহারের দুই ছোট শরিক ইতিমধ্যেই বিজেপিকে ত্যাগ করে কংগ্রেস-আরজেডি জোটে শামিল হয়েছে। এই দুই দলের একটি রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টি (আরএলএসপি), অন্যটি নিশাদ পার্টি। আরএলএসপি নেতা উপেন্দ্র কুশাওয়া কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ছিলেন। বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে লোকসভায় তিনটি আসন জিতেছিলেন। নিশাদ পার্টির নেতা মুকেশ সাহনিকে বিজেপি একটি আসন দিতে চেয়েছিল। তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। নিশাদদের (মাঝি-মাল্লা) প্রভাব রাজ্যে নিছক কম নয়। অনগ্রসর মাল্লাদের ভোটও বিহারে ৫ শতাংশের মতো। আগেরবার বিজেপি এইরকম ছোট ছোট আঞ্চলিক প্রভাবশালী নেতাদের এক ছাতার তলায় জড়ো করতে পেরেছিল। সেটা ছিল বিজেপি সভাপতি অমিত শাহর ‘সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’। এবার বিহারে সেই খেলাটা বিজেপি খেলতে পারছে না।
দুই ছোট শরিকের জোটত্যাগ বিহারে বিজেপির অন্য শরিক লোক জনশক্তি পার্টির (এলজেপি) নেতা রামবিলাস পাসোয়ানকে বাড়তি উৎসাহ জোগায়। চাপের রাজনীতিতে তিনি আগামী লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির কাছ থেকে ছয়টি আসন আদায় করে নিয়েছেন। এ ছাড়া নিজের জন্য রাজ্যসভার একটি আসন। বিহারে বিজেপি এতটাই নুয়ে পড়েছে যে, আগেরবারের তুলনায় এবার বাড়তি ছয়টি আসন তারা শরিকদের ছেড়ে দিয়েছে। জোট ধরে রাখার খাতিরে ২২ এর জায়গায় বিজেপি এবার লড়বে ১৬টি আসনে।
চাপের রাজনীতি শুরু করেছে উত্তর প্রদেশে বিজেপির শরিক আপনা দলও। লোকসভায় এই দলের রয়েছে দুটি আসন। একটির বিজেতা অনুপ্রিয়া প্যাটেল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তাঁর স্বামী আপনা দলের কার্যকরী সভাপতি আশিস প্যাটেল মঙ্গলবার বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খুলে বলেন, শরিকদের কীভাবে গুরুত্ব দিতে হয় বিজেপিকে তা শিখতে হবে। তিনি ইতিমধ্যেই ‘সম্মানজনক’ আসনের দাবি জানিয়েছেন। বলেছেন, ছোট শরিকদের দিকে এ দলের কারও নজর নেই। তাদের কথা শোনার জন্য কেউ নেই। তারা হতাশ।
২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের ৮০টি আসনের মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ৭১টি, আপনা দল দুটি। গতবার ‘চ্যালেঞ্জার’ মোদির আকর্ষণ ছিল দুর্বার। আগামী বছর ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে মোদি ‘ডিফেন্ডার’। রামদেবের মতো প্রবল সমর্থক সংশয়ী হয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছেন দেশের বাস্তব পরিস্থিতি কী রকম। বাস্তব পরিস্থিতিই উত্তর প্রদেশের যুযুধান দুই প্রধান দল সমাজবাদী পার্টি ও বহুজন সমাজ পার্টিকে কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। এই জোটে কংগ্রেস শামিল হলে রাজ্যের রাজনৈতিক চালচিত্রে ভিন্ন রঙের প্রলেপ পড়তে বাধ্য। বিজেপি ও নরেন্দ্র মোদির পক্ষে তা সুখপ্রদ না হওয়ারই কথা। যোগগুরু রামদেবের কথায় সম্ভবত সেই ইঙ্গিতই ধরা পড়েছে।