বছরের শুরুতেই প্রথা ভাঙল ভারতে!

ভারতের কেরালার বিখ্যাত শবরীমালা মন্দির। এই মন্দিরে হিন্দু দেবতা আয়াপ্পার অধিষ্ঠান। ছবি: এএফপি
ভারতের কেরালার বিখ্যাত শবরীমালা মন্দির। এই মন্দিরে হিন্দু দেবতা আয়াপ্পার অধিষ্ঠান। ছবি: এএফপি

নতুন বছরের শুরুতেই প্রথা ভাঙল। কেরালার বিখ্যাত শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করলেন দুই নারী, যাঁরা ঋতুমতী, যাঁদের বয়স চল্লিশের কোঠায়। আজ বুধবার ভোরে কালো পোশাক পরে পুলিশের সাহায্যে মন্দিরে প্রবেশ করে প্রার্থনা শেষে নির্বিঘ্নে চলে যান ওই দুই নারী। এর পরেই বন্ধ করে দেওয়া হয় ‘অপবিত্র’ হয়ে যাওয়া মন্দির। ধোয়া-মোছার পর ‘পবিত্রতা’ ফিরিয়ে এনে ফের খোলা হয় মন্দির।

কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, ‘আজ দুই নারী শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করেছেন। পুলিশকে স্পষ্ট নির্দেশ দেওয়া আছে, যেসব নারীরা মন্দিরে যেতে চান, তাঁদের যেন সব ধরনের নিরাপত্তা দেওয়া হয়।’ শবরীমালা মন্দিরে হিন্দু দেবতা আয়াপ্পার অধিষ্ঠান। আয়াপ্পার পুরুষ ভক্তদের দাবি, ওই দুই নারী মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করলেও দেবতার দর্শন হয়নি।

কেরালা হাইকোর্টের নির্দেশে ১৯৯১ সাল থেকে শবরীমালা মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই প্রথা এবং লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন, ধর্মাচরণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদ করা যায় না। রায় সত্ত্বেও গত চার মাসে কোনো ঋতুমতী নারী শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেননি। সেই অসাধ্য সাধিত হলো বুধবার ভোরে। দীর্ঘ গিরিপথ হেঁটে ভোর চারটার সময় চল্লিশ বছর বয়সী ওই দুই নারী, বিন্দু ও কনক দুর্গা, মন্দিরে প্রবেশ করেন। টেলিভিশন ভিডিওতে দেখা যায়, কালো কাপড়ে শরীর ঢেকে পুলিশের সাহায্যে দুই নারী মন্দিরে ঢুকছেন।

বিন্দুর বয়স ৪৪। তিনি সিপিআই (এমএল) সমর্থক ও কর্মী। কনক দুর্গার বয়স ৪২। তিনি তামিলনাড়ুর অসামরিক সরবরাহ দপ্তরের কর্মী। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তিনি কেরালায় আসেন আয়াপ্পা দর্শনের ইচ্ছায়।

এর ঠিক আগের দিন, মঙ্গলবার, কেরলের শাসক বামপন্থী ফ্রন্টের উদ্যোগে লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে কয়েক লাখ নারী মানববন্ধন করেন। উত্তর থেকে দক্ষিণ ৬২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই রাজ্যে লাখ লাখ মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে এই মানববন্ধনে শামিল হন। উদ্যোক্তাদের দাবি তিরিশ লাখ নারী এই প্রতিবাদে জড়ো হয়েছিলেন। এর পাল্টা মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ। তাদের দাবি, ধর্মাচরণের ক্ষেত্রে প্রথা ও বিশ্বাসকে গুরুত্ব দিতে হবে।