শবরীমালা মন্দিরে নারীর প্রবেশকে ঘিরে সহিংসতায় নিহত ১

শবরীমালা মন্দিরে বুধবার ভোরে কালো পোশাকে ঋতুমতী দুই নারী প্রবেশ করে প্রার্থনা শেষে চলে যান। ছবি: এএফপি
শবরীমালা মন্দিরে বুধবার ভোরে কালো পোশাকে ঋতুমতী দুই নারী প্রবেশ করে প্রার্থনা শেষে চলে যান। ছবি: এএফপি

ভারতের কেরালার বিখ্যাত শবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতী দুই নারীর প্রবেশকে কেন্দ্র করে রাজ্যজুড়ে সহিংসতা শুরু হয়েছে। এতে একজন নিহত ও ১৫ জন আহত হয়েছে বলে এএফপির খবরে বলা হয়।

কেরালা পুলিশের মুখপাত্র প্রমোদ কুমার এএফপিকে বলেন, নিহত ব্যক্তি বিজেপির সদস্য। গতকাল বুধবার বিক্ষোভের সময় পাথরের আঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন। গতকাল রাতে তিনি মারা যান।

গতকাল ভোরে কালো পোশাকে পুলিশের সাহায্যে মন্দিরে প্রবেশ করে প্রার্থনা শেষে নির্বিঘ্নে চলে যান ওই দুই নারী। এরপরই বন্ধ করে দেওয়া হয় ‘অপবিত্র’ হয়ে যাওয়া মন্দির। ধোয়ামোছার পর ‘পবিত্রতা’ ফিরিয়ে এনে ফের খোলা হয় মন্দির।

শবরীমালা মন্দিরে হিন্দু দেবতা আয়াপ্পার অধিষ্ঠান। আয়াপ্পার পুরুষ ভক্তদের দাবি, ওই দুই নারী মন্দিরে ঢোকার চেষ্টা করলেও দেবতার দর্শন হয়নি।

কেরালা হাইকোর্টের নির্দেশে ১৯৯১ সাল থেকে শবরীমালা মন্দিরে ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী নারীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ। এই প্রথা এবং লিঙ্গবৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে জনস্বার্থ মামলা করা হয়। গত বছরের সেপ্টেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট রায় দেন, ধর্মাচরণের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে ভেদাভেদ করা যায় না। রায় সত্ত্বেও গত চার মাসে কোনো ঋতুমতী নারী শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেননি। সেই অসাধ্য সাধিত হলো গতকাল ভোরে। দীর্ঘ গিরিপথ হেঁটে ভোররাত চারটার সময় চল্লিশোর্ধ্ব ওই দুই নারী—বিন্দু ও কনক দুর্গা—মন্দিরে প্রবেশ করেন। টেলিভিশন ভিডিওতে দেখা যায়, কালো কাপড়ে শরীর ঢেকে পুলিশের সাহায্যে দুই নারী মন্দিরে ঢুকছেন।

বিন্দুর বয়স ৪৪। তিনি সিপিআই (এমএল) সমর্থক ও কর্মী। কনক দুর্গার বয়স ৪২। তিনি তামিলনাড়ুর অসামরিক সরবরাহ দপ্তরের কর্মী। গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে তিনি কেরালায় আসেন আয়াপ্পা দর্শনের ইচ্ছায়।

গতকালের ঘটনার পর থেকে রাজ্যজুড়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। পুলিশ জানিয়েছে, সহিংসতা যাতে আর ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

পুলিশ গতকাল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কাঁদানে গ্যাসের শেল, স্টান গ্রেনেড ও জলকামান থেকে জল ছোড়ে। রাজ্যের রাজধানী তিরুঅন্তপুরমে বিশৃঙ্খলা চলাকালে সাংবাদিকেরা হেনস্তার শিকার হন।

স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, রাজ্যের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টির কাছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল বিজেপির বিক্ষোভ আয়োজন মার খেয়েছে।

শবরীমালা মন্দিরে নারীদের প্রবেশ বিষয়ে মোদি গতকাল বলেন, বিষয়টি ঐতিহ্যের সঙ্গে সম্পর্কিত। ভারতীয় গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, কিছু কিছু মন্দির আছে, যাদের নিজস্ব ঐতিহ্য রয়েছে, যেখানে পুরুষেরাও যেতে পারে না এবং পুরুষেরা যানও না।