শবরীমালা বিতর্কে উত্তাল কেরালা

ভারতের কেরালায় হিন্দু দেবতা ‘আয়াপ্পা’-এর মন্দিরে নারী প্রবেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের রাজনীতি ও সমাজ দ্বিধাবিভক্ত। নারী প্রবেশের প্রতিবাদে বিজেপিসহ দক্ষিণপন্থীদের ডাকা হরতাল আংশিক সফল হয়েছে। ছবি: এএফপি
ভারতের কেরালায় হিন্দু দেবতা ‘আয়াপ্পা’-এর মন্দিরে নারী প্রবেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের রাজনীতি ও সমাজ দ্বিধাবিভক্ত। নারী প্রবেশের প্রতিবাদে বিজেপিসহ দক্ষিণপন্থীদের ডাকা হরতাল আংশিক সফল হয়েছে। ছবি: এএফপি

ভারতের কেরালার রাজনীতি এই মুহূর্তে শবরীমালা মন্দির ঘিরে আবর্তিত। হিন্দু দেবতা ‘আয়াপ্পা’-এর মন্দিরে নারী প্রবেশের ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের রাজনীতি ও সমাজ দ্বিধাবিভক্ত। নারী প্রবেশের প্রতিবাদে বিজেপিসহ দক্ষিণপন্থীদের ডাকা হরতাল আংশিক সফল। বামপন্থী মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই এই হরতালকে সংবিধান ও সুপ্রিম কোর্টের বিরোধিতা হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, মন্দিরে নারী প্রবেশে সহায়তা করে সরকার তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করেছে। এই দায়িত্ব পালনে সরকার বদ্ধপরিকর।

গতকাল বুধবার কাকভোরে মধ্যবয়সী ঋতুমতী দুই নারী প্রশাসনিক সহায়তায় শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করে প্রার্থনা সারেন। মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন আজ বৃহস্পতিবার বলেছেন, ওই দুই নারী বিন্দু ও কনকদূর্গা দীর্ঘ পথ হেঁটে মন্দিরে প্রবেশ করেছেন। তাঁদের উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয়নি। দীর্ঘ এই যাত্রা পথে এবং মন্দিরে প্রবেশের সময় তাঁদের কেউ বাধা দেননি। কেউ প্রতিবাদও করেননি। অথচ এর প্রতিবাদে হরতালের ডাক দেওয়া হয়েছে। এই কারণে হরতালের ডাক দেওয়ার অর্থ সুপ্রিম কোর্টের বিরোধিতা করা।

ঋতুমতী নারীদের প্রবেশের পর মন্দিরের প্রধান পুরোহিত মন্দির বন্ধ করে দেন। ধোয়া-মোছার মধ্য দিয়ে ‘অপবিত্রতা’ দূর করেন। মুখ্যমন্ত্রী বিজয়ন এই কাজেরও সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেন, পুরোহিতদের এই কাজও সুপ্রিম কোর্টের অবমাননা। মন্দির সম্পর্কিত কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার প্রধান পুরোহিতের নেই। সেই এখতিয়ার রয়েছে একমাত্র দেবাসম বোর্ডের।

কেরালা হাইকোর্টের ১৯৯১ সালের নির্দেশ অনুযায়ী ১০ থেকে ৫০ বছরের ঋতুমতী নারী ওই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারেন না। সন্দেহজনক নারীদের মন্দির কর্তৃপক্ষের কাছে বয়সের প্রমাণপত্র দাখিল করতে হয়। এই প্রথার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যে মামলা হয়, গত সেপ্টেম্বর মাসে সর্বোচ্চ আদালত তার রায়ে সেই বৈষম্য দূর করেন। সেই থেকে একাধিকবার মন্দির দর্শনে গেলেও কোনো ঋতুমতী নারী সফল হননি। কখনো সাধারণ দর্শনার্থী, কখনো মন্দির কর্তৃপক্ষ তাঁদের বাধা দিয়েছেন। গত বুধবার ভোরে বিন্দু ও কনকদূর্গা সেই অসাধ্যসাধন করেন। বিতর্ক ও রাজনৈতিক তরজা তা নিয়েই।

বুধবারের ঘটনার পর রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে বামপন্থীদের সঙ্গে বিজেপি সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। সেই সংঘর্ষে চন্দ্রন উন্নিথন নামে এক ব্যক্তি আহত হন। আজ বৃহস্পতিবার তাঁর মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবারের হরতালের ডাক দেয় শবরীমালা কর্ম সমিতি ও অন্তঃ রাষ্ট্রীয় হিন্দু পরিষদ। তাদের প্রত্যক্ষ মদদ দিয়েছে বিজেপি, আরএসএস ও দক্ষিণপন্থী কিছু সংগঠন। আংশিকভাবে হরতাল সফলও। বিভিন্ন শহরে পথ অবরোধ করা হয়। সরকারি বাসে ভাঙচুর করা হয়। সিপিএম-বিজেপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষও বাধে। তিনজন ছুরিকাহত হন বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করেছে।

লিঙ্গবৈষম্য সত্ত্বেও শবরীমালা মন্দির কর্তৃপক্ষর পাশে দাঁড়িয়েছে বিজেপি। অথচ নারী বৈষম্য দূর করতে তিন তালাক বিলকে আইনে পরিণত করতে বিজেপি মরিয়া। এই স্ববিরোধিতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, তিন তালাক হলো নারীর অধিকার ও মর্যাদার প্রতিষ্ঠার প্রশ্ন, শবরীমালা মন্দির বিশ্বাসের।