বনধের দ্বিতীয় দিনে পশ্চিমবঙ্গে সংঘর্ষ-অবরোধ

রাস্তায় নামা বাস আটকে দেয় অবরোধকারীরা। যাদবপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
রাস্তায় নামা বাস আটকে দেয় অবরোধকারীরা। যাদবপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

১৭টি বাম রাজনৈতিক দলের শ্রমিক সংগঠনের ডাকে ৪৮ ঘণ্টার ভারত বনধের দ্বিতীয় দিন আজ বুধবার। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয়েছে এই বনধ। শেষ হবে আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের শ্রমিক ও আর্থিক নীতির বিরুদ্ধে ডাকা এই বনধের দ্বিতীয় দিনেও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে। অবরোধ হয়েছে ট্রেন ও বাস। কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি এই বনধে সমর্থন জানিয়েছে। তবে এর বিরোধিতা করছে তৃণমূল ও বিজেপির শ্রমিক সংগঠন। মোদি সরকারের জনবিরোধী নীতির প্রতিবাদে এবং ১২ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে দেশজুড়ে এই বনধ চলছে।

এই বনধে পশ্চিমবঙ্গে আজ অনেকটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে ট্রেন পরিষেবা। রাজ্যের সর্বত্র বনধ সমর্থকেরা অবরোধ করেন ট্রেন। এর ফলে দূরপাল্লাসহ বহু লোকাল ট্রেন আটকে পড়ে বিভিন্ন রেলস্টেশনে। তা ছাড়া রাজ্যজুড়ে সড়ক অবরোধ, বাস ভাঙচুর, পুলিশ-বন্‌ধ সমর্থনকারী এবং বাম-তৃণমূলের সংঘর্ষ চলেছে। ইতিমধ্যে বনধ নিয়ে ব্যাপক সংঘর্ষে বহু সমর্থককে আটক করেছে পুলিশ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীও। বাম শ্রমিকনেতা অনাদি সাহু আজ বনধের পক্ষে কলকাতায় আয়োজিত বিশাল মিছিলে নেতৃত্ব দেন।

বনধের কারণে বন্ধ স্থানীয় দোকানপাট। যাদবপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
বনধের কারণে বন্ধ স্থানীয় দোকানপাট। যাদবপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

সকাল থেকেই বনধ সমর্থকেরা নেমে পড়েন সড়ক এবং রেল অবরোধে। আর এই অবরোধের ফলে বিভিন্ন স্টেশনে বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। ট্রেন আটকে পড়ে বিভিন্ন স্টেশনে। পশ্চিমবঙ্গের ডায়মন্ডহারবার, নামখানা, লক্ষ্মীকান্তপুর, কালনা, আদ্রা, বাসুলডাঙ্গা, নিমো, শিমুরালি, মথুরাপুর, শ্রীরামপুর, মানকুন্ডু, চণ্ডীতলা, বরাহনগর, রানাঘাট, হুগলি, উলবেড়িয়া, কৃষ্ণনগর, বীরভূম, বালি, রানীগঞ্জ, যাদবপুর রেলস্টেশনে ট্রেন অবরোধ করেন বনধ সমর্থনকারীরা। এ ছাড়া বিভিন্ন এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন বনধ সমর্থনকারীরা। যাদবপুরে অবরোধকালে পুলিশ বাধা দিলে শুরু হয় সংঘর্ষ। একপর্যায়ে পুলিশ রাজ্য বিধানসভার সিপিএমের পরিষদীয় দলের নেতা বিধায়ক সুজন চক্রবর্তীকে আটক করে।

দোকানপাট বন্ধ থাকায় অলস সময় পেয়ে পত্রিকা পড়ায় ব্যস্ত এক ব্যক্তি। যাদবপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
দোকানপাট বন্ধ থাকায় অলস সময় পেয়ে পত্রিকা পড়ায় ব্যস্ত এক ব্যক্তি। যাদবপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

আজ দাসনগর, হাওড়া, জিটি রোড, কাকদ্বীপ, জলপাইগুড়ি, কল্যাণী হাইওয়ে, উলবেড়িয়া, বালি, কৃষ্ণনগর, বীরভূম, পশ্চিম মেদিনীপুর, হাওড়া, সিউরি, দাসনগর, দিনহাটা, বালি, রানীগঞ্জসহ রাজ্যের বহু স্থানে সড়ক অবরোধ হয়। অবরোধকারীদের তুলে দিতে গেলে পুলিশের সঙ্গে বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ হয়। এসব জায়গায় বেশ কটি সরকারি ও বেসরকারি বাস ভাঙচুর হয়। তবে আগেভাগেই আজ সরকারি বাসচালকদের হেলমেট দেওয়া হয় নিরাপত্তার স্বার্থে। তাঁরা মাথায় হেলমেট লাগিয়ে আজ বাস চালায়। তবে আজ জগদ্দল, কাঁকিনারা, নৈহাটির শিল্পাঞ্চলের অধিকাংশ শিল্পকারখানা বন্ধ রয়েছে। বনধকারীরা আজকের বনধ সফল হয়েছে বলে দাবি করলেও তৃণমূল বলেছে ৪৮ ঘণ্টার বনধ ব্যর্থ হয়েছে।

বনধের কারণে সড়কে যান চলাচল ছিল অনেক কম। যাদবপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
বনধের কারণে সড়কে যান চলাচল ছিল অনেক কম। যাদবপুর, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

আগেই পশ্চিমবঙ্গ সরকার এক নির্দেশ জারি করে বলেছে, এই বনধে সব সরকারি কর্মীকে উপস্থিত থাকতে হবে নিজ নিজ দপ্তরে। কেউ ছুটি নিতে পারবেন না। অনুপস্থিত থাকলে কেটে নেওয়া হবে তাঁদের বেতন ও ছুটি। পাশাপাশি পরিবহনমন্ত্রী ঘোষণা দিয়েছেন, বনধে কারও গাড়ি বা বাস ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।

বনধ আন্দোলনকারীদের ১২ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে শ্রমিক-কর্মচারীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা, মাসিক বেতন ন্যূনতম ১৮ হাজার রুপি, মাসিক ৬ হাজার রুপি সর্বজনীন পেনশন দেওয়াসহ বেসরকারি সংস্থাকে জাতীয়করণ বন্ধ করা ইত্যাদি।

শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার বনধে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ। শ্যামবাজার, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
শ্রমিক সংগঠনের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার বনধে কার্যত অচল হয়ে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গ। শ্যামবাজার, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি