মেয়েটি যৌন সহিংসতার শিকার?

যে রাতে আইয়া মাসারউইকে হত্যা করা হয়, সেই রাতে পুলিশের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পাওয়া ছবি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
যে রাতে আইয়া মাসারউইকে হত্যা করা হয়, সেই রাতে পুলিশের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে পাওয়া ছবি। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

গভীর রাতে বোনের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন ২১ বছরের আইয়া মাসারউই। ওপাশ থেকে তাঁর বোন আইয়ার ফোনটি হঠাৎ পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পান। একটি কণ্ঠস্বরও শোনেন। এরপর থেকে আইয়ার আর কোনো সাড়া নেই। পরদিন সকালে পুলিশের কাছে আইয়ার খোঁজ নিতে গিয়ে তিনি স্তম্ভিত। জানতে পারেন, আইয়ার মরদেহ একটি শপিং সেন্টারের বাইরে পড়ে আছে। আইয়াকে কেউ হত্যা করেছে। পুলিশের সন্দেহ, আইয়া যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে থাকতে পারেন। ঘটনা অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিবিসি অনলাইনের খবরে জানানো হয়, আইয়া মাসারউই ইসরায়েলি। চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ও চীনা ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করতেন। মেলবোর্নের লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি কমেডি শো করার জন্য এসেছিলেন। অনুষ্ঠানের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই ট্রিম হাউসে (চলমান বাড়ি) থাকতেন আইয়া। সেখানে যাওয়ার পথেই ফোনে বোনের সঙ্গে কথা হয়।

পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক অ্যান্ড্রু স্ট্যামপার বলেন, তাঁদের ধারণা, এলোপাতাড়ি হামলা চালিয়ে আইয়াকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর মরদেহের কাছে ১৯৮৬ লেখা একটি টুপি ও ধূসর রঙের একটি টি–শার্ট পাওয়া গেছে। এগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হত্যার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন আইয়া। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এসেছিলেন আইয়া। ছবি: ইনস্টাগ্রাম

মেলবোর্ন এজ পত্রিকার খবরে বলা হয়, আইয়াকে যৌন হয়রানি করার বিষয়টি পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না।

আইয়ার চাচা আবেদ কাতানে ইসরায়েলি গণমাধ্যমকে জানান, আইয়া খুব মেধাবী ও হাসিখুশি ছিলেন। কোনো বিপজ্জনক কর্মকাণ্ডে তিনি জড়িত ছিলেন না।

আইয়ার বাবা মরদেহ শনাক্ত করতে ঘটনাস্থলে গেছেন। ইসরায়েলি দূতাবাস জানিয়েছে, আইয়ার মরদেহ দেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে তারা সহযোগিতা করবে।

আইয়ার উদ্দেশে শ্রদ্ধা ও প্রতিবাদ। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
আইয়ার উদ্দেশে শ্রদ্ধা ও প্রতিবাদ। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

গত বছরের জুন মাসে মেলবোর্নেই কমেডিয়ার ইউরিডাইস ডিক্সনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। তিনিও শো শেষ করে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। এরপর থেকে নারীদের প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলে। ২০১২ সালেও মেলবোর্নে আইরিশ নারী জিল মেঘারকে বাড়ি ফেরার সময় ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়।

অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকার কমিশন বলছে, দেশে নারীদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা বেড়ে গেছে। সরকারি হিসাবে ৫ জনে ১ জন নারী এবং ২০ জনে ১ জন পুরুষ যৌন সহিংসতার শিকার হন। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বড় শহর মেলবোর্ন। এখানকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী পড়তে আসেন। ২০১৭ সালের এক জরিপ বলছে, দুই লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী মেলবোর্নের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।