আওয়াজ উঠবে মোদি হটানোর

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি।

আজ শনিবার কলকাতার ঐতিহাসিক ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে রাষ্ট্রক্ষমতা থেকে মোদিকে হটানোর লক্ষ্যে এক মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। এই সমাবেশের ডাক দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিজেপিকে হটানোর লক্ষ্য নিয়ে আয়োজন করা হয়েছে এই মহাসমাবেশের। এতে যোগ দেবেন বিজেপিবিরোধী অন্তত ২২টি রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা।


তৃণমূল বলেছে, এই সমাবেশ থেকে মোদি সরকারকে হটানোর ডাক দেওয়া হবে। উনিশের লোকসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আর ফিরতে দেওয়া হবে না মোদিকে। ভারতে আসবে ধর্মনিরপেক্ষ এক গণতান্ত্রিক সরকার। এই সমাবেশেই বিজেপির প্রতীকী মৃত্যুঘণ্টা বাজানোর কথা রয়েছে তৃণমূল নেত্রী মমতার। এর আগে ১৯৯৩ সালে যুব কংগ্রেসের নেত্রী থাকার সময় বামফ্রন্ট সরকারকে হটানোর লক্ষ্যে এমনই এক ব্রিগেডে মমতা বাজিয়েছিলেন মৃত্যুঘণ্টা। যদিও তার অনেক পরে, ২০১১ সালে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাট থেকে বিদায় নিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার।

আজকের এই সমাবেশে বিজেপিবিরোধী নেতারা যোগ দেবেন। তাঁদের মধ্যে থাকছেন কর্ণাটকের জনতা দল (সেক্যুলার) নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামী,এই দলেরই ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া, জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের নেতা ফারুক আবদুল্লাহ, ওমর আবদুল্লাহ, কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে ও সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি, উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী দলের নেতা অখিলেশ যাদব, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও তেলেগু দেশম দলের নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, বিহারের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের অন্যতম নেতা তেজস্বী যাদব, তামিলনাড়ুর ডিএমকে দলের নেতা এমকে স্টালিন, বিহারের লোকতান্ত্রিক জনতা দলের নেতা শারদ যাদব, জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির নেতা শারদ পাওয়ার, ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপির বিদ্রোহী নেতা যশোবন্ত সিনহা, শত্রুঘ্নœসিনহা ও অরুণ শৌরি, ঝাড়খন্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ঝাড়খন্ড বিকাশ মোর্চার নেতা বাবুলাল মারান্ডি, অরুণাচলের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী গেগং আপাং, শিবসেনার সাংসদ সঞ্জয় রাউত, বহুজন সমাজপার্টির নেতা সতীশ মিশ্র, আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল মহন্ত, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিনয় তামাংসহ অনেকে।

মহাসমাবেশে যোগ দিতে আগের দিনই কলকাতায় পৌঁছে গেছেন বহু নেতা। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এই মহাসমাবেশে যোগ দিতে না পারলেও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন মমতাকে। সেই সঙ্গে সাফল্য কামনা করেছেন এই মহাসমাবেশের। সব মিলিয়ে ২২টি বিজেপিবিরোধী দলের নেতাদের এতে যোগ দেওয়ার কথা আছে। তবে বাম দল ঘোষণা দিয়েছে, তারা কেউ থাকবেন না এতে।

এদিকে এই সমাবেশকে সামনে রেখে গোটা পশ্চিমবঙ্গের সর্বত্র ঢেকে ফেলা হয়েছে তৃণমূলের বড় বড় তোরণ আর পোস্টার-ব্যানারে। সড়কের মাঝে তোলা হয়েছে বিরাট বিরাট তোরণ। এবার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে তৈরি করা হচ্ছে ৫টি মঞ্চ। একটিতে বসবেন মমতাসহ বিভিন্ন রাজ্যের নেতা ও মন্ত্রীরা। আরেকটিতে বসবেন তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কেরা। তৃতীয় মঞ্চে থাকবেন তৃণমূলের বিভিন্ন জেলার নেতারা। আর দুটি মঞ্চে থাকবেন সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজনেরা। ৭০০টি আয়রন রড দিয়ে গড়া হয়েছে এই মঞ্চ। থাকছে এক হাজার মাইক্রোফোন। থাকছে ওয়াচ টাওয়ার ও ২৫টি এলইডি টিভি।

বিভিন্ন রাজ্য ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আগত নেতা-কর্মীদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য থাকছে ২০০টি ক্যাম্প। তাঁদের থাকার জন্য আছে গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, উত্তীর্ণ মিলনায়তন, সল্টলেক পৌরসভার খেলার মাঠ ও বিভিন্ন ধর্মশালা। ওখানেই তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আজ শনিবার দুপুর ১২টায় শুরু হবে সমাবেশ। আর এই সমাবেশকে সফল করার জন্য থাকবে তৃণমূলের পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। আজ পুলিশও নিয়ন্ত্রণ করবে কলকাতার যানবাহন। তৃণমূল দাবি করেছে এই সমাবেশে ৪০ থেকে ৫০ লাখ মানুষ যোগ দেবে। তৃণমূল নেতারা বলছেন, ব্রিগেড সমাবেশের দিন তৃণমূল কর্মীরা মমতাকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী করার জোর আওয়াজ তুলবেন।