'দুহাজার উনিশে বিজেপি ফিনিশ হবে'

কলকাতায় বিজেপিবিরোধী সমাবেশে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের নেতারা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
কলকাতায় বিজেপিবিরোধী সমাবেশে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক দলের নেতারা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘বিজেপির দিন শেষ। এক্সপায়ারি ডেট এসে গেছে। আর নয় বিজেপি। দুহাজার উনিশে হবে বিজেপি ফিনিশ।’ 

আজ শনিবার কলকাতার ঐতিহাসিক ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকে বিজেপিবিরোধী রাজনৈতিক দলের এক মহাসমাবেশ থেকে এ কথা বলেছেন মমতা। ডাক দিয়েছেন ভারতের শাসনক্ষমতা থেকে বিজেপি উৎখাতের।

আজ মমতার ডাকে সাড়া দিয়ে এ সমাবেশে যোগ দেন ভারতের বিজেপিবিরোধী অন্তত ২২টি রাজনৈতিক দলের নেতা। আর এ সমাবেশকে ঘিরে কয়েক লাখ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন ব্রিগেডে। কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল এ মাঠ। এই সমাবেশে যোগ দেওয়া বিজেপিবিরোধী নেতাদের মধ্যে ছিলেন কর্ণাটকের জনতা দল (সেক্যুলার) নেতা ও মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামী,এই দলেরই ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া, জম্মু-কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ন্যাশনাল কনফারেন্স দলের নেতা ফারুক আবদুল্লাহ, ওমর আবদুল্লাহ, কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে ও সাংসদ অভিষেক মনু সিংভি, উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও সমাজবাদী দলের নেতা অখিলেশ যাদব, অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও তেলেগু দেশম দলের নেতা চন্দ্রবাবু নাইডু, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল, বিহারের রাষ্ট্রীয় জনতা দলের অন্যতম নেতা তেজস্বী যাদব, তামিলনাড়ুর ডিএমকে দলের নেতা এমকে স্টালিন, বিহারের লোকতান্ত্রিক জনতা দলের নেতা শারদ যাদব, জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির নেতা শারদ পাওয়ার, ভারতের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও বিজেপির বিদ্রোহী নেতা যশোবন্ত সিনহা, শত্রুঘ্ন সিনহা ও অরুণ শৌরি, ঝাড়খন্ডের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ও ঝাড়খন্ড বিকাশ মোর্চার নেতা বাবুলাল মারান্ডি, অরুণাচলের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী গেগং আপাং, শিবসেনার সাংসদ সঞ্জয় রাউত, বহুজন সমাজপার্টির নেতা সতীশ মিশ্র, আসামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী প্রফুল্ল মহন্ত, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিনয় তামাংসহ অনেকে।

আজকের সমাবেশে মমতা বলেছেন, ‘মোদি সরকারের আয়ু শেষ। আগামী দিন আসছে নতুন সকাল। আর নয় এই বিজেপি সরকার । এই সরকার দেশ লুট করেছে। সাম্প্রদায়িকতার বীজ রোপণ করেছে। তাই বিজেপির সর্বনাশের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার জন্য সময় এসে গেছে। আজ বিরোধীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তাই এবার জাগো দেশবাসী, জাগো মানুষ, জাগো বাংলা। উদ্ধার করো দেশকে বিজেপির হাত থেকে।’

মমতা বলেন, ‘ওরা লুটেরা। ওরা ব্যাংকে ধস নামিয়েছে। অর্থনীতিতে ধস নামিয়েছে। শুধু ওরা এখন বস হয়ে রয়েছে। এই বসকে তাড়াতে হবে। বিজেপির ধ্বংসের হাত থেকে এবার রক্ষা করতে পারবে বিজেপিবিরোধী দলের মহাজোট।’

মমতা আরও বলেছেন, ‘বিজেপি সংবিধান মানে না। দেশে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির পুরোধা। এনআরসি, নাগরিকত্ব বিল পাসের নামে দেশে শুরু করেছে অত্যাচার। এই অত্যাচারকে রুখতে আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে হবে বিজেপির বিরুদ্ধে।’
মমতা এ কথাও বলেছেন, বিরোধী জোটের কে প্রধানমন্ত্রী হবেন তা ঠিক করবে সবাই মিলে। যে দল যেখানে শক্তিশালী সেখানে তারা নির্বাচন করুন। এক বনাম এক প্রার্থী। তারপর ভোটের পর নির্বাচন করা হবে, কে হবেন পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী।

আজকের সমাবেশের আগেই তৃণমূল ঘোষণা দিয়েছিল, এই সমাবেশ থেকে ডাক দেওয়া হবে মোদি সরকারকে উৎখাতের। ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আর ফিরতে দেওয়া হবে না মোদিকে। ভারতে আসবে ধর্মনিরপেক্ষ এক গণতান্ত্রিক জোট সরকার।

আজকের সমাবেশে এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ার বলেছেন, এবার বিজেপিকে গঙ্গায় বিসর্জন দিতে হবে। ভারতে গড়তে হবে শক্তিশালী এক ধর্মনিরপেক্ষ সরকার। সংবিধানের ওপর হামলা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে আমাদের।

চিত্রতারকা ও বিজেপির বিদ্রোহী সাংসদ শত্রুঘ্ন সিনহা বলেছেন, নোট বাতিল আর জিএসটি চালুর মাধ্যমে দেশের গরিব কৃষক আর মজুরদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়েছে বিজেপি। তাদের আর চায় না দেশবাসী।

ব্রিগেড ময়দানে জনপ্লাবন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী
ব্রিগেড ময়দানে জনপ্লাবন। ছবি: ভাস্কর মুখার্জী

জম্মু ও কাশ্মীরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ বলেছেন, ‘এ দেশে আর ধর্ম নিয়ে রাজনীতি বরদাশত করা হবে না। এক জোট হয়ে লড়তে হবে আমাদের।’

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এইচ ডি দেবগৌড়া বলেছেন, ‘এই সমাবেশের মধ্য দিয়ে এটা প্রমাণিত হলো, এবার দেশে একটি শক্তিশালী জোট সরকার গঠিত হবে।’

দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল বলেছেন, ‘মোদি-অমিত শাহ জুটি দেশের জন্য বিপজ্জনক। এদের উৎখাত করতে হবে।’

অন্ধ্র প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু বলেছেন, মোদিবিরোধী শক্তির এবার উত্থান হয়েছে। এবার আর তাকে দমন করা যাবে না। আসছে দেশে নতুন সরকার।

বিজেপির বিদ্রোহী সাংসদ ও সাবেক অর্থমন্ত্রী যশোবন্ত সিনহা বলেছেন, বিরোধিতা করলেই দেশদ্রোহী বলা হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় এসে গেছে।

লোকতান্ত্রিক জনতা দলের নেতা শারদ যাদব বলেছেন, নোট বাতিলের ফলে দেশের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে পড়েছে।

তামিলনাড়ুর আঞ্চলিক দল ডিএমকের নেতা এম কে স্টালিন বলেছেন, ‘দেশে সাম্প্রদায়িক বিভাজন শুরু করেছে বিজেপি। তাই বিজেপি হটাও দেশ বাঁচাও স্লোগান তুলে আমাদের এগোতে হবে।’

কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী কুমার স্বামী বলেছেন, আজকের এই মহাপ্লাবন দেশে নতুন যুগের সূচনা করবে।

পাতিদার নেতা হার্দিক প্যাটেল বলেছেন, ডাক দিয়েছে ব্রিগেড, অশুভ বিজেপি শক্তিকে পরাস্ত করার।

সমাবেশে বহুজন সমাজ পার্টির নেতা সতীশ মিশ্র বলেছেন, মোদি সরকার ব্যর্থ। তাকে সরাতেই হবে।

অরুণাচলের বিজেপিদলীয় সাবেক মুখ্যমন্ত্রী গেগং আপাং বলেছেন, আঞ্চলিক দলগুলোকে এক করে মোদির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নামতে হবে।

উত্তর প্রদেশের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বলেছেন, দেশবাসী মোদিকে হটাতে তৈরি। দেশে নতুন প্রধানমন্ত্রী চায় দেশবাসী।

কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেছেন, আসন্ন নির্বাচন হবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার নির্বাচন। নির্বাচন হবে মোদিকে হটানোর।

আজকের সমাবেশে বাম দলগুলোর কোনো প্রতিনিধি ছিলেন না। তাঁরা আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, তারা মহাসমাবেশে উপস্থিত থাকবেন না।

এই সমাবেশকে সামনে রেখে গোটা পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা ঢেকে ফেলা হয় তৃণমূলের বড় বড় তোরণ, পোস্টার ও ব্যানারে।
এবার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে তৈরি করা হয় পাঁচটি মঞ্চ। একটিতে বসেন মমতাসহ বিভিন্ন রাজ্যের নেতা ও মন্ত্রীরা। আরেকটিতে বসেন তৃণমূলের নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়কেরা । তৃতীয় মঞ্চে বসেন তৃণমূলের বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ। আর দুটি মঞ্চে ছিল বিশিষ্টজনসহ সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনের বিশিষ্টজন ও শিল্পীরা। মঞ্চে ছিল এক হাজার মাইক্রোফোন। ছিল ৬টি ওয়াচ টাওয়ার, ২৫টি এলইডি টিভি, ২০০ পানির ট্যাংক।
বিভিন্ন রাজ্য ও পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা নেতা-কর্মীদের অভ্যর্থনা জানানোর জন্য ছিল ২০০টি ক্যাম্প। তাঁদের থাকার জন্য ছিল গীতাঞ্জলি স্টেডিয়াম, ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্র, উত্তীর্ণ মিলনায়তন, সল্টলেক পৌরসভার খেলার মাঠ ও বিভিন্ন ধর্মশালা। ওখানেই তাঁদের খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আর এই সমাবেশকে সফল করার জন্য কাজ করেছেন তৃণমূলের পাঁচ হাজার স্বেচ্ছাসেবক।