অশউইৎজ বন্দিশিবির মু্ক্তির ৭৩ বছর

বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে স্বৈরাচার হিটলারের অন্যতম সহযোগী এস এস বাহিনী প্রধান হাইনরিশ হিমলার দক্ষিন পোল্যান্ডে অশউইৎজ বন্দিশিবির পরিদর্শন করতেন নিয়মিত। ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে স্বৈরাচার হিটলারের অন্যতম সহযোগী এস এস বাহিনী প্রধান হাইনরিশ হিমলার দক্ষিন পোল্যান্ডে অশউইৎজ বন্দিশিবির পরিদর্শন করতেন নিয়মিত। ছবি: সংগৃহীত

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন পোল্যান্ডের অশউইৎজে স্থাপিত কুখ্যাত বন্দীশিবির মু্ক্তির ৭৩ বছর পূর্তি অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন জার্মানিসহ দখলকৃত দেশগুলোতে স্থাপিত বন্দীশিবিরগুলোর মধ্যে এই বন্দীশিবিরটি ছিল সব থেকে বড়। ১৯৪৫ সালের ২৭ জানুয়ারি সোভিয়েত লাল ফৌজ এই বন্দী শিবিরটি মুক্ত করেছিল।

নাৎসি হিটলারের জার্মানিতে ও দখলকৃত ইউরোপের নানা দেশে অসংখ্য বন্দীশিবিরের মধ্যে অশউইৎজ নির্মমভাবে বন্দী হত্যার জন্য কুখ্যাত হয়েছিল। যুদ্ধকালীন ১৯৪০ থেকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত সারা ইউরোপের বিভিন্ন স্থান থেকে যুদ্ধবন্দী ধরে আনা হয় এই অশউইৎজে। তাদের মধ্য প্রায় এগারো লাখ বন্দীকে এই বন্দী শিবিরে পৌঁছানো মাত্র রাসায়নিক গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে হত্যা করা হয়।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুতেই হিটলারের নাৎসি বাহিনী পোল্যান্ড দখল করে নেয়। স্বৈরাচার হিটলারের অন্যতম সহযোগী এস এস বাহিনীর প্রধান হাইনরিশ হিমলার যুদ্ধের শুরুতেই দক্ষিণ পোল্যান্ডে অশউইৎজ বন্দিশিবির স্থাপনের নির্দেশ দেন। হিটলারের ন্যাশনাল সোশ্যালিস্টিক পার্টির নিজস্ব এস এস গোয়েন্দা বাহিনী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময়ে নির্মম ও ত্রাস হিসেবে পরিচিত পেয়েছিল।

অশউইৎজ বন্দী শিবিরের নারকীয় হত্যাযজ্ঞের বিচার হয় ১৯৬৩ ও ১৯৬৪ সালে। যদিও যুদ্ধ শেষে নাৎসিরা বন্দীশিবিরের অধিকাংশ তথ্য নষ্ট করে ফেলা হয়, তবু জার্মানির বাডেনভুর্টেনবের্গ রাজ্যের লুডভিগবুর্গ শহরে অবস্থিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিষয়ক কেন্দ্রীয় মহাফেজখানায় এখনো বিশ্বযুদ্ধ বিষয়ক অনেক দলিল জমা রয়েছে।

অশউইৎজ বন্দী শিবিরে বন্দী ছিলেন এমন একজন ম্যাক্স আইসেন। ম্যাক্স আইসেন পনেরো বছর বয়সে পরিবারের সবার সঙ্গে ধরা পড়েন নাৎসি বাহিনীর হাতে। পরে অধিকৃত হাঙ্গেরি থেকে বন্দী বোঝাই ট্রেন যোগে পোল্যান্ডের অশউইৎজ বন্দীশিবিরে আসতে হয়েছিল তাঁকে। ট্রেন থেকে নামার পরই বন্দী বাছাই পর্বে তাঁর বাবা ও চাচাকে আলাদা করা হয়েছিল। যাওয়ার সময় বাবা ম্যাক্সকে বলেছিলেন, ‘তুই বেঁচে থাকলে বিশ্ববাসীকে নাৎসি বাহিনী কর্তৃক আমাদের অসহনীয় বন্দী জীবনের কথা জানাবি।’

এরপর অসহায় বাবা পুরোনো এক বন্দীকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমার পরিবারের সঙ্গে আবার কখন মিলিত হওয়ার সুযোগ মিলবে?’ সেই বন্দী তখন বন্দীদের হত্যার জন্য ব্যবহৃত গ্যাস চেম্বারের লম্বা চিমনির ধোঁয়ার দিকে হাত তুলে বলেছিল, ‘ওই চিমনির ধোঁয়ার মাঝে তোমার পরিবারের দেখা মিলবে।’

ম্যাক্স আইসেন এই কুখ্যাত অশউইৎজ বন্দীশিবিরে তাঁর ছোট বোন, দুই ভাই, বাবা, মা, চাচা-চাচি ও দাদা-দাদিকে চিরতরের জন্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। দুই বছর আগে ২০১৬ সালের ২১ এপ্রিল জার্মানির লুনেবুর্গে অশউইৎজ বন্দীশিবিরে কর্মরত হিসাবরক্ষক ৯৩ বছর বয়সী অসকার গ্রোয়েনিংয়ের বিরুদ্ধে আদালতের শুনানিতে এই মর্মভেদী সাক্ষ্য দিয়েছেন ম্যাক্স।

২০০৫ সাল থেকে অশউইৎজ বন্দীশিবির মুক্তি দিবসটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।