কম খরচে ট্রেনে চড়ে দারুণ খুশি তারা

>
ট্রেনে চড়ছে যাত্রীরা।  এএফপি
ট্রেনে চড়ছে যাত্রীরা। এএফপি


* ২০০৬ সালে বন্ধ হওয়ার পর আবার চালু রেলপথ
* ট্রেনের ভাড়া মাত্র ৫০ সেন্ট
* কোম্বিসের (বাস) ন্যূনতম ভাড়া দুই ডলার

কাউড্রাই পার্ক থেকে বুলাওয়ে। সূর্যোদয়ের সময় জিম্বাবুয়ের একমাত্র কমিউটার ট্রেন ছুটে চলে হাজার দুয়েক যাত্রী নিয়ে। বিস্তীর্ণ ভুট্টাখেত বনবাদাড় পেরিয়ে ছুটে চলে ট্রেনটি। খাদের তলানিতে থাকা অর্থনীতির দেশটিতে জনগণের আশার একমাত্র সলতে এখন রেল। ট্রেনের ইঞ্জিনেই অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর স্বপ্ন এখন সরকারের চোখেও।

কাউড্রাই পার্ক শহরের দুই প্রান্ত থেকে বুলাওয়ের পথে আগে দুটি রেললাইন ছিল। রাজধানী হারারেতে আসার রেলপথ ছিল তিনটি। ভাড়া কম হওয়ায় ট্রেনগুলোকে তখন বলা হতো ‘ফ্রিডম (স্বাধীনতা) ট্রেন’। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সময়ে তৈরি এই রেল পরিষেবা ২০০৬ সালে বন্ধ হয়ে যায়। রবার্ট মুগাবে তখন দেশটির প্রেসিডেন্ট। প্রায় ৪০ বছর জিম্বাবুয়ে শাসন করা মুগাবের সময়েই দক্ষিণ আফ্রিকার এই দেশের অর্থনীতির রেকর্ডে ধস নামে। ২০১৭ সালে ক্ষমতা থেকে উৎখাত হন মুগাবে। মন্দ অর্থনীতির ধাক্কা সামলে উঠতে বর্তমান প্রেসিডেন্ট এমারসন মানাঙ্গাগুয়ারও নাকাল দশা।

মানাঙ্গাগুয়ার সরকার গত মাসে জ্বালানির মূল্য দ্বিগুণের বেশি বাড়ানোর ঘোষণা দেয়। এর ফলে সহিংস বিক্ষোভে নামে জনতা। কোম্বিসের (মিনিবাস) ভাড়া বেড়েছে কয়েক গুণ। এই অবস্থায় ১৩ বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের নভেম্বরে রেলসেবা চালু করেন মানাঙ্গাগুয়া। কাউড্রাই পার্ক থেকে জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর বুলাওয়ে পর্যন্ত রেললাইন সংস্কারে এই আকালের মধ্যেও খরচ করতে হয়েছে ২৫ লাখ মার্কিন ডলার। সরকারের সেই বিনিয়োগ বৃথা যায়নি। জনগণ এখন দারুণ খুশি ট্রেনে চড়তে পেরে। কারণ, উচ্চ ভাড়ার কোম্বিসে চড়া এখন অনেকের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। কাউড্রাই পার্ক থেকে বুলাওয়ে পথে কোম্বিসের ন্যূনতম ভাড়া দুই ডলার। অথচ ট্রেনের ভাড়া মাত্র ৫০ সেন্ট।

কাউড্রাই পার্ক থেকে কমিউটার ট্রেনটি ছাড়ে সকাল ছয়টায়। তবে সেখানে প্ল্যাটফর্মসহ কোনো অবকাঠামো নেই। পুরোনো একটি বগিকে বানানো হয়েছে অস্থায়ী টিকিটঘর। কমিউটার ট্রেনটির অনেক বগিতে লেখা ‘আরআর’ (রোডেশিয়ান রেলওয়ে), যা মনে করিয়ে দেয় ১৯৮০ সালে পাওয়া স্বাধীনতার আগের স্মৃতি। কাউড্রাই থেকে বুলাওয়ের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার। এই পথের একমাত্র ট্রেন হওয়ায় ২৪টি বগিতেই যাত্রী থাকে গাদাগাদি। এটি বুলাওয়েতে পৌঁছে সকাল সাতটার কিছু পর। যাত্রীদের কেউ শ্রমিক, কেউ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কেউ সওদা করতে বুলাওয়ে আসা।

জিম্বাবুয়েতে ট্রেনযাত্রা কম রোমাঞ্চকর নয়। জাম্বিয়ার ভিক্টোরিয়া জলপ্রপাতের মধ্য দিয়ে গেছে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সময়ে তৈরি রেললাইন। ১৯০৭ সালে চালু হওয়ার পর হারারে থেকে বুলাওয়ের ট্রেনগুলো একসময় বিদ্যুচ্চালিত ছিল। এখনকার ট্রেনগুলো ডিজেলচালিত। ধ্বংসপ্রায় সংকেতব্যবস্থার কারণে ট্রেনচালকেরা প্রায়ই মুঠোফোনে বা হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠিয়ে লাইনসম্যানের সঙ্গে যোগাযোগে বাধ্য হন। রেলওয়ের জনসংযোগ বিভাগের প্রধান নিয়াশা মারাভানিকা বলেন, ‘এখনই সময় বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে রেল পুনর্জাগরণের। আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলের জন্য এই রেল হৃৎস্পন্দনের মতো।’