কাশ্মীরের হুরিয়াত নেতাদের নিরাপত্তারক্ষী প্রত্যাহার

পুলওয়ামার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতাদের পুলিশি প্রহরা তুলে নেওয়া হলো। জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসন আজ রোববার এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। শুধু পুলিশি প্রহরাই নয়, বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের জন্য বরাদ্দ সরকারি গাড়িও প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন জানিয়ে দিয়েছে, হুরিয়ত নেতাদের নিরাপত্তার কোনো দায়ই আর সরকারের থাকছে না। 

আপাতত যাঁদের পুলিশি প্রহরা প্রত্যাহার করা হচ্ছে তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মিরওয়াইজ ওমর ফারুক, আবদুল গনি ভাট, বিলাল সোম, হাসিম কুরেশি ও সাবির শাহ। এই তালিকায় সৈয়দ আলি শাহ গিলানি ও ইয়াসিন মালিকের নাম নেই। গিলানি অবশ্য গৃহবন্দী। তবে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের তালিকা যে এখানেই শেষ নয়, সরকারি নির্দেশে সেই ইঙ্গিত স্পষ্ট। তাতে বলা হয়েছে, আর কোনো নেতা সরকারি সুবিধা পান কি না, দেখা হচ্ছে। পেলে তা প্রত্যাহার করা হবে।
হুরিয়ত নেতাদের এক মুখপাত্র অবশ্য জানিয়েছেন, তাঁরা কোনো নিরাপত্তা চাননি। সরকার মনে করেছে বলে দিয়েছিল। এখন মনে করছে তুলে নেবে, তাই তুলে নিচ্ছে।

গত বৃহস্পতিবার কাশ্মীর উপত্যকায় শ্রীনগরের ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে পুলওয়ামার অবন্তীপুরায় ভারতীয় কেন্দ্রীয় নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী সিআরপিএফের কনভয়ের ওপর আত্মঘাতী হামলায় ৪০ জন জওয়ান নিহত হন। হামলার পরের দিনই কাশ্মীর যান কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। সেখানে বলেন, উপত্যকায় এমন কেউ কেউ রয়েছেন, যাঁদের সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা ও সে দেশের জঙ্গিদের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। এসব মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ওই মন্তব্য ও আজকের সিদ্ধান্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ। স্পষ্টতই বোঝা যাচ্ছে, এই হামলার পর ভারত এখন পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টির পথে এগোচ্ছে।

পাকিস্তানের ওপর সেই চাপ বহুমুখী। গত শুক্রবার পাকিস্তানকে দেওয়া মোস্ট ফেভারড নেশনস বা এমএফএন মর্যাদা ভারত প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯৯৬ সালে পাকিস্তানকে এই সুবিধা ভারত দিয়েছিল যাতে পাকিস্তানি পণ্য ভারতে সহজলভ্য হয়। পাকিস্তান অবশ্য ভারতকে সেই সুবিধা আজও দেয়নি। গতকাল শনিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি পাকিস্তানি পণ্যের ওপর ২০০ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির কথা ঘোষণা করেন। এই সিদ্ধান্ত ভারত-পাক বাণিজ্যে যে বিশেষ প্রভাব ফেলবে, তা নয়। এই দুই দেশের বার্ষিক মোট বাণিজ্য ২০০ কোটি রুপির (বাংলাদেশ-ভারত দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগ) কিছু বেশি। বেশিটাই ভারতের পক্ষে। বাণিজ্যিক এই নিষেধাজ্ঞা ছাড়াও ভারত কূটনৈতিক পর্যায়ে তৎপরতা বাড়িয়েছে। পররাষ্ট্রসচিব বিজয় গোখেল ইতিমধ্যেই জি-৫ গোষ্ঠীভুক্ত দেশসহ প্রায় ২৫টি দেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে কথা বলেছেন। উদ্দেশ্য, পাকিস্তানের ওপর চাপ সৃষ্টি। আন্তর্জাতিক এই জনমত গড়ার পাশাপাশি সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো প্রত্যাঘাতের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেই দিয়েছেন, সামরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণের পূর্ণ অধিকার সেনানীদের দেওয়া হয়েছে।

পুলওয়ামার ঘটনার রেশ ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে। জম্মুতে প্রতিবাদে শামিল হয়েছে একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন। তাদের আক্রমণে কাশ্মীর এলাকায় আহত হয়েছেন প্রায় ৪০ জন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জম্মুতে জারি করা হয়েছে কারফিউ। নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী। উত্তরাখন্ডের রাজধানী দেরাদুনে এক মেডিকেল কলেজে কাশ্মীরি ছাত্রছাত্রীদের ওপরও হামলা হয়েছে। তাদের কাশ্মীরে চলে যাওয়ার হুমকি দেওয়া হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিল বের হচ্ছে। উত্তেজনাও ছড়াচ্ছে। কাশ্মীরিদের নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন রাজ্যে হেল্প লাইন চালু করা হয়েছে।