জম্মু-কাশ্মীরে হামলা: ফেসবুক পোস্ট নিয়ে উত্তাপ

জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে কলকাতায় বামফ্রন্টের মিছিল। ছবি: প্রথম আলো
জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার প্রতিবাদে কলকাতায় বামফ্রন্টের মিছিল। ছবি: প্রথম আলো

ভারতের জম্মু–কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ফেসবুকে দেওয়া কিছু পোস্টকে ঘিরে পশ্চিমবঙ্গজুড়ে উত্তাপ দেখা দিয়েছে। পোস্টদাতাদের হুমকি-ধমকি দেওয়াসহ মারপিট করা হয়েছে। এক কলেজছাত্রীকে ধর্ষণেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে। ওই সব পোস্টকে ‘দেশপ্রেম বোধে আঘাত’ হিসেবে উল্লেখ করে বিতর্কিত বলে দাবি করা হচ্ছে।

ভারতনিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে আত্মঘাতী হামলায় আধাসামরিক বাহিনীর ৪০ সদস্য নিহত হয়। পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ এ হামলার দায় স্বীকার করেছে।

হামলার ঘটনা নিয়ে ভারতের নানা রাজ্যের মতো পশ্চিমবঙ্গও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সরব ছিল। তবে একটি পক্ষের ভাষ্য, অনেকের পোস্ট ছিল বিতর্কিত। সেসব পোস্ট ভারতের দেশপ্রেম বোধে আঘাত হেনেছে।

বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে উল্লেখ করা হয়েছে, এ ধরনের ‘বিতর্কিত’ পোস্টের কারণে গতকাল রোববার সকালে পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বনগাঁয় এক স্কুলশিক্ষকের বাড়িতে চড়াও হয় বিক্ষুব্ধ লোকজন। ওই স্কুলশিক্ষক জানিয়েছেন, গতকাল সকালে ৪০ থেকে ৫০ জনের একটি দল তাঁর বাড়িতে চড়াও হয়। বাড়িঘর ভাঙচুর করে। এমনকি তাঁকে চড়–থাপ্পড়ও মারা হয়। তাঁর বাড়ির দরজা ভাঙচুর করা হয়। তিনি পরে ওই পোস্ট সরিয়ে দেন।

পরে নিরাপত্তার অভাবে ওই শিক্ষক পরিবার–পরিজন নিয়ে এলাকা থেকে পালিয়ে যান।

এর আগের দিন শনিবার উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ায় পুলওয়ামার ঘটনার প্রতিবাদে আয়োজিত এক বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিয়েছিলেন হাবড়ার শ্রীচৈতন্য কলেজের ছাত্র অর্পণ রক্ষিত। বাড়ি ফিরে হামলার ঘটনার ওপর ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন তিনি। পরে এলাকার কিছু মানুষ গতকাল তাঁর বাড়িতে গিয়ে ওই পোস্টটি সরিয়ে ফেলার দাবি তোলে। অর্পণ সেই দাবি মেনে না নিলে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয়। এ নিয়ে এলাকায় উত্তেজনা ছড়ালে পুলিশ এসে আটক করে অর্পণকে।

পুলিশ বলেছে, ওই পোস্ট নিয়ে উত্তেজনা ছড়ানোর কারণে অর্পণকে আটক করা হয়েছে। তবে অর্পণকে সমর্থন জানিয়ে তাঁর মুক্তির দাবিতে হাবড়া থানার সামনে বিক্ষোভ করেছে আরেকটি পক্ষ।

শিলিগুড়ির অরবিন্দনগরে এক কলেজছাত্রীর ফেসবুক পোস্ট নিয়েও এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর বাড়ির সামনে বহু মানুষ জড়ো হয়ে ঢিল ছোড়ে। তাঁকে ধর্ষণেরও হুমকি দেওয়া হয়। এই ঘটনার পর শিলিগুড়ির পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই ছাত্রী এবং তাঁর মা ও ভাইকে পুলিশ ফাঁড়িতে নিয়ে আসে।

কলকাতায় পড়ুয়া কোচবিহারের শিক্ষার্থীর পোস্ট নিয়েও স্থানীয় লোকজন ক্ষুব্ধ হয়। ওই শিক্ষার্থী পোস্ট দেওয়ার কিছুক্ষণ পর মুছে ফেলেও বিতর্ক এড়াতে পারেননি। এর আগেই স্থানীয় লোকজন তা জেনে ফেলায় ‘দেশবিরোধী’ আখ্যায়িত করে ওই যুবকের বাড়িতে চড়াও হয়। কিন্তু ওই শিক্ষার্থীকে বাড়িতে না পেয়ে তাঁর বাবা-মাকে হেনস্তা করা হয়।

একই এলাকার আরেক যুবকের পোস্ট নিয়ে ক্ষুব্ধ লোকজন তাঁকে বাড়ি থেকে বের করে এনে প্রকাশ্যে কান ধরে ওঠবস করায়। এই ঘটনার পর নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন জানিয়ে ওই যুবকের অভিভাবকেরা গতকাল রাতে স্থানীয় থানায় গিয়ে সাহায্য চেয়েছেন।

এদিকে রাজ্যজুড়ে যুদ্ধের বিরুদ্ধে, শান্তির পক্ষে এবং পাকিস্তানি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদ মিছিল, শান্তি মিছিল ও মোমবাতি মিছিল অব্যাহত রেখেছে।