জঙ্গি শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল করেছে যুক্তরাজ্য

২০১৫ সালে লন্ডন ছেড়ে আইএসের উদ্দেশে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন শামীমা বেগম। ছবি: টুইটার
২০১৫ সালে লন্ডন ছেড়ে আইএসের উদ্দেশে সিরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছিলেন শামীমা বেগম। ছবি: টুইটার

আন্তর্জাতিক জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে যোগ দেওয়া শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিলে ব্রিটিশ সরকারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আইনি মোকাবিলা করবে তাঁর পরিবার। ব্রিটিশ সরকারের মতে, দেশের নাগরিকত্ব হারালেও রাষ্ট্রহীন হবেন না শামীমা। মা-বাবার সূত্রে তিনি বাংলাদেশের নাগরিক। তবে শামীমার পরিবারের আইনজীবী বলছেন, শামীমাকে বাংলাদেশ সরকার চেনে না। এদিকে শামীমার সন্তানের নাগরিকত্ব নিয়েও শুরু হয়েছে জটিলতা। এ ক্ষেত্রেও উঠে আসছে বাংলাদেশের নাম।

মঙ্গলবার যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শামীমার মায়ের কাছে লেখা এক চিঠিতে শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। শামীমা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। নাগরিকত্ব বাতিলের ফলে শামীমা বেগম রাষ্ট্রহীন হবেন না। তিনি বাংলাদেশে ফিরতে পারবেন, এমন যুক্তি থেকেই শামীমার নাগরিকত্ব বাতিল করা হয়েছে।
শামীমার পরিবারের আইনজীবী জানিয়েছেন, সরকারের এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে তাঁরা আইনি লড়াই করবেন।

পূর্ব লন্ডনের বেথনাল গ্রিন একাডেমির ছাত্রী শামীমা তাঁর স্কুলের দুই বন্ধু খাদিজা সুলতানা ও আমিরা আবাসের সঙ্গে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্য ছেড়ে যান। খাদিজা সুলতানা বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে আমিরা আবাসের ভাগ্যে কী ঘটেছে, তা জানা যায়নি।
সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের ‘দ্য টাইমস’-এর সাংবাদিক অ্যান্টনি লয়েড সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় একটি শরণার্থী শিবিরে সাক্ষাৎ পান শামীমার। ওই সাংবাদিককে শামীমা বলেন, তিনি নয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এখন যেকোনো দিন তাঁর সন্তানের জন্ম হতে পারে। এর আগে অপুষ্টি আর রোগে ভুগে তাঁর দুই সন্তানের মৃত্যু হয়েছে। সাক্ষাৎকারে শামীমা যুক্তরাজ্যে ফিরে আসার আকুতি জানান।

বর্তমানে ১৯ বছর বয়সী শামীমা গত রোববার এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন।

শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে বলা হয়, তাদের বিশ্বাস, নাগরিকত্ব বাতিলের ফলে শামীমা রাষ্ট্রহীন হবেন না। কারণ, তিনি বাংলাদেশেরও নাগরিক। শামীমার সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে তাঁকে নাগরিকত্ব বাতিলের এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়ার অনুরোধ করা হয় তাঁর মায়ের কাছে।

যুক্তরাজ্যের সন্ত্রাসবিষয়ক আইনের সাবেক স্বাধীন পর্যালোচক আইনজীবী লর্ড কারলাইল বিবিসিকে বলেন, শামীমার মা-বাবা বাংলাদেশের নাগরিক। সেই হিসেবে শামীমাও বাংলাদেশি নাগরিক। বাংলাদেশের আইনে সেই নাগরিকত্ব নেওয়ার অধিকার রয়েছে। ফলে, ব্রিটিশ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হলেও শামীমা রাষ্ট্রহীন হবেন না।

প্রসঙ্গত, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী কাউকে নাগরিকত্ব বাতিল করে রাষ্ট্রহীন করা যায় না। একাধিক দেশের নাগরিকত্ব থাকলে তবে কোনো দেশ নাগরিকত্ব বাতিলের এই সুযোগ নিতে পারে। আবার শামীমার বয়স ১৮ পার হয়ে যাওয়ায় তিনি মা-বাবার ওপর নির্ভরশীল হিসেবেও বিবেচিত হবেন না।

শামীমার পরিবারের আইনজীবী তাসনিম আকুঞ্জে বলেছেন, সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করতে আইনি সব পথ তাঁরা খতিয়ে দেখছেন। যুক্তরাজ্যের ‘ইনডিপেনডেন্ট’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার শামীমাকে চেনে না। শামীমার কখনো বাংলাদেশি পাসপোর্ট ছিল না। ব্রিটিশ নাগরিকত্ব বাতিল হলে শামীমা ও তাঁর সন্তান রাষ্ট্রহীন হয়ে পড়বে।

বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে শামীমাও বলেছেন, তাঁর বাংলাদেশি পাসপোর্ট নেই এবং তিনি কখনো বাংলাদেশে ছিলেন না।

এদিকে শামীমার সন্তানের নাগরিকত্ব নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর সন্তান কোন দেশের নাগরিক হবে, তা নিয়ে নানান আলোচনা শুরু হয়েছে। তাঁর নবজাতক সন্তানের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ মা-বাবার নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার আগে সন্তান জন্ম নিলে সেই সন্তানকে ব্রিটিশ নাগরিক বলে বিবেচনা করা হবে। তবে সম্ভাব্য কোনো ঝুঁকির কথা তুলে ধরে সেই শিশুরও নাগরিকত্ব একসময় বাতিল করার ক্ষমতা রয়েছে কর্তৃপক্ষের।

এ প্রসঙ্গে লর্ড কারলাইল বলেন, শামীমার চেয়ে তাঁর সন্তান আরও জটিল অবস্থায় রয়েছে। সন্তানের বাবা ডাচ হওয়ায় সে ডাচ নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। মায়ের কারণে সে ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হতে পারে এবং এই সন্তান ‘সম্ভবত বাংলাদেশি নাগরিক’ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে।

শামীমার নাগরিকত্ব বাতিলের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে ব্রিটিশ এমপিদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। কনজারভেটিভ এমপি জর্জ ফ্রিম্যান বলেছেন, এর মাধ্যমে ‘বিপজ্জনক নজির স্থাপন’ করা হবে। শামীমা এ দেশে জন্মেছে, পড়াশোনা করেছে। তাঁর দায়িত্বও এ দেশের। তাঁকে দেশে ফিরিয়ে এনে আদালতের মুখোমুখি করা উচিত।

আরেক এমপি রবার্ট হ্যালফন সরকারের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, সরকার একদম সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে।