বিদেশি সাহায্য নিয়ে ভেনেজুয়েলা সীমান্তে সংঘর্ষ

সরকারের বাধার মুখে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সাহায্য আনা নিয়ে ভেনেজুয়েলায় ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে
সরকারের বাধার মুখে সীমান্ত দিয়ে বিদেশি সাহায্য আনা নিয়ে ভেনেজুয়েলায় ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। ছবি: বিবিসির সৌজন্যে

সরকারের বাধার মুখে সীমান্ত দিয়ে বিরোধী দলের বিদেশি সাহায্য আনা নিয়ে ভেনেজুয়েলায় ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। বিক্ষোভকারীদের রুখতে সেনাসদস্যরা রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করেছেন। সাহায্য আনা ঠেকাতে ভেনেজুয়েলার সীমান্তগুলো আংশিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো।

আজ রোববার বিবিসি অনলাইনের খবরে বলা হয়েছে, বিদেশি সাহায্য আনার পেছনে রয়েছেন ভেনেজুয়েলার বিরোধী দলের নেতা হুয়ান গুয়াইদো। গত মাসে তিনি নিজেকে অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন এবং খাদ্য, ওষুধসহ বিদেশি সাহায্য দেশে আনবেন বলে হুমকি দেন। স্বেচ্ছাসেবকদের সহায়তায় এই বিদেশি সাহায্য গতকাল দেশটিতে আনার চেষ্টা করা হয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুয়ান গুয়াইদো সরকারি বাধার মুখে তাঁর সমর্থকেরা বিদেশি সাহায্য এনেছে বলে দাবি করেন। তিনি এটিকে বীরোচিত কাজ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো বলেছেন, ভেনেজুয়েলায় বিদেশি সাহায্য আনায় জড়িত থাকার কারণে তিনি কলাম্বিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন।

ভেনেজুয়েলা-কলাম্বিয়া সীমান্ত দিয়ে সাহায্য বহনকারী ট্রাক থেকে মালামাল নামাচ্ছেন স্বঘোষিত অন্তর্বতীকালীন প্রেসিডেন্ট  হুয়ান গুয়াইদো সমর্থকেরা। এই ট্রাকে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সরকারের বিরুদ্ধে। ছবি: রয়টার্স
ভেনেজুয়েলা-কলাম্বিয়া সীমান্ত দিয়ে সাহায্য বহনকারী ট্রাক থেকে মালামাল নামাচ্ছেন স্বঘোষিত অন্তর্বতীকালীন প্রেসিডেন্ট হুয়ান গুয়াইদো সমর্থকেরা। এই ট্রাকে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে সরকারের বিরুদ্ধে। ছবি: রয়টার্স

ভেনেজুয়েলায় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। খাবার ও ওষুধের মতো মৌলিক পণ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছেন সেখানের জনগণ। অনেকে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। ২০১৫ সাল থেকে কমপক্ষে ২৭ লাখ মানুষ ভেনেজুয়েলা ছেড়ে পালিয়েছেন।

গুয়াইদো জোর দিয়ে বলছেন, লোকজনের সাহায্য প্রয়োজন। অন্যদিকে মাদুরো বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপের অংশ হিসেবে দেশের ভেতরে সাহায্য আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।

গতকাল ব্রাজিলের সঙ্গে ভেনেজুয়েলার সীমান্ত এলাকায় সংঘর্ষে সেনাদের গুলিতে কমপক্ষে দুজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি ছোড়ার ঘটনা মানবাধিকারের গুরুতর লঙ্ঘন।

গতকাল স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ছয়টায় কলাম্বিয়া সরকার জানিয়েছে, সীমান্তে আনুমানিক ৩০০ জন আহত হয়েছেন। ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকদের পাঠানো খবরে বিক্ষোভকারীদের গুরুতর আহত হওয়া, এমনকি কয়েকজন বিক্ষোভকারীর চোখ হারানোর তথ্য জানা গেছে। সাহায্যবোঝাই বেশ কিছু ট্রাক আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে।

কলাম্বিয়া সীমান্ত এলাকায় তিয়েনদিতাস সেতুতে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান হুয়ান গুয়াইদো। সে সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন কলাম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভান দুকে।

ভেনেজুয়েলার ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো ও হুয়ান গুয়াইদো
ভেনেজুয়েলার ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট নিকোলা মাদুরো ও হুয়ান গুয়াইদো

নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কিছু সদস্য তাঁদের পদ ছেড়ে দিয়েছেন। এমন সদস্যদের অভিনন্দন জানিয়ে গুয়াইদো বলেছেন, যাঁরা তাঁদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন, তাঁদের ‘সাধারণ ক্ষমা’ করা হবে। গতকাল রাত পর্যন্ত কমপক্ষে ৬০ জন সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে এসেছেন বলে জানিয়েছে কলাম্বিয়ার অভিবাসী সার্ভিস। যদিও বেশির ভাগ সেনাসদস্য এখনো প্রেসিডেন্ট মাদুরোর অনুগত আছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এক ভিডিওতে দেখা গেছে, চার সেনাসদস্য প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্টের নিন্দা করছেন এবং গুয়াইদোর প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন।

মাদুরোর অভিযোগ, গুয়াইদোকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সমর্থন দিচ্ছেন। মাদুরো ট্রাম্পকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘ভেনেজুয়েলা থেকে আপনার হাত সরান, ডোনাল্ড ট্রাম্প।’