পাকিস্তানের জঙ্গি ঘাঁটি উপড়ে ফেলতে ২১ মিনিটে ৬ হাজার ৩০০ কোটি রুপির সম্পদ ব্যবহার ভারতের

ভারতের বিমানবাহিনী ২১ মিনিটের ওই হামলায় মিরাজ ২০০০ থেকে ১০০০ কেজি ওজনের বোমা বর্ষণ করেছে। ছবি: সংগৃহীত
ভারতের বিমানবাহিনী ২১ মিনিটের ওই হামলায় মিরাজ ২০০০ থেকে ১০০০ কেজি ওজনের বোমা বর্ষণ করেছে। ছবি: সংগৃহীত

পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল) ভারতের বিমানবাহিনী মঙ্গলবার ভোরে হামলা চালায়। ওই হামলায় পাকিস্তানের জইশ-ই-মুহাম্মদ, হিজবুল্লাহ মুজাহেদিন ও লস্কর-ই-তাইয়েবার স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়ার দাবি করে ভারত। ভারতের বিমানবাহিনী ২১ মিনিটের ওই হামলায় মিরাজ ২০০০ থেকে ১০০০ কেজি ওজনের বোমা বর্ষণ করেছে। মোট পাঁচ থেকে ছয়টি বোমা ফেলা হয়েছে। শুধু বালাকোটে বোমা বর্ষণে ১ কোটি ‌৭ লাখ রুপি ব্যবহার করেছে ভারত।

ইন্ডিয়া টুডের খবরে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার ভোরে লেজার গাইডেড ১০০০ কেজি ওজনের বোমা হামলা চালানো হয়। এই বোমার একেকটির দাম ৫৬ লাখ ভারতীয় রুপি। পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের বালাকোট, মুজাফফরাবাদ, চোকথি তিনটি জায়গায় ২১ মিনিট ধরে চলে গোলা ও বোমা বর্ষণ। এই পুরো অভিযান সফল করতে ৬ হাজার ৩০০ কোটি রুপির সম্পদ ব্যবহার করেছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। প্রয়োজন হলে আরও ৩ হাজার ৬৮৬ কোটি রুপির যুদ্ধ সরঞ্জাম সংরক্ষিত হিসেবে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল।

কোনো বিমান হামলা ব্যর্থ হলে অথবা পাকিস্তানের পক্ষ থেকে পাল্টা হামলা হলে এসব যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করা হতো। বালাকোটে অভিযান চলাকালীন পাকিস্তানি আকাশসীমায় নজরদারি চালানোর জন্য এয়ারবোন ওয়ার্নিং এবং কন্ট্রোলিং সিস্টেম মোতায়েন করা হয়েছিল। অভিযান চলাকালীন একটি বিমান শুধু এই যন্ত্রের মাধ্যমে পাকিস্তানের আকাশ সীমায় নজরদারি চালিয়েছে, যার দাম প্রায় ১ হাজার ৭৫০ কোটি রুপি।

অভিযান চলাকালীন কোনো বিমানের জ্বালানি ফুরিয়ে গেলে আকাশপথেই যাতে জ্বালানি ভরা যায়, তার জন্য তৈরি ছিল বিশেষ বিমান। সেই বিশেষ বিমানের ট্যাংকারের দাম প্রায় ২২ কোটি রুপি। এ ছাড়া ৮০ কোটি রুপির মূল্যের ড্রোন আকাশে নজরদারি চালিয়েছে।

এ ছাড়া আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য ভারতীয় বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে তৈরি ছিল তিনটি রাশিয়ার তৈরি সুখোই সু থার্টি এম কে আই উড়োজাহাজ। এই সুখোই সু থার্টি এমকেআই উড়োজাহাজগুলোর প্রতিটির দাম ৩৫৮ কোটি রুপি। একই সঙ্গে প্রস্তুত ছিল পাঁচটি মিগ-২৯ এস যুদ্ধবিমান। মিগ-২৯ বিমানের প্রতিটির দাম ১৫৪ কোটি ভারতীয় রুপি। ১২টি মিরাজ ২০০০ বিমানে হামলা চালানো হয়েছে, তার একেকটির দাম ২১৪ কোটি রুপি। ‌‌

পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের বালাকোট, মুজাফফরাবাদ, চোকথিতে গোলা ও বোমা বর্ষণ সফল করতে ৬ হাজার ৩০০ কোটি রুপির সম্পদ ব্যবহার করেছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। ছবি: সংগৃহীত
পাকিস্তানশাসিত কাশ্মীরের বালাকোট, মুজাফফরাবাদ, চোকথিতে গোলা ও বোমা বর্ষণ সফল করতে ৬ হাজার ৩০০ কোটি রুপির সম্পদ ব্যবহার করেছে ভারতীয় বিমানবাহিনী। ছবি: সংগৃহীত

এগুলো ছাড়াও ভারতের গোয়ালিয়র এয়ারবেস থেকে হামলার জন্য প্রস্তুত রাখা ছিল আরও বিমান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি লেজার গাইডেড ২২৫ কেজি জিবিইউ-১২ বোমাও প্রস্তুত রাখা ছিল। এগুলো ১৯৭৬ সালে তৈরি। এই বোমাগুলোর প্রতিটির দাম ১৪ লাখ রুপি।

১৪ ফেব্রুয়ারির হামলার দায় স্বীকার করেছে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মুহাম্মদ। এর জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করছে ভারত। টাইমস অব ইন্ডিয়া অনলাইনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এর ফলে পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখায় (লাইন অব কন্ট্রোল) ভারতের বিমানবাহিনীর হামলায় ৩০০ জন জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ভারত। মঙ্গলবার ভোরে পাকিস্তানের জইশ-ই-মুহাম্মদ, হিজবুল্লাহ মুজাহেদিন ও লস্কর-ই-তাইয়েবার স্থাপনায় এ বিমান হামলা চালানো হয়।

আর পাকিস্তানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ভারতীয় বিমানবাহিনীর সেনারা নিয়ন্ত্রণরেখা লঙ্ঘন করে পাকিস্তানে প্রবেশ করেছিলেন। পাল্টা জবাব দিয়েছেন পাকিস্তানের সেনাসদস্যরাও। ভারতীয় যুদ্ধবিমানকে বাধ্য করা হয়েছে ফিরে যেতে। তবে কারও নিহত হওয়ার খবর অস্বীকার করেছে দেশটি।

ভারতীয় সূত্রের ভাষ্য, মঙ্গলবার স্থানীয় সময় ভোররাত সাড়ে তিনটায় ভারতীয় বিমানবাহিনীর মিরাজ-২০০০ যুদ্ধবিমান বালাকোটের শিবিরে হামলা চালায়। এ সময় জঙ্গিরা সবাই ঘুমাচ্ছিল।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীও জানত না, তাদের দেশের এতটা ভেতরে এই শিবিরে ভারতীয় বিমান হামলা চালাতে যাচ্ছে। তারা ভাবছিল, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর পাকিস্তাননিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ভারত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক চালাতে পারে।

ভারতীয় যুদ্ধবিমানের একজন পাইলটকে আটকের দাবি করে তাঁর ভিডিও প্রকাশ করেছে পাকিস্তান। যদিও কিছুক্ষণ পরেই সেই ভিডিও মুছে ফেলা হয়েছে। সেই ভিডিওতে একজন ব্যক্তিকে চোখ বাঁধা অবস্থায় দেখা যায়। ভারতের পক্ষ থেকে একজন পাইলট নিখোঁজ হওয়ার কথা স্বীকার করা হয়েছে।