বালাকোটই বিজেপির তুরুপের তাস

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বালাকোটে সত্যি সত্যিই কি জইশ-ই-মুহাম্মদের শিবির ধ্বংস হয়েছে? নিহত হয়েছে তিন থেকে সাড়ে তিন শ জঙ্গি? ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পরেও তর্কাতীতভাবে সেই রহস্যের সমাধান হলো না। তবে তাতে কি! ওই দাবি ও তাকে ঘিরে বিরোধীদের সমালোচনাই তপ্ত করে রেখেছে ভারতীয় রাজনীতিকে।

বিহার রাজ্যের রাজধানী পাটনায় গতকাল রোববার প্রথম নির্বাচনী সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আরও একবার এই প্রসঙ্গের অবতারণা করে একহাত নিলেন কংগ্রেসকে। বললেন, ‘আগেরবার উরি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়েও কংগ্রেস সন্দিহান ছিল। প্রমাণ চেয়েছিল। এবারেও বালাকোট অভিযানের সাফল্যের প্রমাণ চাইছে। আমার অবাক লাগে, বাহিনীর মনোবল ভাঙতে কংগ্রেসের এত আগ্রহ কেন? ওদের কথা তো শত্রুদেরই সাহায্য করছে?’ এরই পাশাপাশি বিরোধীদের কটাক্ষ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গালমন্দ করার একটা প্রতিযোগিতা ওরা শুরু করেছে। কিন্তু তা হলেও চৌকিদার নিজের দায়িত্ব পালনে সজাগ।’

স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে, ভারতের আসন্ন নির্বাচনে বালাকোট অভিযানই হয়ে গেছে শাসক দলের তুরুপের তাস। ঢেকে যাচ্ছে কৃষি ও কৃষক সমস্যা, রাফাল ঘিরে দুর্নীতির অভিযোগ, বছরে দুই কোটি চাকরি না দিতে পারার ‘ব্যর্থতা’, নোট বাতিলের ধাক্কা অথবা অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর রূপায়ণের সমস্যা। ভোটের দিন যত এগোবে, ততই মাথা তুলে ঋজু হয়ে দাঁড়াবে বালাকোটের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক-২’।

বালাকোটের ‘ধ্বংস’সংক্রান্ত ভারতীয় দাবি নিয়ে প্রথম প্রশ্ন তোলে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো। রয়টার্স, এপি, ওয়াশিংটন পোস্ট, হাফিংটন পোস্ট, বিবিসির সাংবাদিকেরা জানিয়েছিলেন, জাব্বা টপের আশপাশে ধ্বংসের কোনো ছবিই দেখা যায়নি। বোমায় ভূপাতিত কিছু পাইনগাছ, ফাঁকা মাঠে গর্তের চিহ্ন ও একজন গ্রামবাসীর আহত হওয়া ছাড়া পশ্চিমা সাংবাদিকদের নজরে ও গোচরে আর কিছু আসেনি। এই প্রথম ক্ষয়ক্ষতির অন্য একটা উপাখ্যান গতকাল প্রকাশিত হলো। ফার্স্ট পোস্ট–এ প্রকাশিত ইতালির সাংবাদিক ফ্রান্সেসা মারিনোর সেই প্রতিবেদন ভারতীয় দাবির অনেকটাই সমর্থন করছে।

পাকিস্তানি প্রশাসনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে লেখা সেই কাহিনি অনুযায়ী, মিরাজ-২০০০ থেকে বোমা বিস্ফোরণের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই পাকিস্তান বাহিনী বালাকোট থেকে অন্তত ৩৫ জনের লাশ সরিয়ে ফেলে। প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান অনুযায়ী মারিনো লিখেছেন, ‘বিমান হানার পরেই পাকিস্তানি প্রশাসন কর্মকর্তা ও সেনাবাহিনী গোটা অঞ্চল ঘিরে ফেলে। পুলিশদেরও সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। চিকিৎসকদেরও মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়।’ নিহত ব্যক্তিদের কয়েকজনের পরিচয়ও মারিনো দিয়েছেন। যেমন গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সাবেক কর্মকর্তা কর্নেল সেলিম, জঙ্গি প্রশিক্ষক মুফতি মইন, জইশ–ই–মুহম্মদের বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ উসমান গনি।

অবশ্য চর্চায় প্রবলভাবে রয়েছে মিগ-২১ ও এফ-১৬–এর ‘ডগফাইট’ ও উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানের পাঠানো শেষ বার্তা। সেনা সূত্র অনুযায়ী, অভিনন্দনের মিগ-২১ ও পাকিস্তানের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের মধ্যে আকাশে ৮৬ সেকেন্ড ধরে লুকোচুরি খেলা চলে। এই খেলা শেষ হয় ‘ভিম্পেল আর ৭৩ এয়ার টু এয়ার মিসাইল’–এর আঘাতে। সেই আঘাতেই ভেঙে পড়ে পাকিস্তানের এফ-১৬। অভিনন্দনও ঢুকে যান ইতিহাসে। এফ-১৬কে নামিয়ে দেওয়ার সময় অভিনন্দনের মিগ-২১–এও পাকিস্তানি গোলা লাগে। দুটি বিমানই ভেঙে পড়ে পাকিস্তান–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে। এফ-১৬ বিমানের পাইলট শাহজাজ ছিলেন অভিনন্দনের মতোই উইং কমান্ডার। কিন্তু তাঁকে ভারতীয় ভেবে স্থানীয় মানুষজন মারধর করতে থাকে।  হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই তাঁর মৃত্যু হয়।

গত শনিবার ভারতের কাশ্মীরনীতি নিয়ে একটি প্রস্তাব পাস করে ৫৭টি দেশ নিয়ে গঠিত ওআইসি। প্রস্তাবে বলা হয়, ২০১৬ সাল থেকে কাশ্মীরে আরও বেশি বর্বর আচরণ করছে ভারত। তবে ওআইসির ওই দাবি নাকচ করে গতকাল ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ বলেছেন, এটা ভারতের সম্পূর্ণ নিজস্ব বিষয়। এখানে কারও হস্তক্ষেপ কাম্য নয়।

কাশ্মীরে ৬০ ঘণ্টায় গোলাগুলিতে নিহত ৬

ভারত–নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের কুপওয়ারায় ৬০ ঘণ্টা ধরে চলা গোলাগুলিতে নিরাপত্তা বাহিনীর পাঁচ সদস্যসহ নিহত হয়েছেন ছয়জন। এই গোলাগুলিতে দুই সন্ত্রাসী নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে ভারত। শুক্রবার রাতে কুপওয়ারার একটি বাড়িতে অভিযান গোলাগুলিতে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের আহত এক সদস্য গতকাল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এর আগে নিহত হন সিআরপিএফের দুই সদস্য ও রাজ্য পুলিশের দুজন। গোলাগুলিতে একজন বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন।

মানসিক যন্ত্রণা সইতে হয়েছে: অভিনন্দন

ভারতের বিমানবাহিনীর উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমান বলেছেন, পাকিস্তানে আটক অবস্থায় তাঁকে কোনো শারীরিক নির্যাতন করা হয়নি। তবে তাঁকে ব্যাপক ‘মানসিক যন্ত্রণা’ সইতে হয়েছে।