ভারত-পাকিস্তানের প্রকৃত খবর দিয়েছে 'দ্য হিন্দু'

প্রকৃত সাংবাদিকতা আর অপপ্রচারের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য দেখিয়ে দিয়েছে ভারতের দ্য হিন্দু পত্রিকা। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যেকার চরম উত্তেজনার মধ্যেও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে ভারতের দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচারিত সংবাদপত্রটি।

ভারতের অধিকাংশ টিভি চ্যানেল ও অন্যান্য সংবাদমাধ্যম যখন প্রকৃত অবস্থা তুলে না ধরে একতরফাভাবে ভারতের পক্ষে সাফাইমূলক খবর প্রকাশ করছে, তখন প্রকৃত খবর প্রকাশের সাহস দেখিয়েছে পত্রিকাটি। এ নিয়ে ‘দ্য ডিফারেন্স বিটুইন জার্নালিজম অ্যান্ড প্রোপাগান্ডা’ শিরোনামে একটি মতামত লিখেছেন দ্য হিন্দুর রিডার্স এডিটর এ এস পনিরসেলভান।

দ্য হিন্দুর ওই মতামত প্রতিবেদনে বলা হয়, বেশির ভাগ সময় দ্য হিন্দুর খবরের শিরোনাম ও বিষয়বস্তু অন্যদের চেয়ে আলাদা হয়েছে। এতে তাদের সমালোচনার মুখে পড়তে হলেও দিনে শেষ তাদের প্রতিবেদনগুলো সঠিক বলে প্রমাণিত হয়েছে। সাংবাদিকতা ও অপপ্রচারের পার্থক্য এমন হওয়া উচিত। সাংবাদিকদের রাজনীতি ও অসহিষ্ণুতার পক্ষে নাচানাচি না করে প্রকৃত প্রতিবেদন তুলে ধরা উচিত বলে মত দেন এ এস পনিরসেলভান।

দ্য হিন্দুর ওই মতামতধর্মী লেখায় বলা হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসে ভারতশাসিত জম্মু-কাশ্মীরে বোমা হামলায় দেশটির সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের (সিআরপিএফ) অন্তত ৪০ জন সদস্য নিহত হন। রাজ্যের পুলওয়ামা জেলার আওয়ান্তিপুরা এলাকায় ঘটে যাওয়া ওই হামলা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ভারতীয় বাহিনীর ওপর সবচেয়ে বড় হামলা। এই হামলা ঘিরে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোয় দুই ধরনের বর্ণনা দেখা যায়। এর মধ্যে একধরনের বর্ণনায় দেশপ্রেম জাগানো ও সংকীর্ণ অর্থে জাতীয়তার বিষয়টিকে তুলে ধরা হয়। তারা প্রকৃত সাংবাদিকতার পরিবর্তে অপপ্রচারকে গুরুত্ব দিয়েই খবরের দিকে মনোযোগ দেয়। অন্যদিকে, পেশাদার সাংবাদিকদের একটি দল ঘটনার প্রকৃত তথ্য তুলে ধরতে কাজ করে। তারা যুদ্ধের উপকরণ হিসেবে ব্যবহার হওয়ার চেয়ে প্রকৃত প্রতিবেদন নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা ধরে রাখে।

এ এস পনিরসেলভানের ভাষ্য, ভারত–পাকিস্তানের উত্তেজনার সময় দ্য হিন্দু যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বা যে ধরনের শিরোনাম ব্যবহার করেছে, যা প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরেছে এবং প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা নিরসনে কাজ করেছে। এখানে সাংবাদিকতা মূলত জনস্বার্থের বিষয়টি বিবেচনা করে করা হয়েছে। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দ্য হিন্দু একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম করেছিল ‘আইএএফ প্লেন শট ডাউন, পাইলট টেকেন ক্যাপটিভ বাই পাক আর্মি’। হিন্দুর এ শিরোনাম অনেক পাঠক প্রশংসা করেছেন, আবার অনেকেই এর নিন্দা করেছেন। যাঁরা এ শিরোনামকে দেশপ্রেমের সঙ্গে যায় না বলে মন্তব্য করেছেন, তাঁরা ব্রডকাস্ট সাংবাদিকদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা খুঁজেছেন। উত্তেজনার সময় অধিকাংশ ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম ঘৃণ্য রাজনীতি ও অসহিষ্ণুতার পক্ষে নাচানাচি করেছেন।

ভারতের বিমানবাহিনী পাকিস্তানের বালাকোটে হামলার পর থেকে অনেক টিভি চ্যানেলে পরিচয়হীন সূত্র ব্যবহার করে দাবি করে, এ হামলায় ৩০০ জঙ্গি নিহত হয়েছে। কিন্তু যখন এর আনুষ্ঠানিক তথ্য প্রকাশ পেল, তখন সরকারি মুখপাত্র প্রকৃত সংখ্যা অনুমান করার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করছেন। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, যারা বালাকোটের ওই অঞ্চলে যেতে পেরেছে, তারা ভারতের টিভি চ্যানেলগুলোকে হাস্যকর বলে প্রমাণ করে দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দ্য হিন্দুর পক্ষ থেকে ভারতীয় বৈমানিক অভিনন্দন ধরা পড়ার আগেই মার্জিত ও দায়িত্বশীল একটি বিশ্লেষণ প্রকাশ করা হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি ‘ইন্ডিয়াস অপশনস আফটার পুলওয়ামা’নামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

হ্যাপিমন জ্যাকবের ওই লেখায় পাকিস্তানে আক্রমণের ঝুঁকি ও কোনো বৈমানিক ধরা পড়লে কী হতে পারে, তার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল।

পনিরসেলভান মনে করেন, বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও অপপ্রচারের বিষয়টি ভাষার প্রয়োগের ওপর নির্ভর করে। নৈতিক সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে সৈনিক নিহত হওয়ার খবরকে নিহত হওয়ার খবর বলেই প্রকাশ করা হবে, তাকে ‘শহীদ’ বলে প্রচার চালানোর চেষ্টা করা হবে না।