ব্রেক্সিট প্রসঙ্গ: সবকিছু ভেস্তে যাওয়ার আগে 'শেষ সুযোগ'

ব্রেক্সিট নিয়ে ‘চূড়ান্ত পর্বের আলোচনা’ কিংবা ‘সমঝোতা শেষ ধাপে’—এমন কথা গত কয়েক মাসে বারবারই শোনা গেছে। আদতে কিছুই চূড়ান্ত বা শেষ হয়নি। অনিশ্চয়তা বরং বেড়েছে। তবে এবার আর সময়ক্ষেপণের সুযোগ নেই। সিদ্ধান্ত একটা নিতেই হবে। একটি চুক্তির মাধ্যমে সমঝোতার ভিত্তিতে বিচ্ছেদ কার্যকরে দীর্ঘ দুই বছরের যে চেষ্টা, তা বিফলে যাওয়ার আগে এটাই উভয় পক্ষের জন্য শেষ সুযোগ।

২৯ মার্চ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী মঙ্গলবার (১২ মার্চ) যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদনে আবার ভোটাভুটি হবে। তাঁর আগে চুক্তির কাঙ্ক্ষিত সংশোধন নিয়ে সৃষ্ট অচলাবস্থার সমাধানে সাপ্তাহিক ছুটির দিনেও (শনি ও রোববার) নিরলস কাজ করার ঘোষণা দিয়েছে ইইউ। তারা যুক্তরাজ্যকে শনিবারের মধ্যে ‘ব্যাকস্টপ’ বিষয়ে নতুন প্রস্তাব নিয়ে হাজির হওয়ার আহ্বান জানায়।

তবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে শুক্রবার লিঙ্কনশায়ারে দেওয়া বক্তৃতায় ইইউ নেতাদের উদ্দেশে বলেন, মঙ্গলবার ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু তার আগে ইইউ নেতাদেরও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপার আছে। ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা সুনির্দিষ্টভাবে ‘ব্যাকস্টপ’ বিষয়ে আপত্তি তুলে এর গ্রহণযোগ্য সমাধান দাবি করেছেন। এ দাবি পূরণ হলে তাঁরা চুক্তিটি অনুমোদন করবেন বলেও জানিয়ে দিয়েছেন। এখন ইইউর সিদ্ধান্তের ওপর চুক্তির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। চুক্তি ছাড়া বিচ্ছেদ কিংবা বিচ্ছেদ নিয়ে অনিশ্চয়তা দীর্ঘায়িত করার ফল কারও জন্য শুভ হবে না বলে স্মরণ করিয়ে দেন মে। সমঝোতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী মের এমন প্রকাশ্য আহ্বান উভয় পক্ষের মধ্যে চলমান চাপা উত্তেজনার বহিঃপ্রকাশ বলছেন বিশ্লেষকেরা।

দীর্ঘ প্রায় ১৮ মাসের চেষ্টার পর যুক্তরাজ্য ও ইইউ একটি চুক্তিতে পৌঁছায়। গত ১৫ জানুয়ারি যুক্তরাজ্যের সংসদে ২৩০ ভোটের বিশাল ব্যবধানে ওই চুক্তি প্রত্যাখ্যাত হয়। ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা এক প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে দাবি করেন, চুক্তিতে উল্লেখিত ‘ব্যাকস্টপ’ ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্য সংশোধন করা হলে তাঁরা চুক্তিতে সমর্থন দেবেন।

বিচ্ছেদের পর যুক্তরাজ্যের অংশ নর্দান আয়ারল্যান্ড এবং ইইউর সদস্য দেশ স্বাধীন আয়ারল্যান্ডের মধ্যকার সীমান্ত উন্মুক্ত রাখার কৌশলকে বলা হচ্ছে ‘ব্যাকস্টপ’। এই ব্যবস্থার ফলে যুক্তরাজ্য অনির্দিষ্টকালের জন্য ইইউ আইনের অধীনে আটকা পড়বে বলে ব্রিটিশ আইনপ্রণেতাদের আশঙ্কা। তাঁরা ব্যাকস্টপ ব্যবস্থা বাদ দেওয়ার আহ্বান জানান। অথবা এই ব্যবস্থা অনির্দিষ্টকালের জন্য হবে না, এমন নিশ্চয়তা চান।

প্রধানমন্ত্রী মে ‘ব্যাকস্টপ’ ব্যবস্থার সংশোধনের দাবি নিয়ে ইইউ নেতাদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। কিন্তু ইইউর তরফ থেকে বরাবরই সেই দাবি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ইইউ চুক্তি সংশোধনে নারাজ। তবে ‘ব্যাকস্টপ’ ব্যবস্থা চিরস্থায়ী হবে না, এমন রাজনৈতিক ঘোষণা দিতে রাজি। কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট নয় যুক্তরাজ্য। তারা চায় আইনি নিশ্চয়তা। সর্বশেষ বাকপটু রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত যুক্তরাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল জিওফ্রি কক্স সমঝোতায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তবে ইইউর তরফ থেকে নমনীয় হওয়ার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।

রাজনৈতিক ভাষ্যকাররা বলছেন, দাবি অনুযায়ী চুক্তির পরিবর্তন না হলে যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে চুক্তির পক্ষে-বিপক্ষে ভোটেরও কোনো তারতম্য হবে না।

চুক্তিটি পুনরায় প্রত্যাখ্যাত হলে চুক্তিবিহীন বিচ্ছেদ অথবা বিচ্ছেদের সময় পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পাবেন আইনপ্রণেতারা।

ব্রেক্সিটপন্থী হিসেবে পরিচিত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী লিয়াম ফক্স বিবিসিকে বলেন, ১২ মার্চ চুক্তিটি অনুমোদন না হলে বিচ্ছেদের দিনক্ষণ পিছিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা জোরালো হবে। কেননা অধিকাংশ আইনপ্রণেতা বিচ্ছেদের বিপক্ষে প্রচার চালিয়েছিলেন। ফলে বিচ্ছেদ কার্যকরের বিষয়টিকে তাঁরা প্রাধান্য দিচ্ছেন না।