নির্বাচনে দেব আর ভারতীর লড়াই

দেব
দেব

জমে উঠেছে পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা নির্বাচন। নির্বাচনী ময়দানে প্রার্থীরা নেমে পড়েছেন। জয় নিয়ে বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের মধ্যে চলছে পাল্টাপাল্টি চ্যালেঞ্জের লড়াই।

পশ্চিমবঙ্গে এবার তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৪২ জন প্রার্থীর মধ্যে পাঁচজন তারকা প্রার্থী দাঁড় করিয়েছেন। তাঁরা হলেন দেব, শতাব্দী রায়, মুনমুন সেন, মিমি চক্রবর্তী ও নুসরত জাহান।

তৃণমূল এই পাঁচ আসনে জয় নিয়ে নিশ্চিত। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে সংশয় রয়েছে। তাঁরা মনে করছেন, ২০১৪ সালে তারকা প্রার্থীরা যেভাবে সহজ জয় পেয়েছিলেন, এবার তা নাও হতে পারে। তারকা প্রার্থীরা কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারেন।

ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) এক নেতা বলেছেন, ভোটাররা তারকা প্রার্থীদের কথা শুনবেন। কিন্তু ভোট দেবেন বিজেপিকে। তাঁরা জানেন, দিল্লিতে সরকার গড়তে হলে চাই বিজেপিকে। কংগ্রেস অত দূর যেতে পারবে না। আর তৃণমূলের তো কথাই নেই। তারা তো পশ্চিমবঙ্গে সীমাবদ্ধ।

তৃণমূলের এই তারকা প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বাংলা সিনেমার নায়ক দেব। আসল নাম দীপক অধিকারী। তিনি ২০১৪ সালে প্রথম লোকসভা নির্বাচনে অংশ নেন। পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল আসন থেকে তৃণমূলের টিকিটে জয় পান। নিকটতম প্রার্থী ছিলেন সিপিআইয়ের সন্তোষ রানা। আর বিজেপির প্রার্থী ছিলেন মোহাম্মদ আলম। এবার এই আসনে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন ভারতী ঘোষ। ফলে, এই আসনে দেবের জয় অত সহজ হচ্ছে না। তাঁকে লড়াই করে জিততে হবে। ভারতী ঘোষও নাছোড়বান্দা। তিনিও বলছেন, এবার এই আসনে জিততে চলেছেন। মানুষ এবার ঝুঁকেছে বিজেপির দিকে। দেব সাংসদ হলেও এলাকার মানুষকে সেভাবে সময় দিতে পারেননি। শুটিং নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়েছে। ফলে দেবকে এবার ভারতী ঘোষের সঙ্গে কড়া চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে।

ভারতী ঘোষ
ভারতী ঘোষ



ভারতী ঘোষ সাবেক আইপিএস কর্মকর্তা। একটানা পাঁচ বছর তিনি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় পুলিশ সুপার হিসেবে কাজ করেছেন। জঙ্গলমহলে মাওবাদী এলাকায় সাফল্য দেখিয়েছেন। তিনিই মাওবাদীদের জীবনের মূলস্রোতে ফিরিয়ে এনেছেন। তাঁর আমলেই ২০১১ সালের ২৪ নভেম্বর যৌথ নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে জঙ্গলমহলে নিহত হন মাওবাদী নেতা কোটেশ্বর রাও ওরফে কিষেণজি।

ভারতী ঘোষ মুখ্যমন্ত্রী মমতার চেষ্টায় জঙ্গলমহলের হাল ফিরিয়েছিলেন। মমতাকে একসময় ‘মা’ বলে সম্বোধন করেছেন তিনি। বলেছেন, তিনিই জঙ্গলমহলের মা। ভারতী ঘোষ জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতেও কাজ করেছেন। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ব্যবস্থাপনায় স্নাতকোত্তর করেছেন। অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তা প্রথম যোগ দেন কলকাতার সিআইডিতে। সেখান থেকে ২০১১ সালে তাঁকে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার পদে নিয়ে আনা হয়। একটানা পাঁচ বছর এই পদে ছিলেন তিনি।

এক সময় তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের সঙ্গে ভারতীর সখ্য গড়ে ওঠে। মুকুল রায় বিজেপিতে যোগ দিলে ভারতী ঘোষের সঙ্গে মমতার সম্পর্ক শীতল হতে থাকে। একপর্যায়ে ভারতী ঘোষ বিজেপির দিকে ঝুঁকতে থাকেন। পরে ভারতী ঘোষকে পুলিশ সুপারের পদ থেকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয় ব্যারাকপুরের সশস্ত্র পুলিশ ব্যাটালিয়নে। এটাই মেনে নিতে পারেনি ভারতী ঘোষ। এরপরই তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। শুরু হয় ভারতী ঘোষের বিরুদ্ধে মামলা। উদ্ধার হয় তাঁর বাসভবন থেকে দুই কোটি টাকা ও প্রচুর সোনা। গ্রেপ্তার হন তাঁর স্বামী। পরে সুপ্রিম কোর্ট থেকে জামিনে মুক্তি পান।

ভারতী ঘোষ লড়ছেন অভিনেতা দেবের সঙ্গে। দেব বলেছেন, তিনি তাঁর জয়ের ব্যাপারে নিশ্চিত। আর ভারতী ঘোষ বলেছেন, ‘দেব ভালো ছেলে, ভালো অভিনেতা। ও আমার ভাইয়ের মতো। তবে ওর এই দলে দাঁড়ানো উচিত হয়নি।’ আবার দেব বলেছেন, ‘উনি আমাদের জেলার এসপি ছিলেন। ঘাটালে রাজ্য সরকারের উন্নয়নকাজে তিনি শামিল হয়েছিলেন। জেতা-হারা বড় কথা নয়, আমাদের লক্ষ্য হবে এই এলাকার উন্নয়নে শামিল হওয়া। ভারতী ঘোষকে আমার শুভেচ্ছা।’

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, দেবকে এবার জিততে হলে কঠোর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।