গ্রাম বাঁচাল বিড়াল

তাইওয়ানের উত্তরাঞ্চলের একটি গ্রাম হউতং। রাজধানী তাইপে থেকে ট্রেনে উত্তর-পূর্ব দিকে এক ঘণ্টার পথ। একটি অখ্যাত গ্রাম থেকে হউতংয়ের নাম এখন বিশ্বের অনেকেই জানে। অন্তত বিড়ালপ্রেমীরা তো অবশ্যই। গ্রামটি ‘বিড়াল গ্রাম’ নামেই এখন সমধিক পরিচিত।

উনিশ শতকের শুরুতে হউতং নিউ তাইপে সিটির অধীন ছিল। তাইওয়ানের তৎকালীন বৃহত্তম এবং প্রযুক্তিগতভাবে সবচেয়ে আধুনিক কয়লাক্ষেত্রটি ছিল এই হউতংয়েই। সে সময় স্থায়ী বাসিন্দা ও খনিশ্রমিক মিলিয়ে ছয় হাজার বাসিন্দার পদভারে মুখর ছিল হউতং। ওই শতকের শেষভাগে ১৯৯০ সালে কয়লাখনিটি পরিত্যক্ত হয়। হউতংয়েরও শনৈঃ শনৈঃ উন্নতি যায় থেমে। ক্রমে জনশূন্য হয়ে পড়তে শুরু করে গ্রামটি।

তরুণেরা জীবিকা ও উন্নত জীবনের সন্ধানে বড় বড় শহরে চলে যেতে শুরু করে। হউতং ক্রমে ঝিমিয়ে পড়া একটি ‘অতীত’-এ পরিণত হয়। বাসিন্দা নেমে আসে ১০০-তে। তাদেরও জীবিকার পথ ক্রমে সংকুচিত হয়ে আসে।

তবে এ সময় মানুষ কমলেও গ্রামটিতে হঠাৎ বিড়ালের সংখ্যা বেড়ে যায়। একটি-দুটি করে বিড়ালের সংখ্যা ক্রমে শতকের ঘর ছাড়িয়ে যায়। ২০১০ সালে এক বিড়ালপ্রেমী ব্লগার ও আলোকচিত্রী এই গ্রামের বিড়াল সম্পর্কে ব্লগে লেখা শুরু করেন। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বিড়ালপ্রেমীরা গ্রামটি ঘুরে দেখতে আসেন।

পর্যটকদের আনাগোনায় স্থানীয় বাসিন্দাদেরও আয়-উপার্জন বাড়তে থাকে। নড়েচড়ে বসে স্থানীয় সরকারও। তারা পর্যটনকে মাথায় রেখে গ্রামটি বিড়ালকে উপজীব্য করে নতুনভাবে সাজাতে উদ্যোগ নেয়। তৈরি করা হয় বিড়াল আকৃতির সেতু, বিড়াল আঁকা ট্রাফিক সংকেত, বিড়াল পদচারী-সেতু, সজ্জায় বিড়ালময় ক্যাফে। মুক্ত চড়ে বেড়ানো বিড়ালগুলোর জন্য রাস্তার ধারে স্থাপন করা হয় খাওয়ার বাটি। সেখানে বিড়ালের খাবার রেখে যায় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবকেরা। নিউ তাইপে সিটির প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে বিড়ালগুলোকে নিয়মিত ভ্যাকসিন ও চিকিৎসাসেবা দেওয়ার উদ্যোগ।

২০১২ সালে হউতংয়ে আয়োজিত হয় বিড়াল ফানুস উৎসব। ২০১৪ সালে চালু হয় বিড়ালসম্পর্কিত একটি তথ্য ও শিক্ষাকেন্দ্র। নগর প্রশাসনের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, প্রায় ২৮৬টি বিড়াল রয়েছে হউতংয়ে। প্রতিবছর এখন ১০ লাখ দর্শনার্থী আসছে সেখানে।