যে শহরে যানজট নেই!

আসমারার রাস্তায় দেখা মিলবে না যানজটের। ছবি: রয়টার্স
আসমারার রাস্তায় দেখা মিলবে না যানজটের। ছবি: রয়টার্স

যানজট ঢাকাবাসীর রোজকার দুর্ভোগ। শুধু ঢাকা কেন, নিউইয়র্ক, মেক্সিকো সিটি, মুম্বাইসহ বিশ্বের অনেক শহরেই জীবনযাত্রা থেমে যায় যানজটে। কিন্তু অবিশ্বাস্য শোনালেও সত্য, এমন একটি শহর আছে, যে শহরে নেই কোনো যানজট। শহরটিতে নেই কোনো গাড়ির চাপ, আছে শুধু সারি সারি সাইকেল। শহরটির নাম আসমারা, আফ্রিকার দেশ ইরিত্রিয়ার রাজধানী।

শহরটিতে মানুষের সংখ্যা পাঁচ লাখের কাছাকাছি, যাঁদের বেশির ভাগেরই বেতন খুব কম। উচ্চ আমদানি কর ও জ্বালানি সংকটের কারণে দেশটিতে ইঞ্জিনচালিত যানবাহনের সংখ্যা হাতে গোনা। যে কারণে তাঁদের যাতায়াতের অন্যতম প্রধান বাহন সাইকেল। শিশু থেকে শুরু করে গৃহিণী ও বয়স্ক লোকজন সাইকেলে চলাফেরা করেন। এতে আসমারায় যানজট নেই। যানজটবিহীন রাস্তা, সঙ্গে সুন্দর আবহাওয়া মিলে আসমারা হয়ে উঠেছে সাইকেলচালকদের স্বর্গরাজ্য। আসমারায় সাইকেল তাই নিছক যান নয়, বরং এটি তাদের সংস্কৃতির একটি অংশে পরিণত হয়েছে।

বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, আসমারায় গেলে সবখানে সাইকেল মেরামতের দোকান চোখে পড়বে। অবশ্য ইরিত্রিয়ায় সাইকেলই প্রধান বাহন হয়ে ওঠার একটি ইতিহাস আছে। দীর্ঘ ৩০ বছরের চেষ্টার পরে ইথিওপিয়া থেকে স্বাধীন হয়েছে দেশটি। স্বাধীনতাপ্রাপ্তির পর অনেক দিন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল ইরিত্রিয়া। যে কারণে বিদেশ থেকে যানবাহন কিংবা জ্বালানি আমদানি করা দেশটির জন্য ভীষণ ব্যয়বহুল ছিল। বাধ্য হয়েই তাই সাইকেলের দিকে ঝুঁকতে হয়েছে দেশটির নাগরিকদের। এভাবে সাইকেল হয়ে উঠেছে যাতায়াতের প্রধান বাহন।

সব সময় চালাোনার মতো সাধারণ সাইকেল, পাহাড়ে আরোহণ বা প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার মতো সাইকেল—সবই মিলবে আসমারায়। শহরটিতে গণপরিবহন বলতে রয়েছে কিছু পুরোনো বাস। বাসের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় দীর্ঘ সময়। যে কারণে সাইকেলকেই নিজেদের প্রিয়তম বাহন ভাবেন শহরের বেশির ভাগ বাসিন্দা। ৩০ বছর বয়সী সালাম যেমন বিবিসিকে বলেছেন, ‘বাসগুলো এত পুরোনো আর সংখ্যায়ও এত কম! একটি সাইকেল এখানে আপনার প্রাণ বাঁচাবে।’

সাইকেল ব্যবহারের কারণে শহরটির পরিবেশও বেশ পরিচ্ছন্ন। ইরিত্রিয়া সরকার অনেক দিন ধরেই টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছে। গাড়ির বদলে সাইকেল ব্যবহারের পাশাপাশি প্লাস্টিকজাত পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার কমিয়ে আনা, বনায়ন ও বন সংরক্ষণ কর্মসূচিসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির সরকার।

দেশটির সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলাও সাইক্লিং। প্রতিযোগিতামূলক সাইক্লিংয়ে অংশ নেওয়া তাদের জন্য এক প্রকার গর্বের বিষয়। যার প্রমাণ পাওয়া যায় গ্র্যান্ড ট্যুর অব সাইক্লিংসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ইরিত্রিয়া জাতীয় সাইক্লিং দলের সাফল্য দেখলে।

গত বছরের জুলাইতে ইথিওপিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তির পর ২০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো দুই দেশের সীমান্ত খুলে গেছে। এতে করে ইথিওপিয়া থেকে সস্তায় পণ্য আমদানির সুযোগ হওয়ায় ইরিত্রিয়ার মানুষের নিত্যদিনের জীবনযাত্রার খরচ অনেকটাই কমেছে। কিন্তু তবুও সাইকেলকে তাঁরা নিজেদের প্রধান যানবাহন বানিয়ে রেখেছেন। সাইকেল যে শুধু আর যানবাহনই নয়, সাইকেল মিশে গেছে তাদের দৈনন্দিন জীবনে!