মেকে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ার সময় বাড়াতে চাপ দেবেন এমপিরা

কোনো চুক্তি ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) এড়াতে চান ব্রিটিশ এমপিরা। ছবি: রয়টার্স
কোনো চুক্তি ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) এড়াতে চান ব্রিটিশ এমপিরা। ছবি: রয়টার্স

কোনো চুক্তি ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) এড়াতে চান ব্রিটিশ এমপিরা। এমপিরা চান, প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ব্রেক্সিট প্রক্রিয়ার সময় বাড়ানোর জন্য ইইউর কাছে আবেদন করুক। এ জন্যই ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বাধ্য করার পক্ষে মত দিয়েছেন তাঁরা।

লেবার পার্টির পার্লামেন্ট সদস্য ইভেন্ট কুপারের নেতৃত্বে নিম্ন কক্ষ হাউস অব কমন্সে এই সিদ্ধান্ত ৩১৩ ভোটে পাস হয়। বিপক্ষে মাত্র এক ভোট কম পড়ে, ৩১২ ভোট।

আজ বৃহস্পতিবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। এবার আইন হতে হাউস অব লর্ডসে পাস হতে হবে এটি। এরপর ব্রেক্সিট প্রক্রিয়া বিলম্বিত করা হবে কি না, তা নির্ভর করবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্মতির ওপর।

সাবেক শ্রমমন্ত্রী ইভেন্ট কুপারের এই খসড়া আইনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীকে চাপ দেওয়া হবে ইইউর কাছে সময় চাওয়ার জন্য। এবং এই বিলম্বের দৈর্ঘ্য নির্ধারণ করার ক্ষমতা পাবেন সাংসদরা। গত ২৯ মার্চ বিচ্ছেদ কার্যকরের কথা ছিল। ব্রিটিশ রাজনীতিকদের অনৈক্যের কারণে তা হয়নি। দিনটি পিছিয়ে এখন ১২ এপ্রিল নির্ধারিত রয়েছে।

সরকারের এক মুখপাত্র জানান, এমপিদের এই বিলে সমর্থন হতাশাজনক।

এই ভোটাভুটির আগে ব্রেক্সিটের অচলাবস্থা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ওই সাক্ষাতে গঠনমূলক আলোচনা হয়েছে বলে জানান তাঁরা। আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আলোচনা চলবে বলে আশা করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার ব্রেক্সিট নিয়ে করণীয় ঠিক করতে মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী মে। সাত ঘণ্টাব্যাপী চলে সেই বৈঠক। কিন্তু অন্তঃকলহের কারণে তা ছিল ফলশূন্য। ওই বৈঠক শেষে আকস্মিক বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী মে বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিনের সাহায্য কামনা করেন। তিনি বলেন, বর্তমানে ১২ এপ্রিল নির্ধারিত বিচ্ছেদের দিনক্ষণ সম্ভাব্য স্বল্পতম সময়ের জন্য পেছাতে হবে। তার আগে লেবার নেতা জেরেমি করবিনের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক বিষয়ে একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে চান, যাতে চুক্তিটি সংসদে পাস হয়। মে বলেন, ভবিষ্যৎ সম্পর্ক বিষয়ে যে ভিন্নমত, সেটি বিচ্ছেদ চুক্তি (উইথড্রোয়াল অ্যাগ্রিমেন্ট) থেকে আলাদা। ইইউ বিচ্ছেদ চুক্তির পরিবর্তন করবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। তাই ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকলেও সম্পাদিত বিচ্ছেদ চুক্তির বিকল্প নেই। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানায়, করবিনের সঙ্গে সমঝোতা না হলেও বিচ্ছেদের দিনক্ষণ পেছানোর আবেদন করা হবে। সে ক্ষেত্রে ব্রেক্সিট নিয়ে করণীয় ঠিক করতে পার্লামেন্টে বিভিন্ন বিকল্প নিয়ে ভোটাভুটির আয়োজন করবে সরকার।

অর্থমন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড বলেন, তিনি আশা করছেন, ব্রাসেলসকে ব্রেক্সিট দীর্ঘ বিলম্বের করার জন্য জোর করা হবে। তিনি মনে করেন কোনও চূড়ান্ত চুক্তিতে জনসমর্থন থাকলে তা ‘পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য প্রস্তাব’ হিসাবে অনুমোদন হবে।

ইইউর সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে বিচ্ছেদ কার্যকরে দীর্ঘ ১৮ মাসের চেষ্টায় একটি চুক্তি সম্পাদন করেন প্রধানমন্ত্রী মে। কিন্তু তিনবার চেষ্টা করেও তিনি সেই চুক্তি সংসদে পাস করাতে পারেননি। গত ২৯ মার্চ বিচ্ছেদ কার্যকরের কথা ছিল। ব্রিটিশ রাজনীতিকদের অনৈক্যের কারণে তা হয়নি। অন্যদিকে, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত যাচাইয়ে পার্লামেন্টে বিভিন্ন বিকল্প প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটির আয়োজন করা হয়। কিন্তু দুই দফা ভোটাভুটির পরও বিকল্প কোনো প্রস্তাবে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত পায়নি। যুক্তরাজ্য আবেদন জানালে এবং ইইউ তাতে সম্মতি দিলে বিচ্ছেদের দিনক্ষণ আবারও পেছাবে। অন্যথায় চুক্তি ছাড়াই ১২ এপ্রিল বিচ্ছেদ ঘটবে।