মুর্শিদাবাদে ৪ মুসলিম প্রার্থীর জোর লড়াইয়ের ইঙ্গিত

লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ আসনে চার দলের চার প্রার্থী বদরুদ্দোজা খান, আবু হেনা, আবু তাহের খান ও হুমায়ুন কবীর। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
লোকসভা নির্বাচনে মুর্শিদাবাদ আসনে চার দলের চার প্রার্থী বদরুদ্দোজা খান, আবু হেনা, আবু তাহের খান ও হুমায়ুন কবীর। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম অধ্যুষিত জেলা মুর্শিদাবাদের একটি আসনে লড়ছেন চার বড় দলের চার মুসলিম প্রার্থী। অন্যান্য ছোটখাটো দলের আরও কজন প্রার্থী থাকলেও লড়াই হচ্ছে এই চার প্রার্থীর মধ্যেই।

মুর্শিদাবাদ জেলায় লোকসভার আসন তিনটি। এগুলো হলো মুর্শিদাবাদ, জঙ্গিপুর ও বহরমপুর। এর মধ্যে মুর্শিদাবাদ আসনে সিপিএমের বদরুদ্দোজা খান, তৃণমূলের আবু তাহের খান, কংগ্রেসের আবু হেনা এবং বিজেপির হুমায়ুন কবীর লড়ছেন।

চতুর্মুখী এই লড়াইয়ে কে জিতবেন, তা এখনো স্পষ্ট নয়। সিপিএম দাবি করেছে, তাদের প্রার্থী বদরুদ্দোজা খান এবারও জিতবেন এই চতুর্মুখী লড়াইয়ে। গত ২০১৪ সালের নির্বাচনে এই আসন থেকেই তিনি জিতেছিলেন। তিনি পেয়েছিলেন ৪ লাখ ২৬ হাজার ৯৪৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রার্থী কংগ্রেসের আবদুল মান্নান হোসেন পেয়েছিলেন ৪ লাখ ৮ হাজার ৪৯৪ ভোট। তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী আলী মোহাম্মদ পেয়েছিলেন ২ লাখ ৮৯ হাজার ২৭ ভোট। আর বিজেপির প্রার্থী সুজিত কুমার ঘোষ পেয়েছিলেন ১ লাখ ১ হাজার ৬৯ ভোট।
এই ভোটের হিসাব পর্যালোচনা করে সিপিএম দাবি করেছে, এবার চতুর্মুখী লড়াইয়ে জিতবে তারাই। যদিও ২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে সিপিএম পেয়েছিল দুটি আসন। এর একটি এই মুর্শিদাবাদ এবং অন্যটি উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জ আসন।

তবে এই যুক্তি মানছে না তৃণমূল। তারা বলেছে, এই রাজ্যে কংগ্রেস এবং বামদল শেষ হয়ে গেছে। তাদের আর ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি নেই। রাজ্যজুড়ে চলছে মমতার উন্নয়নের জোয়ার। সুতরাং এই আসনে জিততে চলেছে তৃণমূল প্রার্থী আবু তাহের খানই। আবু তাহের খান কংগ্রেসের এক ত্যাগী নেতা। চারবার তিনি কংগ্রেসের টিকিটে বিধায়ক হয়েছেন এই জেলা থেকে। গত বছর তিনি যোগ দেন তৃণমূল কংগ্রেসে। তৃণমূল মনে করে এবার মুর্শিদাবাদের মানুষ তাঁকেই জেতাবেন। কিন্তু কংগ্রেস বলেছে, বেইমানদের মানুষ ঘৃণা করে।

এবার কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন কংগ্রেসের আরেক প্রবীণ নেতা আবু হেনা। এই মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে তিনি কংগ্রেসের টিকিটে পাঁচবার বিধায়ক হয়েছেন। রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন। তাঁর বাবা আবদুস সাত্তারও ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস আমলের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থ শঙ্কর রায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য। কংগ্রেস মনে করে, এই ত্যাগী নেতা এবার মুর্শিদাবাদ আসনে জিতবে। কারণ, এখনো মুর্শিদাবাদ কংগ্রেসের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত।
আর এবার বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন হুমায়ুন কবীর। হুমায়ুন কবীরও আগে কংগ্রেস করতেন। বিধায়ক হয়েছেন কংগ্রেসের। কংগ্রেসের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় তিনি একসময় কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন। পেয়েও যান মন্ত্রিত্ব। কিন্তু টিকতে পারেননি। অগত্যা গত বছর জুন মাসে তিনি যোগ দেন বিজেপিতে। এবার বিজেপি তাঁকে মুর্শিদাবাদ আসনে প্রার্থী করেছে। বিজেপির লক্ষ্য এই আসনের হিন্দু ভোট এক করার সঙ্গে মুসলিম ভোটেও ভাগ বসানো। এই লক্ষ্য নিয়ে বিজেপি হুমায়ুন কবীরকে দাঁড় করিয়েছে এই আসনে।

এই মুর্শিদাবাদ ছিল কংগ্রেসের দুর্গ। সেই দুর্গকে চুরমার করে দিয়েছে তৃণমূল। তবে এখনো বহু ত্যাগী কংগ্রেস কর্মী রয়েছেন, যাঁরা আজও কংগ্রেসের পতাকা কাঁধে নিয়ে বেড়ান। এবার সত্যিই মুর্শিদাবাদ আসনে জোর লড়াই হবে। সেই লড়াইয়ের চূড়ান্ত দিন ২৩ এপ্রিল। লড়াইয়ের ফল ঘোষণা হবে ২৩ মে। তখনই দেখা যাবে—কে জেতেন কে হারেন।