আরও ডালপালা মেলল ব্রেক্সিট বিতর্ক

ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বিচ্ছেদ (ব্রেক্সিট) কার্যকরের উপায় নিয়ে কেবলই জল ঘোলা করছেন ব্রিটিশ রাজনীতিকেরা। সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ও বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিনের বৈঠকের সিদ্ধান্তে দলগুলোর গৃহবিবাদ আরও চড়াও হয়েছে।

করবিনের সঙ্গে আলোচনার প্রতিবাদে বুধবার ওয়েলস-বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নাইজেল অ্যাডামসের পর ব্রেক্সিট-বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্রিস হিটন-হ্যারিস পদত্যাগ করেন। পার্লামেন্টে সরকারদলীয় বেশ কয়েকজন আইনপ্রণেতা প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, যেই করবিনকে দেশ চালানোর অযোগ্য বলে ভর্ৎসনা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী, তাঁকে কি করে এখন ব্রেক্সিট বাস্তবায়নের যোগ্য মনে করলেন? দ্য সানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করবিনের চাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী ছাড় দিলে অন্তত ১৫ জন মন্ত্রী পদত্যাগ করবেন, যাঁরা ব্রেক্সিটপন্থী।

অন্যদিকে ব্রেক্সিট নিয়ে লেবার পার্টির গৃহবিবাদও জোরালো হতে শুরু করেছে। দলটির ব্রেক্সিট–বিরোধী অংশ করবিনকে চিঠি দিয়ে বলেছে, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যেকোনো চুক্তিতে পুনরায় গণভোটের দাবি যুক্ত করতে হবে।

বুধবার বিচ্ছেদের দিনক্ষণ পিছিয়ে দিতে একটি প্রস্তাব পাস করে দেশটির সংসদ। মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে পাস হওয়া ওই প্রস্তাব আইনে পরিণত হলে ইইউর সঙ্গে সমঝোতায় সরকারের ক্ষমতা মারাত্মকভাবে খর্ব হবে। সরকারের ওপরে পার্লামেন্টের খবরদারির এই পরিস্থিতিকে সাংবিধানিক নৈরাজ্য বলে অভিহিত করেছেন ভাষ্যকারেরা।

সাধারণত সরকার পার্লামেন্টে আইন প্রণয়ন করে। কিন্তু বিরোধী দল লেবার পার্টির আইনপ্রণেতা ইভেট কুপার ব্রেক্সিটের দিনক্ষণ পিছিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব করে একটি বিল উত্থাপন করেন। অস্বাভাবিক দ্রুততায় মাত্র এক দিনেই সেটি নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের অনুমোদন লাভ করে। এর পক্ষে ভোট পড়ে ৩১৩টি। আর বিপক্ষে ভোট পড়ে ৩১২টি। গত বৃহস্পতিবার উচ্চকক্ষ হাউস অব লর্ডসের অনুমোদন পেলে এটি আইনে পরিণত হবে। পেছন সারির আইনপ্রণেতার উত্থাপিত বিল এত অস্বাভাবিক দ্রুততায় পাস হওয়ার ঘটনা নজিরবিহীন।

এখন বিলটি হাউস অব লর্ডসের অনুমোদন পেলে সরকারকে অবশ্যই বিচ্ছেদের দিনক্ষণ ১২ এপ্রিল থেকে পিছিয়ে দেওয়ার আবেদন করতে হবে। পাশাপাশি বিচ্ছেদের দিনক্ষণ কত দিনের জন্য পেছানো হবে, সে ব্যাপারে সংসদের মতামত নিতে হবে।

ব্রেক্সিট-বিষয়ক মন্ত্রী স্টিফেন বারক্লে বলেন, এই বিল ইইউর সঙ্গে সমঝোতায় সরকারের ক্ষমতাকে মারাত্মকভাবে খর্ব করবে। সংসদের উচ্চকক্ষ বিলটির সাংবিধানিক বৈধতা ভালোভাবে নিরীক্ষা করবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

ব্রেক্সিট সংকটের সমাধান নিয়ে আইনপ্রণেতাদের মতামত যাচাইয়ে পার্লামেন্টে আরও ভোটাভুটির প্রস্তাব নিয়েও বুধবার ভোটাভুটি হয়। এতে পক্ষে ভোট দিয়েছেন ৩১০ জন। বিপক্ষেও ছিলেন ৩১০ জন। পরে স্পিকার নিজের ভোটটি বিপক্ষে দিলে প্রস্তাবটি নাকচ হয়। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রায় দেড় শ বছর পর এমন ঘটনা ঘটল।

প্রসঙ্গত, ইতিপূর্বে দুই দফা ভোটাভুটি করেও পার্লামেন্টে ব্রেক্সিট বিষয়ে কোনো প্রস্তাব সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।

এদিকে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে এবং বিরোধীদলীয় নেতা জেরেমি করবিন গত বুধবার বৈঠক করেছেন। ব্রেক্সিট অচলাবস্থার সমাধানে এদিন তাঁরা একটি কর্মপরিকল্পনায় সম্মত হন। যার ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার তাঁদের দিনব্যাপী বৈঠকের সময় নির্ধারিত ছিল। বুধবারের বৈঠকের পর আলোচনা গঠনমূলক হয়েছে বলে মন্তব্য করেন করবিন।

১০ এপ্রিল ইইউ সম্মেলনের আগেই প্রধানমন্ত্রী মে ব্রেক্সিট চুক্তি সংসদে পাস করিয়ে নিতে চান। করবিনের সঙ্গে সমঝোতা না হলে করণীয় নিয়ে পার্লামেন্টের মতামত যাচাইয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন মে। প্রধানমন্ত্রী আগামী ২২ মে পর্যন্ত বিচ্ছেদের দিনক্ষণ পেছাতে চান, যাতে আসন্ন ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনে যুক্তরাজ্যকে অংশ নিতে না হয়।

এদিকে ব্রেক্সিট নিয়ে উত্তাপ ছড়ানোর বিষয়ে আইনপ্রণেতা ও প্রচারকর্মীদের (ক্যাম্পেইনার গ্রুপ) সতর্ক করেছে যুক্তরাজ্যের পুলিশ। জাতীয় পুলিশ কাউন্সিলের প্রধান মার্টিন হিউইট বলেন, ব্রেক্সিট নিয়ে থমথমে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কথা বলার ক্ষেত্রে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, যাতে উত্তেজনা না ছড়ায়। চুক্তিছাড়া বিচ্ছেদ ঘটলে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রস্তুত বলে জানান তিনি।